আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন শহরে গণতন্ত্র রার মিছিলে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। আংকারা, ইস্তাম্বুলসহ তুরস্কের বড় বড় শহরে কর্তৃপরে উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র রা’র মিছিল আয়োজন করা হয়। মিছিলে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের পে স্লোগান দেয়া হয়।
কর্তৃপক্ষ্যের ডাকে অভ্যুত্থান পরিকল্পনা প্রতিহত করতেও হাজার হাজার মানুষ তুরস্কের রাজপথে নেমে এসেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ইস্তাম্বুলের সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় তাকে চাপমুক্ত দেখা যাচ্ছিল। হাস্যময় এরদোগান সমর্থকদের উদ্দেশে বৃদ্ধাঙ্গুলি উঁচিয়ে নিজের সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থান চেষ্টাটি সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশের কাজ। সেনাবাহিনী আমাদের, ওই সমান্তরাল কাঠামোর না। আমি চিফ কমান্ডার।’
শুক্রবার রাতে অভ্যুত্থানকারীরা কারফিউ জারি করলেও ক্ষমতাসীন এরদোগানের পার্টির সমর্থকেরা তা অমান্য করে রাস্তায় নেমে আসেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ থাকায় এরদোগান শনিবার জনগণ ও নিজ দলের সমর্থকদের রাস্তায় থাকার আহ্বান জানান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের চেষ্টা যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, আমাদের সারা রাত রাস্তায় থাকতে হবে। কারণ যেকোনো মুহূর্তে আবার নতুন করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।’ সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে তুরস্কের বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান করেন তার সমর্থকেরা।
সংবাদদাতারা জানান, ইস্তাম্বুলের মধ্যাঞ্চলে তাকসিম স্কয়ার, প্রেসিডেন্টের নিজ জেলা কিসিকলি, আংকারার কিজিলেই স্কয়ার ও উপকূলীয় জমির নগরীতে শনিবার এরদোগানের হাজার হাজার সমর্থক ফের অবস্থান নেন।
এ দিকে অভ্যুত্থানচেষ্টার পর তুরস্কের সর্বোচ্চ বিচারিক কর্তৃপ হাই কাউন্সিল অব জাজেজ অ্যান্ড প্রসিকিউটর (এইচএসওয়াইকে) দুই হাজার ৭৪৫ জন বিচারককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু জানিয়েছে, অব্যাহতি দেয়া বিচারকদের মধ্যে এইচএসওয়াইকের পাঁচ সদস্যও রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা গুলেনকে এই অভ্যুত্থানচেষ্টার জন্য দায়ী করেছেন এরদোগান। এর আগেও গুলেন তাকে মতা থেকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন এরদোগান।
অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় ৬ হাজার লোককে আটক করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, ওই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের - রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে থেকে মুক্ত করতে এই গ্রেফতার অভিযান।
তার কথা, ষড়যন্ত্রকারীরা কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারবে না। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তার মধ্যে ইনসারলিক বিমানঘাঁটির কমান্ডার রয়েছেন। এই ঘাঁটিটি যুক্তরাষ্ট্র ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ব্যবহার করে থাকে। সেখান থেকে কোয়ালিশনের আইএসবিরোধী সামরিক কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে - বলছে পেন্টাগন।
এরদোয়ানের শীর্ষ সামরিক সহকারীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। জড়িত সেনাদের ধরতে আজও বিভিন্ন সেনা ঘাঁটিতে অভিযান চালানো হয়েছে। আরো অনেক বিচারক এবং আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আটকাদেশ জারি করা হয়েছে। একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা কলছেন, পুরো দেশে সরকার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পেরেছে, তবে অভ্যূত্থানের জাড়ি জড়িত কিছু সেনা কর্মকর্তা এখনো আত্মসমর্পণ করেনি।
১৮ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস