আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের নির্বাচিত সরকার রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানকে উৎখাত করতে সেনাবাহিনীর একাংশ গত শুক্রবার রাতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। তবে তাদের এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়। আর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের খুঁজে বাহির করে আটক করা হয়েছে। এমনকি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলানো হচ্ছে। তাদেরকে ‘ভাইরাস’ উল্লেখ করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, এদের ক্ষমা নেই।
অভ্যুত্থানের সমর্থক বলে কাউকে সন্দেহ করা হলেই তাকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত রাত থেকে আট হাজারেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাদের অস্ত্র জমা দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে সেনাবাহিনী, স্থানীয় সরকার, বিচার বিভাগ, পুলিশের হাজার হাজার সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সেনা ঘাঁটিতে ঢুকে ঢুকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
আজ সোমবারও ইস্তাম্বুলের বিমান বাহিনীর একাডেমিতে ঢুকে অনেক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত একশ'রও বেশি জেনারেল এবং অ্যাডমিরালকে ধরা হয়েছে। সেনাবাহিনীর জেনারেল ও বিচারপতিসহ ইতিমধ্যে প্রায় ছয় হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত এসব লোককে পেছনে হাত বেঁধে একটি রুমে আটক করে রাখা হয়েছে।
সিএনএন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ছবিতে দেখা যায়, গ্রেপ্তারকৃদের শুধু হাফ প্যান্ট পরিয়ে রাখা হয়েছে। টিন দিয়ে বেষ্টিত একটি রুমে বালুর উপর বসিয়ে রাখা হয়েছে তাদেরকে।
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের অন্যতম নাটের গুরু সন্দেহে বিমান বাহিনীর সাবেক কমান্ডার একিন ওযতুর্ককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তৈরি তালিকা ধরে ধরে এসব গ্রেপ্তার চলছে। একই সাথে সমর্থকদের চাঙ্গা রাখছে সরকার। রাস্তা না ছাড়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
তুরস্কের ক্ষমতাসীন এক পার্টির অন্যতম নেতা এবং মন্ত্রী ফারুক সেলিক এক জনসভায় বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দেশ এখন ঐক্যবদ্ধ।
তুরস্কের এই মন্ত্রী বলেছেন, “যারা এই সঙ্কট তৈরি করেছে, অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছে, তাদের বলছি কোনোভাবেই তোমরা সফল হবে না। মানুষের ঐক্য তোমরা নষ্ট করতে পারবে না।”
সরকার সমর্থকরা দাবি করছে, অভ্যুত্থানকারীদের চরম শাস্তি দিতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গতকালও বলেছেন, এই দাবি তিনি মাথায় রাখছেন। এ ধরনের ইঙ্গিতের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে ইউরোপে।
তুরস্কের পরিস্থিতি নিয়ে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকের আগে জোটের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি তুরস্ককে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারাও ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদের আওতায় পড়ে।
তিনি বলেছেন, “মৃত্যুদণ্ড রয়েছে এমন কোনো দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢুকতে পারবে না। এটা খুব পরিষ্কার। তুরস্ক কাউন্সিল অব ইউরোপের সদস্য। ফলে ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদ তুরস্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৩ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিচারবিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তার বিরোধীদের সরিয়ে ফেলার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, এখন তা শেষ করার বিরল এক সুযোগ পেয়ে গেছেন।
১৮ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই