সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৮:৫১:২৪

সহকারী শিল্পীদের ঈদ: ছবি নেই, কাজ নেই, ঈদের আনন্দও নেই

সহকারী শিল্পীদের ঈদ: ছবি নেই, কাজ নেই, ঈদের আনন্দও নেই

বিনোদন ডেস্ক: সবাই খালি নায়ক-নায়িকার ঈদ ক্যামন হয়, সেই খবর রাখে। এফডিসিতে হিরো-হিরোইনের খোঁজ নিয়ে চলে গেলে তো হবে না। আমরাও আছি। আমাগো দিকেও তাকাইয়েন।’ গত শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) আমতলায় বসে থাকা সহকারী শিল্পী (এক্সট্রা হিসেবে পরিচিত) সাথী কথাগুলো বলেন।


শনিবার এফডিসিতে কোনো সিনেমার শুটিং ছিল না। তারপরও এখানে আড্ডায় মেতেছিলেন সাথীর মতো আরও বেশ কয়েকজন সহকারী শিল্পী। কেউ এসেছেন ঢাকার কচুক্ষেত, কেউ বা মোহাম্মদপুর কিংবা মালিবাগের মতো জায়গা থেকে। আমতলায় বসে মোবাইল ফোনে পুরোনো সিনেমার গান দেখছেন। কেউ আবার পায়চারি করছেন।


২৫ বছর ধরে চলচ্চিত্রে সহকারী শিল্পীর কাজ করছেন সাথী। হিংসা সিনেমায় চিত্রনায়িকা শাহনাজের বান্ধবীর চরিত্রে প্রথম অভিনয়। এরপর ববিতা, শাবনূর, মৌসুমীসহ আরও অনেকের বান্ধবী, আবার কখনো পুলিশের চরিত্রে কিংবা হাসপাতালের নার্সের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আগে অনেক কাজ হলেও এখন এফডিসিতে কাজ নেই। কমে গেছে আয়। সংসার চালাতেও হিমশিম খেতে হয়। ঢাকার শাহজাহানপুরে আট হাজার টাকায় দুই রুমের ভাড়া বাসায় স্বামী ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-পড়ুয়া একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকেন সাথী।

এবারের ঈদ কীভাবে উদ্যাপন করবেন—জানতে চাইলে সাথী বলেন, ‘কোরবানি তো দিতে পারব না। ঈদের দিন বাসায় ভালোমন্দ রান্না করব। হয়তো মুরগির মাংস আর খিচুড়ি। সেমাইও বানাব। ছেলের আবার সেমাই খুব পছন্দ।’
ঈদে কোনো কিছু কিনেছেন? ‘আজ (শনিবার) ছেলেরে দুই হাজার টাকা দিয়া আসছি। বলেছি জামা-জুতা কিনতে। ওর গায়ে নতুন পোশাক এবং নতুন জুতা দেখলেই শান্তি।’
বিদায় নেওয়ার আগে জানালেন, তিনি আর এই কাজ করবেন না। চাকরি খুঁজছেন। চাকরি পেলেই সিনেমাকে বিদায়। বললেন, ‘সিনেমায় আমাগো দেইখ্যা মানুষ বিনোদন পায়। দুঃখ হইতাছে, আমাগো সামাজিক মর্যাদা নাই! বাসাভাড়া নিতে গেলেও বাড়িওয়ালা বাঁকা চোখে দেখেন। সব মিলিয়ে এই জীবন অনেক কষ্টের।’


তিন যুগ ধরে প্রায় তিন শ সিনেমায় ‘ফাইটার’ হিসেবে অভিনয় করেছেন ফকিরা। চার ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা ফকিরা দুই দিন আগেও একটি সিনেমায় কাজ করেছেন। আগের তুলনায় এখন কাজের সংখ্যা অনেক কম। মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে বললেন, ‘পোলাপাইন সব বড় হইয়্যা গেছে। আমিও সিনেমার নেশা ছাড়তে পারছি না। কষ্ট মেনে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
ঈদে শিল্পী সমিতি বা অন্য কোনো সংগঠন থেকে উপহার পান কি না—জানতে চাইলে বললেন, ‘না। একসময় সালমান শাহকে আমি ফাইট শিখাইছিলাম। সে কোথাও গেলেই আমার জন্য গেঞ্জি ও চশমা আনত। রাজীব ভাই (খল চরিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ওয়াসিমুল বারী রাজীব) যখন ছিলেন, বাসায় ডেকে খাওয়াতেন। এখন আর তেমন কিছু হয় না।’


সিনেমার অতিরিক্ত শিল্পীরা প্রতি শিফটে এক হাজার টাকা করে পান বলে জানান। দালালের মাধ্যমে কাজ পেলে তাঁকেও নাকি কিছু দিতে হয়। তাই দিন শেষে হাতে খুব বেশি টাকা থাকে না।
কিশোরগঞ্জের মেয়ে স্বপ্না আক্তার ১৬-১৭ বছর ধরে চলচ্চিত্রে সহকারী অভিনয়শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন। পরিচিতজনের মাধ্যমে তিনি এই জগতে নাম লেখান। থাকছেন কচুক্ষেতে। ঈদ কেমন কাটবে—জানতে চাইতেই হেসে দিলেন। চোখ ছলছল করছিল। বললেন, ‘ঈদ তো ঈদের মতোই। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব না।’ গ্রামে যাবেন না? ‘গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয় না অনেক দিন। সেখানে মা-বাবা ও ভাইবোন থাকেন। টাকা পাঠিয়ে দিই।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, চলচ্চিত্রের শিল্পী সমিতির সদস্যসংখ্যা প্রায় ছয় শ। আর নিবন্ধিত সহযোগী শিল্পী শ–পাঁচেক। আর বাকি প্রায় দুই থেকে আড়াই শ হচ্ছেন অতিরিক্ত শিল্পী। একসময় সহকারী শিল্পী হিসেবে অভিনয় করে যে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারতেন, এখন তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ছবি নেই, কাজ নেই, তাই ঈদে অতিরিক্ত শিল্পীদের আনন্দও নেই।


চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘চলচ্চিত্রে এক্সট্রা শিল্পী প্রবাদের মতোই হয়ে গেছে। আমি তাঁদের সহকারী শিল্পী বলি। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রে এই শিল্পীরা বেশির ভাগ অভাবের সংসার থেকে আসেন। কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে, কেউ বা স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর। কেউ কেউ আবার প্রতারকের খপ্পরে পড়েও এই লাইনে আসতে বাধ্য হন। আজীবনই তাঁরা সহকারী শিল্পীই থেকে যান।’-প্রথম আলো

১২ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে