রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৬, ০৯:৫৯:৪৬

ভারতে চীনা বিমানের হানা

ভারতে চীনা বিমানের হানা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাম্প্রতিক চীনা বিমান  কয়েকবার ভারতীয় ভূখণ্ডে হানা দিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।  চীনা বাহিনীর উত্তরাখণ্ডের বিতর্কিত এলাকায় অনুপ্রবেশের পর এ খবর ভারতে বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়, সীমান্তে চীনের অবৈধ কার্যকলাপের আরো তথ্য সামনে এলো। জুলাই মাসের শুরুর দিকে সীমান্ত পেরিয়ে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় ঢুকে পড়েছিল চীনা সেনা। তা নিয়ে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এরই মধ্যে।

কিন্তু সেই ঘটনার তদন্তে নেমে বোঝা যাচ্ছে, চামোলির বারাহোতি তৃণভূমিতে লাল ফৌজের ওই অনুপ্রবেশ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বেশ কিছু দিন আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে, ছক কষেই বারাহোতিতে সানা পাঠিয়েছিল বেইজিং।

বারাহোতিতে চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মি ঢুকে পড়ার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ভারতীয় বাহিনী। চীনা সেনাকে চ্যালেঞ্জ করা হয় প্রথমে লাল ফৌজ এলাকা ছেড়ে নড়তে রাজি হয়নি। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা ভারতীয় বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকায়, চীনা ফৌজ এলাকা ছাড়ে। ফিরে আসে ভারতীয় বাহিনীও।

যে এলাকায় চীন সেনা ঢুকিয়েছিল, সেই এলাকা নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। ভারত বারাহোতিকে নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে। কিন্তু চীনের দাবি, ওই এলাকার নাম বারাহোতি নয়। ওই এলাকা আসলে তাদের এবং এলাকার নাম উ-জে।

বিতর্ক থাকায়, বারাহোতির বিশাল তৃণভূমি অঞ্চলকে ‘ডিমিলিটারাইজড জোন’ বা ‘বাহিনী-বর্জিত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভারত ওই অঞ্চলে নজরদারি চালায়। কিন্তু ভারতীয় বাহিনী সেখানে অস্ত্র নিয়ে যায় না। বাহিনীর জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরেও যায় না। চীনা সেনা ঢুকে পড়ার খবর পেয়ে অবশ্য পুরোদস্তুর রণসাজে সজ্জিত হয়েই ভারতীয় বাহিনী পৌঁছেছিল সেখানে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি চরম মোড় নেয়নি। তবে ভারত বিষয়টির তদন্ত করতে শুরু করেছে।

কী জানা গেছে তদন্তে?

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে, উত্তরাখণ্ডে ঢোকার আগে বেশ কয়েকবার ওই এলাকায় গোপনে নজরদারি চালিয়ে গিয়েছে চীনা যুদ্ধবিমান। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে এলাকার ম্যাপিং করেছে চীনা সেনা।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, গত তিন মাসে অন্তত তিন বার হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের আকাশে ঢুকেছিল চীনের তুপোলভ-তু ১৫৩এম নজরদারি বিমান। সোভিয়েত আমলে তৈরি একটি বিমানের প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে চীন এই নজরদারি বিমান বানিয়েছে। বিমানটি ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে।

অত উচ্চতার কারণে রাডারে তার উপস্থিতি ধরা পড়ে না। ফলে ভারতের আকাশসীমায় তিন বার ঢুকে নজরদারি চালিয়ে গেলেও, ভারতীয় রাডারে তা ধরা পড়েনি। তুপোলভ-তু ১৫৩এম বিমানে সিন্থেটিক অ্যাপারচার রেডার থাকায় অনেক উঁচু থেকেই ভূপৃষ্ঠের খুব স্পষ্ট ছবি সে তুলতে পারে। খারাপ আবহাওয়ায় বা রাতের অন্ধকারেও হাই রেজোলিউশন ছবি তুলতে ওই বিমানের কোনো অসুবিধা হয় না।

তিন মাস ধরে বেশ কয়েক বার নজরদারি বিমান পাঠিয়ে ভারতীয় সেনার টহলদারি, সেনা চৌকির অবস্থান এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতের সামরিক পরিকাঠামোর বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহ করেছিল চীন। তার পর হঠাৎ বারাহোতি তৃণভূমিতে ২০-২৫ জন জওয়ানকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল।

চীন যে আকাশপথে ভারতের এলাকায় নজরদারি চালিয়ে গিয়েছে, তা ভারতকে জানানো হয়েছে অন্য কোনো একটি দেশের পক্ষ থেকে। যে সব দেশের সঙ্গে ভারত গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করে, সেই দেশগুলির মধ্যেই কোনো একটির কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, চীনা বাহিনী বারাহোতিতে যখন ঢোকে, তখন সেখানে স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি ছিল। চীনা সেনা তাদের ওই এলাকা থেকে সরে যেতে বলে। তারা জানায়, ওই এলাকা চীনের এবং ভারতীয়দের সেখান থেকে সরে যেতে হবে।

স্থানীয় লোকজন তখন সেই এলাকা থেকে বেরিয়ে গেলেও দ্রুত খবর যায় ভারতীয় বাহিনীর দফতরে। অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে বারাহোতি তৃণভূমিতে সেনা পাঠানো হয়। ভারতীয় সেনা সেখানে পৌঁছনোর আগে চীনা বাহিনীকে সঙ্গ দিতে সে দেশের একটি হেলিকপ্টারও বারাহোতিতে ঢুকেছিল বলে জানা গেছে।

কিন্তু মিনিট পাঁচেক বারাহোতি তৃণভূমির উপর ঘোরাফেরা করেই সেটি নিজেদের সীমান্তে ফিরে যায়। ভারতীয় বাহিনী যখন বারাহোতি পৌঁছয়, তার অনেক আগেই চীনের কপ্টার ফিরে গিয়েছিল। যে কপ্টারটি চীন পাঠিয়েছিল, জানা গেছে সেটি ঝিবা সিরিজের একটি অ্যাটাক হেলিকপ্টার।
সূত্র : আনন্দবাজার
৩১জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে