শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬, ০৬:৪৪:৪১

‘আমি শহীদ হতে যাচ্ছি, এই বলে স্ত্রীকে ফোন’

‘আমি শহীদ হতে যাচ্ছি, এই বলে স্ত্রীকে ফোন’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কে এরদোগান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীর ক্ষুদ্র একটি অংশ যে অভ্যুত্থান চেষ্টা করেছিল তা জীবনের মায়া ত্যাগ করে রুখে দিয়েছে জনতা।

গত ১৫ জুলাই রাতের ওই ঘটনায় এরদোগানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে আসে।  এতে অংশ নেয় দলমত নির্বিশেষে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ বনিতাসহ সর্বস্তরের জনতা।  এমনকি তাতে যোগ দেয় বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও।

সুলেমান টোক, তাদের মতোই একজন, যিনি তার জীবনের মায়া ত্যাগ করে এরদোগানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

ওইদিন তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সশস্ত্র অভ্যুত্থান চেষ্টাকারী সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মেরে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন।  পরে সেনাদের গুলিতে মারাত্মক আহত হন তিনি।

টোক আঙ্কারার একজন নির্মাণকর্মী।  আঙ্কারায় তুর্কি পুলিশ সদর দপ্তরে বোমা হামলার সময় অত্যন্ত কাছ থেকে অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেন তিনি।

আনাদুলো সংবাদ সংস্থাকে টোক বলেন, আমরা দেখলাম সশস্ত্র এক দল সেনা পুলিশ সদর দপ্তরে প্রবেশ করে বোমাবর্ষণ করছে।  আমরা পাথর ছুঁড়ে তাদের থামাতে চেষ্টা করলাম।  এরপর তারাও আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আহত লোকদের বহন করছিল অন্যরা এবং তারপর অভ্যুত্থান চেষ্টাকারী সেনাদের রুখে দিতে ফিরে আসছিল।

ওই দিনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ টোক বর্তমানে তুরস্কের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

টোক বলেন, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার ওই রাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী আমি।  দেখলাম সাঁজোয়া যান থেকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সরাসরি গুলি করা হচ্ছে।  কিন্তু সেনারা নয়, সামরিক বাহিনীর অফিসাররা এ কাজটি করছিল।

তিনি বলেন, আমাদের নিক্ষেপ করা পাথর সেনাদের মাথায় আঘাত করলে তারা আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়ছিলেন।  কিন্তু সামরিক বাহিনীর অফিসাররা জঘণ্যভাবে সাধারণ মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ করছিল।

ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার এ ঘটনার সময় তার স্ত্রী আইনুর দেশটির উত্তরাঞ্চলের সামসুন প্রদেশে অবস্থান করছিলেন।  ওই সময় টোক তার স্ত্রীকেও রাস্তায় নেমে আসতে বলেন।

টোক বলেন, রাস্তায় নেমে আসার জন্য তুর্কি নাগরিকদের প্রতি এরদোগানের ওই আহ্বান পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে আমার স্ত্রীকে বললাম, ‘আমি শহীদ হতে যাচ্ছি।  তুমিও রাস্তায় নেমে আসো এবং আমার পথ অনুসরণ করো।

আইনুর একজন গৃহিনী।  তিনি জানান, তিনি তার স্বামীর ফোন কল পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসেন।

আইনুর বলেন, আমিও স্বামীর মতো বাইরে গিয়ে শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।  সেদিন আমার মনে গুলিবিদ্ধ হবার কোনো ভয় ছিল না।  কেবল আমার সন্তানদের জন্য একটি সুশৃঙ্খল দেশের প্রত্যয়ে রাস্তায় বের হয়ে আসি।

ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় অন্তত ২৬৫ জন নিহত হন।  তাদের মধ্যে ১৬১ জন গণতন্ত্রপন্থী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক।  বাকি নিহতরা অভ্যুত্থানকারী।  আহত হয়েছেন ১ হাজার ৪৪০ জন।
২৩ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে