সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:৫২:৪৭

রিয়েল লাইফ হিরোদের কথা শোনা যায়, কিন্তু পরদার নায়িকারা যখন বাস্তবে হিরো?

রিয়েল লাইফ হিরোদের কথা শোনা যায়, কিন্তু পরদার নায়িকারা যখন বাস্তবে হিরো?

বিনোদন ডেস্ক : মেয়েদের ব্যাগে পেপার স্প্রে নিয়ে বেরনোর পরামর্শ দিলেন মিমি। তবে মহিলাদের সাবধান করার চেয়েও পুরুষদের শিক্ষাটা অনেক বেশি জরুরি বলে মনে করেন মিমি।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। বাগুইআটির কাছে তেঘরিয়ায় এক বাইক-আরোহীকে ধাক্কা দিয়েছিল একটি গাড়ি। দুর্ঘটনার পর গাড়ি থেকে নামার বদলে ওই অবস্থাতেই বাইক-আরোহীকে লেক টাউন পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার টেনে নিয়ে যায় গাড়িটি। গোটা ঘটনার সাক্ষী ছিলেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। গাড়িটিকে ধাওয়া করে দাঁড় করান তিনি। মদ্যপ ড্রাইভার এবং গাড়ির ছবিও তোলেন মিমি। কেড়ে নেন গাড়ির চাবি। পুলিশে খবর দেন তো বটেই। আহত বাইক-আরোহী রাকেশ অগ্রবালকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন।

এ প্রসঙ্গে মিমির বক্তব্য, তিনি তাঁর কাজটা করেছিলেন। নায়িকার মতে, অন্য কেউ তাঁর জায়গায় থাকলেও হয়তো তা-ই করতেন। ‘‘আমি যে বাড়িতে বড় হয়েছি, সেখানে আমাকে শেখানো হয়েছে কেউ বিপদে পড়লে সাহায্য করতে হয় সব সময়,’’ সাফ বক্তব্য তাঁর।

নায়িকা বলে রাস্তায় নেমে কারও সাহায্যে এগিয়ে আসা যাবে না, এমনটা মনে করেন না মিমি। ‘‘মেকআপ ছাড়া আছি, তাই গাড়ি থেকে নামতে পারব না— এসব কখনও মাথায় আসে না আমার,’’ বলেছেন তিনি।

সব সময় যে রাস্তায় নেমে অন্যকে সাহায্য করতে পারেন, এমনটা নয়। বললেন, ‘‘সেক্ষেত্রে ড্রাইভারকে বলি।’’

আর চারদিকে ঘটে চলা নারী-নির্যাতন নিয়ে কী ভাবেন মিমি? নিজে কখনও হেনস্থার শিকার হননি বলেই জানালেন অভিনেত্রী। ‘‘আমার পক্ষে কিছু বলাটা হয়তো সহজ সে জন্যই। কিন্তু যার সঙ্গে হয়, সে-ই বোঝে। অনেকে মিলে ঘিরে ধরলে হয়তো প্রতিবাদ করেও কিছু করা যায় না। এটা তো আর সিনেমা নয়,’’ মনে করেন তিনি।

মেয়েদের ব্যাগে পেপার স্প্রে নিয়ে বেরনোর পরামর্শ দিলেন মিমি। তবে মহিলাদের সাবধান করার চেয়েও পুরুষদের শিক্ষাটা অনেক বেশি জরুরি বলে মনে করেন মিমি। ‘‘যারা এই ধরনের অপরাধগুলো করে, তাদের মানুষ বলেই মনে করি না!’’ বললেন নায়িকা।

তাপসী পন্নু:
তখন ‘পিঙ্ক’এর শ্যুট চলছিল। অন্যদিনের মতো তাপসী সেট’এ যাওয়ার জন্য গাড়ির দিকে এগোচ্ছেন সবে। হঠাত্ দেখেন, রাস্তায় কয়েকজন ছেলে অশালীন মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছে একজন মেয়ের দিকে। ভয়ে জড়সড় মেয়েটির দিকে তখনই এগিয়ে যান নায়িকা। মেয়েটিকে ডেকে নেন নিজের গাড়িতে।

পরে তাপসী জানিয়েছিলেন, ঘটনার আকস্মিকতায় এতটাই শক্‌ পেয়েছিলেন, যে বেশি কিছু ভাববার সময় পাননি। ‘‘মেয়েটা আমার সঙ্গে গাড়িতে উঠে আসবে কি না, বুঝতে পারছিলাম না প্রথমে। কিন্তু ওরকম একটা ঘটনা চোখের সামনে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি,’’ বয়ান তাপসীর।

দিল্লিতে বেড়ে ওঠা তাপসী একটা সময় রাস্তাঘাটে নিজেও সম্মুখীন হয়েছেন ইভটিজিংয়ের। তাই হয়তো অত তাড়াতাড়ি রিঅ্যাক্ট করেছিলেন ঘটনায়।

কেট উইন্সলেট:
সালটা ২০১১। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের নেকার আইল্যান্ডে রিচার্ড ব্র্যানসনের বাড়িতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন কেট উইন্সলেট। শুধু বাংলো নয়, গোটা দ্বীপটাই রিচার্ডের কেনা! তাঁর ভাইপো নেড রকএনরোলের সঙ্গে পরের বছরেই বিয়ে হয়েছিল কেটের। সেই বাংলোয় একদিন মধ্যরাতে আগুন লেগে যায়। সকলে তখন ঘুমিয়ে। আগুনের আঁচে ঘুম ভাঙার পর সকলে হুড়োহুড়ি করে বাড়ির বাইরে চলে এলেও আটকে পড়েছিলেন রিচার্ডের ৯০ বছরের বৃদ্ধা মা ইভ। কেট তাঁকে কোলে তুলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাইরে নিয়ে এসেছিলেন। রিচার্ডও ছুটে গিয়েছিলেন রাতপোশাকেই। পরে ইভ জানিয়েছিলেন, চোখে কনট্যাক্ট লেন্স না পরায় কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিলেন না তিনি। তখন কেট কোলে তুলে তাঁকে সিঁড়িটুকু পার করিয়েছিলেন।

জেনিফার লরেন্স:
বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন একদিন। আচমকা দেখেন, বাড়ির সামনের রাস্তাতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন এক তরুণী। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন জেনিফার। পথচারীরাও জড়ো হয়। পুলিশও চলে আসে একটু পরেই। মেডিক্যাল টিম এসে মেয়েটিকে সুস্থ করে তোলে ধীরে ধীরে। সেদিন মায়ের সঙ্গে ডিনার করার কথা ছিল নায়িকার। ঘটনা চলাকালীন তিনি তৈরি হয়ে বেরিয়েও আসেন। ততক্ষণে অবশ্য সেরে উঠেছিলেন মেয়েটি।

ডেমি মুর:
সোশ্যাল মিডিয়ার জোরেই ডেমি প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন এক ভক্তের! এক মহিলা ডেমিকে মেসেজ করে জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের হাত কেটে আত্মহত্যা করতে চলেছেন তিনি! ডেমি সঙ্গে সঙ্গে মেসেজটি নিজের টুইটার পেজ’এ আপলোড করে দেন। সঙ্গে লেখেন, ‘আশা করি তুমি মজা করছ’! ডেমির পোস্ট দেখেই পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে। শেষমেশ মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়েছিল মানসিক চিকিত্সার জন্য। সবটাই সম্ভব হয়েছিল ডেমির তত্পরতায়।

রিচা চড্ডা
মেলবোর্নে ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলেন সম্প্রতি। রিচার প্রথম প্রযোজিত ছবির স্ক্রিনিংও ছিল উৎসবে। তার ফাঁকেই শপিংয়ে বেরিয়েছিলেন নায়িকা। হঠাত্ দেখেন চ্যাপেল স্ট্রিটের এক দোকানের কাউন্টারে একটি মেয়ের অসহায় মুখ। কাছে যেতেই বুঝতে পারেন, বিপদে পড়েছে সে। রিচা জিগ্যেস করায় মেয়েটি জানায়, অনেকক্ষণ ধরেই একটি ছেলে তাকে নজরে রাখছে এবং নানাভাবে উত্যক্ত করছে। ব্যাপার বুঝে পরমুহূর্ত থেকেই মেয়েটিকে আর কাছছাড়া করেননি রিচা। দোকান বন্ধ হওয়া পর্যন্ত রিচা তার পাশে থেকেছিলেন পুরো সময়টা। পরদিন মেয়েটিকে পুলিশের কাছে অভিযোগও জানাতে পরামর্শ দেন অভিনেত্রী। ‘‘জানি না মেয়েটা শেষ পর্যন্ত পুলিশকে জানিয়েছিল কি না। তবে গোটা ঘটনাটা দেখে আমি বেশ শক্‌ড হয়েছিলাম! শেষ পর্যন্ত ওর সঙ্গে ছিলাম। দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম,’’ বলেছেন রিচা। -এবেলা।
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে