বিনোদন ডেস্ক : তখন আমার নয়। তখন আমার ফোর। ক্লাস ফোর। হোস্টেলে থাকতাম। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বোধহয় সেখানেই হয়। না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। কত বড় ঠাকুর…কত বড় পুজো…। ঢাকা থেকে অনেকটা দূরের সেই জায়গায় হোস্টেলে কেটেছে আমার মেয়েবেলা।
হোস্টেল মানে তো বুঝতেই পারছেন। বড়দের দিদিগিরি চলতো পুরোদমে। এইট, নাইনের মেয়েরা আমাদের মানে ছোটদের চেলা বানাতো। চেলা বুঝলেন তো? ওরা অর্ডার করবে, আর আমরা ওদের ফাইফরমাশ খাটবো। ছোট ছিলাম, অতো তো বুঝতাম না।
দিদিরা যা বলতো চুপচাপ করে দিতাম। আর আমাকে দেখেও বেশ ইনোসেন্ট মনে হতো সবার। আমাকে দিয়ে সে সময় কী কী করাতো, সে সব গল্পই বলবো আপনাদের।
আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এমন কথাই জানা গেছে।
পুজোর সময় হোস্টেলের দিদিরা আমাকে দিয়ে চুরিও করিয়েছে। হ্যাঁ, চুরি। আমাকে দিয়ে ঠাকুরের ভোগ চুরি করাতো। ফল, মিষ্টি, অন্নভোগ যা দেওয়া হত ঠাকুরকে, তাই চুরি করতে বলতো।
আর আমি করতাম কি, ওদের কথা শুনে ওই সব খাবার চুরি করতাম। আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে চেলাগিরি করতে গিয়ে ওই সব করতাম।
তখন তো স্কার্ট পরতাম। স্কার্টের কোঁচড়ে করে নিয়ে আসতাম ফল-মিষ্টি। হোস্টেলের দিদিদের কথামতো সব এনে দিতাম। আমি কিন্তু বাদ যেতাম না। ওসবের ভাগ আমিও পেতাম তো। ওটাই আনন্দ ছিল। চুরি তো জেনে-বুঝে করিনি। তবে ও ভাবে ভোগ খাওয়ার অন্য মজা ছিল।
আমাদের হোস্টেলের পাশেই একটা নদী ছিল। নামটা…ঠিক মনে পড়ছে না। তবে পুজোর সময় নৌকো করে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ আসত ঠাকুর দেখতে। এত মানুষ দেখলে অবাক হতে হয়। পুজোর সময় আমরা মানে হস্টেলের মেয়েরাও সার বেঁধে দাঁড়িয়ে ভোগ খেতাম।
আরও ছোট ছিলাম যখন সকলের কোলে চড়েই পুজো কেটে যেত। ঈদ, পুজো সব মিলিয়ে এ সময়টা বাংলাদেশে উৎসবের মেজাজ। ছোট থেকেই এমনটা দেখছি আমি। তবে একটা কথা জোর গলায় বলতে পারি, ছোট থেকে আজ পর্যন্ত কখনও মুসলিম বলে দুর্গাপুজোয় আনন্দ করতে আমার অসুবিধে হয়নি।
মুসলিম বলে দুর্গাপুজোয় দাওয়াত পাইনি এমন হয়নি। মুসলিম বলে দুর্গা-মাকে প্রণাম করতে যেতে কখনও আমাকে আটকায়নি কেউ। আমার স্মৃতির পুজোতে তো বটেই, এখনও হিন্দু-মুসলিমে কোনও ভাগ নেই।
২১ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম