শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬, ০৮:৩৩:১৩

কাশ্মিরে পাকিস্তান ও চীনা সেনাদের যৌথ টহল!

কাশ্মিরে পাকিস্তান ও চীনা সেনাদের যৌথ টহল!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মীরের দখলীকৃত অংশ কব্জায় রাখা নিয়ে চিন্তিত পাকিস্তান। জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে বদ্ধপরিকর ভারত পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে আচমকা অভিযান চালাতে পারে বলে আশঙ্কা ইসলামাবাদের।

তেমন পরিস্থিতি হলে ভারতের মোকাবিলা করতে কতটা সক্ষম হবে পাকিস্তান? সংশয় রয়েছে পাকিস্তান সেনার মধ্যেই। তাই পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে এ বার চীনা সেনাকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ টহলদারি শুরু করলো পাকিস্তানের সেনা।

পাকিস্তান এবং চীন অবশ্য দাবি করছে, এই যৌথ টহলদারির কারণটা অন্য। চীনের পশ্চিমাংশে জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে অনেকে ইরাক এবং সিরিয়ার দিকে চলে যাচ্ছে আইএস-এ যোগ দিতে। তাদের রুখতেই নাকি এই যৌথ টহলদারি।

চিনের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষরাই মূলত ইসলামের অনুগামী সেখানে। এই উইঘুরদের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট সরকারের বিরোধও দীর্ঘ দিনের। জিনজিয়াং-এর স্বাধীনতার দাবিতে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া উইঘুর মুসলিমরা পশ্চিম চীনের বিভিন্ন অংশে নাশকতাও চালায়।

কোথাও হামলা চালিয়ে তারা পশ্চিম সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী কিরঘিজস্তান বা তাজিকিস্তানে আশ্রয় নেয়, এমন অভিযোগও দীর্ঘ দিনের। সেই উইঘুর মুসলিমদের মধ্যেই নাকি এ বার আইএস-এ যোগ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সম্প্রতি অন্তত ১১৪ জন উইঘুর যুবক জিনজিয়াং থেকে ইরাক বা সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এ সামিল হয়েছে বলে একটি মার্কিন রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে।

চীনের সরকার উইঘুর মুসলিমদের ধর্মাচরণে বাধা সৃষ্টি করে বলেই উইঘুরদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদী প্রবণতা বাড়ছে বলেও নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশনের ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমও জানিয়েছে, অন্তত ১০০ জন জিনজিয়াং থেকে আইএস রাজত্বে চলে গিয়েছে। তবে উইঘুরদের ধর্মাচরণে বাধা দেওয়া হয় বলে চীন স্বীকার করেনি।

চীন এবং পাকিস্তান বলছে, জিনজিয়াং থেকে গিলগিট-বাল্টিস্তান (পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অংশ) হয়ে উইঘুর যুবকরা ইরাক-সিরিয়ার দিকে যাচ্ছে। তাই গিলগিট-বাল্টিস্তানে চীন-পাকিস্তান যৌথ টহলদারি চালাবে। কিন্তু এই দাবি ভারত নস্যাৎ করে দিচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দারা বলছেন, জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে ইরাক বা সিরিয়ায় যারা যাচ্ছে, তাদের পক্ষে অনেক সহজ পথ হল কিরঘিজস্তান বা তাজিকিস্তান হয়ে যাওয়া। জিনজিয়াং-এ নাশকতা চালিয়ে এমনিতেই ওই সব দেশে ঢুকে পড়ে উইঘুর বিছিন্নবাদীরা।

ফলে সীমান্ত পেরিয়ে ওই সব দেশ হয়ে মধ্য এশিয়ার দিকে যাত্রা করা তাদের পক্ষে অনেক সুবিধাজনক। সে পথ তাদের অনেক পরিচিত। জিনজিয়াং থেকে গিলগিট-বাল্টিস্তান হয়ে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান হয়ে ইরাক-সিরিয়ায় যাওয়া অনেক শক্ত।

কারণ প্রথমত, উইঘুর বিছিন্নবাদীরা চীনা সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাই পাকিস্তান পেরিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে খুব শক্ত। পাকিস্তান সরকার কোনও ভাবেই উইঘুরদের প্রশ্রয় দেবে না।

দ্বিতীয়ত, আইএস-এর বিরুদ্ধে আফগানিস্তান এবং ইরানেও এখন সক্রিয়তা তুঙ্গে। তাই ওই দুই দেশের মধ্যে দিয়ে ইরাক-সিরিয়ার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করাও আত্মহত্যা করার সামিল। তার চেয়ে কিরঘিজস্তান বা তাজিকিস্তান হয়ে কাস্পিয়ান সাগরের দিক দিয়ে ইরাক-সিরিয়ায় যাওয়া অনেক নিরাপদ।

নয়াদিল্লি বলছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে যৌথ টহলদারি শুরু করার অজুহাত খুঁজছিল চীন-পাকিস্তান। ভারত যে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি শিবিরগুলির বিষয়ে অন্য রকম কৌশল নিতে পারে, সে আশঙ্কা পাকিস্তান অনেক দিন ধরেই করছে। পাকিস্তানের দখলে থাকা ওই অঞ্চলে ভারত কোনও সাফল্য পেলে, পাকিস্তান সেনার প্রবল সম্মানহানি হবে। তাই চীনকে জড়িয়ে নেওয়া।

ভারতীয় সেনাকে বার্তা দেওয়া, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে কোনও পদক্ষেপ করলে সরাসরি চীনের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়াতে হতে পারে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের নিরাপত্তার অজুহাতে আগেই কয়েক হাজার সেনা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাঠিয়ে দিয়েছিল চীন। তখনই ভারত এর তীব্র বিরোধিতা করেছিল।

এ বার পাক সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে চীনা সেনার যৌথ টহলদারিও শুরু হল। চীনের এই পদক্ষেপকে অবৈধ বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। এর মোকাবিলায় পাল্টা রণকৌশল সাজানোও শুরু হয়ে গিয়েছে। খবর দিল্লী সাউথ ব্লক সূত্রের।

২৩ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে