বিনোদন ডেস্ক: কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটা নতুন মুখ দেখা গিয়েছে বলিউডে। দর্শক খান-জমানা থেকে চোখ সরিয়ে নজর দিয়েছেন নতুনদের আখড়ায়। তথাকথিত নব্বই দশকের জনপ্রিয় হিরোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির সিঁড়ি চড়ছেন নতুনরা।
বরুণ ধবন
বাবা ডেভিড ধবন পরিচালক। তবে তাঁর হাত ধরে ছেলে বরুণ ধবন বলিউডে ডেবিউ করেননি। কর্ণ জোহরের ‘স্টুডেন্ট অফ দি ইয়ার’ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা হিসেবে হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। তার আগে কর্ণের সঙ্গেই ‘মাই নেম ইজ খান’এ সহ-পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন।
হিট লিস্ট
২০১২ সালে ডেবিউ করার এক বছর পর তাঁকে দেখা যায় ‘ম্যায় তেরা হিরো’ ছবিতে। ব্যস! তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত থামতে হয়নি বরুণকে। সদ্য মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত ‘ঢিশুম’। আর এখন ব্যস্ত রয়েছেন ‘বদ্রীনাথ কি দুলহনিয়া’ ছবির শ্যুটিং নিয়ে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ছবি পছন্দ করার ব্যাপারে তিনি সব সময় নিজের মতকেই প্রাধান্য দেন। এক্ষেত্রে কোনও সময়ই বাবা কিংবা দাদা (রোহিত ধবন), তাঁদের মত চাপিয়ে দেন না বরুণের উপর। প্রথম ছবির পরই অভিনয় এবং নাচের জন্য প্রশংসা পেয়েছিলেন নায়ক। নতুন অভিনেতা হলেও ছবি নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি যে অনেক বেশি সচেতন, সেটা বোঝা যায় তাঁর অভিনীত ছবিগুলো দেখলেই। সব ধরনের জঁরে কাজ করছেন তিনি। কিছুদিন আগে বরুণ জানিয়েছিলেন, নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করতেও অসুবিধে নেই তাঁর। একজন হিরো হিসেবে অভিনয়, নাচ দু’ক্ষেত্রেই দক্ষ বরুণ। আবার তাঁকে ‘গুড লুকিং’ হিরো বলতেও অসুবিধে নেই। ‘বদলাপুর’এ সিরিয়াস চরিত্রে যেমন তিনি সাবলীলভাবে অভিনয় করেছেন, তেমনই ‘ম্যায় তেরা হিরো’তে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের কমিকসেন্স। নাচে যে তিনি বেশ পটু, সেটার পরিচয় আমরা তাঁর প্রথম ছবিতেই পেয়েছিলাম। সেটাই আরও স্পষ্ট হয়েছিল ‘এবিসিডি টু’তে। সুতরাং নতুনদের মধ্যে দৌড়ে যে এগিয়ে রয়েছেন, বলাই যায়।
ফ্লপ লিস্ট
এখনও পর্যন্ত বরুণের অভিনীত ‘দিলওয়ালে’ ছবিটাই বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। ‘ঢিশুম’এর শুরুটা ভাল হলেও শেষমেশ লাভের গুড় কিছুটা কমতির দিকেই।
সিদ্ধার্থ মলহোত্র
শুরুটা বরুণ ধবনের মতোই করেছিলেন সিদ্ধার্থ মলহোত্র। বরুণ এবং তিনি দু’জনেই ছিলেন ‘মাই নেম ইজ খান’এর সহযোগী পরিচালক। আর বলিউডে অভিনেতা হিসেবে ডেবিউও করেছিলেন একসঙ্গে, ‘স্টুডেন্ট অফ দি ইয়ার’ ছবির মাধ্যমে। তবে অভিনয় জগতে আসার আগে মডেলিং ছিল তাঁর পেশা।
হিট লিস্ট
ছবির সংখ্যার দিক থেকে কিন্তু বরুণের চেয়ে পিছিয়ে নেই সিদ্ধার্থ। হিটের নিরিখে কিছুটা তফাত থাকলেও। বরুণ পরিবার থেকেই পেয়েছিলেন অভিনয় করার ইচ্ছে। অন্যদিকে সিদ্ধার্থ অভিনেতা হবেন কোনওদিন ভাবেননি। কিন্তু অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরেই তাঁর উৎসাহ জাগে বলিউডের ব্যাপারে! ‘স্টুডেন্ট অফ দি ইয়ার’ ছবিতে বরুণ যতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অভিনয় করছিলেন, সিদ্ধার্থের মধ্যে তার তুলনায় কিছুটা জড়তা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তাঁর পরবর্তী ছবি ছিল সোলো। তারপর থেকে পর পর করে গিয়েছেন ‘এক ভিলেন’, ‘ব্রাদার্স’, ‘কপূর অ্যান্ড সন্স’এর মতো ছবি। ‘এক ভিলেন’ যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছিল। অভিনয়টাও তিনি রপ্ত করে ফেলেছিলেন ততদিনে। সম্প্রতি ‘কপূর অ্যান্ড সন্স’ও মোটামুটি ব্যবসা করেছে। আর চেহারার দিক থেকে তো অনেকেরই মন কাড়েন সিদ্ধার্থ! এখন তিনি ‘বার বার দেখো’ ছবির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। হাতে রয়েছে আরও দু’টি ছবি।
ফ্লপ লিস্ট
প্রথম ছবি থেকেই নাচে বিশেষ সুবিধে করতে পারেননি নায়ক। বরুণের সঙ্গে পা মেলাতে গিয়ে পিছিয়ে পড়েছিলেন সিদ্ধার্থ। ‘ব্রাদার্স’ ছবিতে বক্সারের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে অ্যাকশন হিরো হিসেবেও বিশেষ প্রশংসা পাননি সিদ্ধার্থ।
অর্জুন কপূর
এঁর পরিবারের সঙ্গেও যোগ রয়েছে বলিউডের। প্রযোজক বনি কপূরের ছেলে যে তিনি। সুতরাং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা বলিউডে পা রাখার আগে থেকেই ছিল অর্জুনের। আদিত্য চোপড়ার ‘ইশক্জাদে’ দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। তার আগে অবশ্য কয়েকটা ছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করে ফেলেছেন।
হিট লিস্ট
ছবির সংখ্যার দিক থেকে বিচার করতে গেলে অর্জুনও দৌড়ে পিছিয়ে নেই। তবে ছবিগুলো বক্স অফিসে বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি। আলিয়া ভট্টের মতো নতুন অভিনেত্রীর সঙ্গে যেমন কাজ করেছেন, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, করিনা কপূর খানের মতো একটু সিনিয়র অভিনেত্রীদের সঙ্গেও তাল মিলিয়েছেন।
ফ্লপ লিস্ট
তাঁর ‘গুন্ডে’, ‘টু স্টেট্স’ এবং ‘কি অ্যান্ড কা’ ব্যবসা করলেও বাকি ছবিগুলোর অবস্থা ছিল শোচনীয়। হয়তো অতিরিক্ত গম্ভীর লুক’ই এ ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রোমান্টিক দৃশ্যের চেয়ে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ দৃশ্যে অনেক বেশি সাবলীল অর্জুন। নাচেও পারদর্শী নন তেমন।
টাইগার শ্রফ
সদ্যই পা রেখেছেন বলিউডে। তবে ইতিমধ্যেই মন কেড়েছেন পরিচালকদের।
হিট লিস্ট
একের পর এক ছবির প্রস্তাব পাচ্ছেন টাইগার। ২০১৪ সালে ‘হিরোপন্তি’ ছবির মাধ্যমে ডেবিউ করেছিলেন তিনি। তাঁর ‘বাগী’ও হিট। একটা সুপারহিরো ছবিও করে ফেলেছেন— ‘আ ফ্লাইং জাট’। হাতে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটা ছবির প্রস্তাব। মার্শাল আর্টে দক্ষ টাইগার, খুব স্বাভাবিকভাবেই অ্যাকশনধর্মী ছবিতে অনেক বেশি সাবলীল। অন্যদিকে নাচেও সমান দক্ষ তিনি। এই গুণগুলোই তাঁর অভিনয়ের খামতিকে ঢেকে দেয়। নাচের ব্যাপারে তিনি নাকি হৃতিক রোশনকে অনুসরণ করেন।
ফ্লপ লিস্ট
টাইগারের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হল, চরিত্রদের সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁর চেহারাটা খাপ খায় না। সোশ্যাল সাইটে ইয়ার্কিও কম হয় না তাই নিয়ে। অভিনয়েও ঈষৎ খামতি রয়েছে তাঁর।
সুশান্ত সিংহ রাজপুত
ছোট পরদায় অভিনয়ের মাধ্যমেই কেরিয়ারের শুরুটা করেছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। ‘পবিত্র রিশতা’ সিরিয়ালে অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। এরপর দু’টো ডান্স রিয়্যালিটি শো’তে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তারপর ২০১৩ সালে অভিষেক কপূরের ‘কাই পো চে’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে হাতেখড়ি হয় সুশান্তের। ছবিতে মুখ্য-ভূমিকাতেই ছিলেন তিনি। কাজের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন সুশান্ত।
হিট লিস্ট
বছরে মোটামুটি একটা করে ছবিতেই কাজ করেছেন। ‘পিকে’তে ক্যামিও ছিল তাঁর। তাতেও প্রশংসিত। সামনে আসছে বিরাট ছবি— ধোনির বায়োপিক! অন্যদিকে আবার ‘গুড লুকিং’ হিরো হিসেবে নামডাক আছে সুশান্তের।
ফ্লপ লিস্ট
‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’ এবং ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’ সফল হয়নি বক্স অফিসে। ব্যোমকেশে তাঁর অভিনয় নজর কাড়লেও রোমান্টিক হিরোর চরিত্রেই যেন তিনি বেশি সাবলীল। এখনও পর্যন্ত অ্যাকশন কিংবা কমেডির মতো অন্য কোনও জঁরে কাজ করতে দেখা গেল না সুশান্তকে।
আয়ুষ্মান খুরানা
রেডিও জকি হিসেবেই কেরিয়ার শুরু করেছিলেন আয়ুষ্মান খুরানা। সেখানে সফল হওয়ার পরে সুযোগ পেয়ে যান টেলিভিশনে। পর পর অনেকগুলো শো সঞ্চালনা করেছিলেন তিনি। তারপর ২০১২ সালে বলিউডে পা রাখার সুযোগ পেয়ে যান ‘ভিকি ডোনার’এর মাধ্যমে। অভিনয়ের পাশাপাশি ছবির একটা গানও গেয়েছিলেন আয়ুষ্মান। তারপর থেকে অভিনয়, গান এবং সঞ্চালনার কাজ একই সঙ্গে সামলাচ্ছেন তিনি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী যাকে বলা হয় আর কী!
হিট লিস্ট
প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করতে পেরেছিলেন আয়ুষ্মান। ডেবিউ অভিনেতা হিসেবে বেশ কয়েকটা পুরস্কারও জিতে ফেলেছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি গানটাও ভালই করেন। নিজের প্রায় প্রত্যেকটা ছবিতেই গান গেয়েছেন। কয়েকটা সিঙ্গলও গেয়েছেন আয়ুষ্মান। ইদানীং তিনি আবার অভিনয়ের থেকে গানকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। বড় পরদায় কাজ করছেন বলে টেলিভিশন থেকে একেবারে সরে আসেননি তিনি। এখনও বিভিন্ন শো সঞ্চলনার দায়িত্বে থাকেন আয়ুষ্মান। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত তাঁর কোনও ছবি মুক্তি পায়নি। কাজ চলছে ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’র। পরিণীতি চোপড়ার সঙ্গে। ভূমি পেড়নেকরের সঙ্গে অভিনীত ‘মনমরজিয়া’ মুক্তি পাওয়ার কথা এ বছরেই।
ফ্লপ লিস্ট
একই ধরনের চরিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে যাচ্ছেন আয়ুষ্মান। এখনও পর্যন্ত যে ক’টা ছবি করেছেন, তার প্রায় সবেতেই রোমান্টিক হিরোর চরিত্রেই দেখা গিয়েছে তাঁকে। গানটা ভাল করেন বটে, তবে নাচের তালে পা মেলানোর ব্যাপারে মোটেই সাবলীল নন আয়ুষ্মান।
পুলকিত সম্রাট
বরুণ ধবন এবং সিদ্ধার্থ মলহোত্রের সঙ্গে একই বছরে বলিউডে পা রেখেছিলেন বটে! তবে তাঁদের মতো সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে পারেননি পুলকিত সম্রাট। অভিনয়ের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি।
হিট লিস্ট
হিট লিস্টে পুলকিতকে জায়গা দেওয়া মুশকিল। তাঁর অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে ‘ফুকরে’ কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যদিও সেখানে তাঁর অভিনয় আলাদা করে প্রশংসা পায়নি। ‘সনম রে’ও হিট।
ফ্লপ লিস্ট
চলতি বছরেই মুক্তি পেয়েছিল তাঁর অভিনীত ‘জুনুনিয়ত’। কিন্তু বক্স অফিসে সাফল্য আনতে পারেনি। পুলকিতের সহ-অভিনেত্রী ছিলেন ইয়ামি গৌতম। যাঁর সঙ্গে আবার তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথাও শোনা যায়। রোমান্টিক হিরো হিসেবেই বলিউডের সিঁড়ি চড়তে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সফল হতে পারেননি। অন্য জঁরে কাজের প্রসঙ্গ তো আসেই না! অন্যদিকে অ্যাকশন কিংবা নাচের মাধ্যমেও দর্শকের মন জয় করতে সফল হননি পুলকিত।-এবেলা
০৯ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জাহিদ/জেএইচ