বিনোদন ডেস্ক : এটা তার দাবি৷ কিন্তু বাস্তবে ট্যুইটারে তার ভক্ত সংখ্যা শাহরুখ, সালমান, আমিরের থেকেও বেশি - ২ কোটি ২৪ লক্ষ! তিনি বলিউড শাহেনশা অমিতাভ বচ্চন৷ তার ফলোয়ারদের মধ্যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও, যিনি সচরাচর সিনেমা নিয়ে ট্যুইট না করলেও 'পিঙ্ক' নিয়ে করেছেন৷ এমনই অনেক ফলোয়ার রয়েছে অমিতাভ বচ্চনের ট্যুইটার তালিকায়। কিন্তু এই তিনিই কিনা বলিউডের খানদের অনেক গুনে এগিয়ে রাখলেন তার থেকে। এমনই আরো অনেক বিষয় নিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার বংলা সংস্করণের অনলাইনে অমিতাভ বচ্চনের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। আর সেই সাক্ষাৎকারটি এমটিনিউজ২৪-এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলেধরা হলো।
প্রশ্ন : মাস তিনেক আগে 'আমাদের'-কে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন যে প্রত্যেকটি কাজ আপনার কাছে একটি ফাঁকা স্লেটের মতো৷ প্রত্যেকবার নতুন করে আঁচড় কাটতে হয়৷ দীপক সেহগল-এর কালো কোট পরার আগে মনের ভিতরে সেই আঁচড়গুলোর রেখা কেমনতর ছিল?
অমিতাভ বচ্চন : সুজিত (সরকার) আমার কাছে একটা কনসেপ্ট নিয়ে এসেছিল৷ আমি সেটা মিনিটখানেক শুনে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই ছবিটা করার জন্য৷ একবারো জিজ্ঞাস করিনি আমার চরিত্রটা কী, গল্প বা চিত্রনাট্যটাই বা কেমন৷ কিচ্ছু না৷ একটা আইডিয়া ছিল মাত্র, একটা ইস্যু - যেটা আমার এতটাই শক্তিশালী মনে হয়েছিল যে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম৷ তা ছাড়া, সুজিত অত্যন্ত চিন্তাশীল এবং বিবেচক নির্দেশক এবং নির্মাতা৷ ওর ওপর আমার আস্থা টলার কোনো জাগায়ই নেই৷ ছবি ফ্লোরে যাওয়ার আগে ছবির বিভিন্ন খুঁটিনাটি নিয়ে আমরা বহু আলাপ-আলোচনা-তর্ক করেছি৷ তবে শেষ পর্যন্ত আমি সুজিত যা এবং যেরকম চেয়েছে সেটাই ফলো করেছি৷ আমাকে 'পিঙ্ক'-এ যা দেখেন পুরোটই পরিচালকের (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) আর সুজিতের পয়েন্ট অফ ভিউ৷ যদিও দীপক সেহগল কেমনভাবে অভিনীত হওয়া উচিত সে ব্যাপারে আমার কিছু পূর্বকল্পিত ধারণা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাই করেছি যেটা পরিচালক চেয়েছেন৷
প্রশ্ন : অভিনয়ের অভিজ্ঞতাটা কি খুব পীড়াদায়ক ছিল?
অমিতাভ বচ্চন : সিনেমা বানানোর প্রক্রিয়া একেবারেই সহজ নয়৷ ইন ফ্যাক্ট, কোনো সৃষ্টিশীল কাজের প্রক্রিয়াই সহজ নয়৷ 'পিঙ্ক' করার সময় আমরা এক্সট্রিম বিপরীত অনুভূতির স্বীকার হতাম৷ রোজ কেউ না কেউ অভিনয় করতে গিয়ে ভেঙে পড়তাম৷ আমাকে যে সংলাপগুলো দেয়া হয়েছে - 'নো মিন্স নো' - যে কোনো অভিনেতার জন্য স্বপ্নের সংলাপ৷ কিন্তু সুজিত চেয়েছিল সেগুলো যেন অযথা নাটকীয় না হয়ে যায়৷ সেগুলো যতটা সম্ভব স্বাভাবিক অথচ দৃঢ়ভাবে বলা দরকার৷ এটুকু বলব রোজ আমরা সবাই একটা ব্যক্তিগত ক্যাথারসিস-এর মধ্যে দিয়ে যেতাম৷
প্রশ্ন : 'পিঙ্ক'-এ আপনার প্রগাঢ় অভিনয় 'ব্ল্যাক'-এর অভিনয়ের কথা মনে পড়িয়ে দেয়- ছবির প্রেক্ষিতে দুটোই মারাত্বক ইঙ্গিতবাহী রং৷ এই দুটো ছবি করার প্রক্রিয়াটা কেমন? দুটোর মধ্যে কি কোনো মিল আছে?
অমিতাভ বচ্চন : না... কোনো মিল নেই৷ তা ছাড়া, আমার মনে হয় দুটোর মধ্যে কোনো মিল আছে কি না সেটা জিজ্ঞেস করাটা ঠিক নয়৷ ছবি দুটো আর সেগুলোর বিষয়বস্তু একেবারে আলাদা৷ চরিত্রগতভাবেও আলাদা৷ এরকম কাজের মধ্যে একমাত্র মিল এটাই যে এই সবগুলো কাজই পরিচালক আর মেকারের ভিশন-এর পরিচয় বহন করে৷
প্রশ্ন : 'ব্ল্যাক'-এর পর আবার আপনি আর ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় 'পিঙ্ক'-এ একসঙ্গে কাজ করলেন...
অমিতাভ বচ্চন : হ্যাঁ...
প্রশ্ন : আপনার মতে আপনারই অন্য কোনো ছবি আছে যেটা/যেগুলো 'পিঙ্ক'-এর মতো ইনটেন্স মনে হয়?
অমিতাভ বচ্চন : আমরা যে সমস্ত ছবি করি, প্রত্যেকটার মধ্যেই একটা গভীরতা আছে৷ তা না হলে, ক্যামেরার সামনে অসৎ হয়ে পড়ব - যেটা এমন একটা ন্যায়বিরুদ্ধ কাজ যে সেটার সঙ্গে কোনো শিল্পীই নিজেকে কানেক্ট করতে চাইবেন না৷
প্রশ্ন : 'পিঙ্ক'-এর টাইটেল কার্ড-এ অমিতাভ বচ্চনের নাম আসে ছবির তিন অভিনেত্রী - তাপসী পান্নু, কীর্তি কুলহারি আর অ্যানদ্রেয়া টেরিয়াং-এর পরে! এটা কি আপনি বলেছিলেন?
অমিতাভ বচ্চন : না৷ এটা সুজিতের আইডিয়া ছিল৷ যেটার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ সহমত ছিলাম৷ পোস্ট-প্রোডাকশনের আগে আমি এটা নিয়ে কথা বলেছিলাম৷ কিন্তু এটার একজিকিউশন সুজিতের৷
প্রশ্ন : 'পিকু'র পর 'পিঙ্ক'৷ বলিউডে নতুন রসায়নের নাম অমিতাভ বচ্চন-সুজিত সরকার! মনে হচ্ছে আপনারা একসঙ্গে থাকলে ছবি যেন শুধু পাখনা মেলে উড়তেই পারে!
অমিতাভ বচ্চন : থ্যাঙ্ক ইউ! আশা করি আমরা যেন আরো বেশি করে আরো উঁচুতে উড়তে পারি!
প্রশ্ন : এই প্রথম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় একটি ছবি নিয়ে ট্যুইট করলেন - 'Pink a fabulous film...when good things happen to Mr Bachchan makes u feel happy ... as he is a terrific person ...respect ...Shoojit great work.'
অমিতাভ বচ্চন : সৌরভ বন্ধুবর৷ ওঁর বিশালত্ব পৃথিবী-বিখ্যাত৷ আমি কিন্তু কোনোদিন ওঁকে সোশ্যাল মিডিয়াতে কমেন্ট করতে শুনিনি৷ যখন সুজিত আমাকে ওঁর বক্তব্যটা দেখাল আমি একই সঙ্গে সামান্য অবাক এবং আনন্দিত হলাম৷ এর জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই৷ ওঁর কাছ থেকে এমন প্রশংসা বিরল৷ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো সৌরভের এই কমেন্ট আমাদের কাজকে যোগ্য অ্যাটনশন দিয়েছে আর চেষ্টাকে যথাযথ বৈধতা প্রদান করেছে!!
প্রশ্ন : 'আমাদের'-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে সুজিত সরকার বলেছেন আপনার মাত্র তিন মিনিট সময় লেগেছিল এই ছবিতে কাজ করতে রাজি হতে৷ এমনকি সঙ্গে সঙ্গে আপনি ডেট-ও দিয়ে দিয়েছিলেন৷ মুক্তির পর ছবিটা যেন একটা বিশাল আন্দোলনের আকার ধারণ করল৷ এটা কি আপনি আগে থেকে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন?
অমিতাভ বচ্চন : সুজিত ঠিকই বলেছে৷ আর, দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলি, না৷ আমি কখনো ভাবিনি ছবিটা যেরকম নজর কেড়েছে, তেমনটা কাড়বে৷ আন্দোলন তো বহু দূরের কথা৷ তবে এটা আমি বলতে চাই - সুজিত কিন্তু, যে কোনো কারণেই হোক, বিশ্বাস করেছিল যে ছবিটা এরকমই নজর কাড়বে৷ নিজের কাজের ব্যাপারে মন্তব্য করা নিয়ে আমি অনিচ্ছুক৷ কিন্তু সুজিত আগাগোড়া নিশ্চিত ছিল ও কেমন ছবি বানিয়েছে৷ এমনকি ছবি মুক্তির আগে একাধিকবার ওর এই আত্মবিশ্বাসের কথা আমাকে জানিয়েছে৷
প্রশ্ন : বলা হচ্ছে যে ২০১৬ সালে এখনো পর্যন্ত সব থেকে প্রভাব ফেলা ছবিতে আপনি একজন 'নারীবাদী'র ভূমিকায়৷ এই ধরণের 'ট্যাগ' বা ছাপ কি আপনার মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারে?
অমিতাভ বচ্চন : 'ফেমিনিস্ট' - এই ধরণের অভিব্যক্তির মানে জানার মতো বুদ্ধিমত্তা আমার নেই৷ কিন্তু এটা যদি আপনি 'পিঙ্ক'-এর বিষয়বস্তুর ওপর আমার চরিত্রের (দীপক সেহগল) বিশ্বাসের প্রেক্ষিতে বলেন, তাহলে আমি যে মাথা ঘামাই তাই শুধু নয়, আমি রীতিমতো গর্বিত৷
প্রশ্ন : আপনি কোনো দিন ক্যাটকল বা 'আওয়াজ'-এর মুখোমুখি পড়েছেন?
অমিতাভ বচ্চন : হ্যাঁ... একবার৷ তখন আমি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কে এম কলেজে পড়তাম৷ কথা হলো, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া যে কোনো ছাত্রের একটা স্বপ্ন হলো মিরান্ডা হাউসের সামনে একবার দাঁড়ানো - সুন্দরী মেয়েদের দেখার জন্য৷ তাই কলেজে আসার সময় যে বাসগুলো মিরান্ডা হাউসের সামনে দিয়ে যেত, কন্ডাকটরকে আমরা অনুরোধ করতাম - 'দাদা, একবার কলেজের সামনে দাঁড় করাবেন৷' আমরা নামতাম, একটু থাকতাম, তারপর নিজের নিজের কাজে চলে যেতাম৷ কে এম কলেজে একটা থিয়েটারের গ্রুপ ছিল৷ একবার হলো কি, বেশ সৌভাগ্যের ব্যাপারই বলতে হবে, মিরান্ডা হাউস একটা থিয়েটার নামাবে যেখানে তিনটি ছেলের দরকার পড়ল৷ তিনজনের মধ্যে দু'জন ছিল সেন্ট স্টিফেন্স-এর, যে কলেজ মিরান্ডার ভাতৃসম৷ আর তৃতীয়জন আমি৷ আমরা স্টিফেন্স-এ রিহার্সাল করতে যেতাম৷ বুঝতেই পারছেন উত্তজনা - মিরান্ডা হাউসে হঠাৎ ঢোকার বৈধ অনুমতি - হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো! বুক ফুলিয়ে, কায়দা মেরে, পিছনের গেট দিয়ে যেদিকে কফি হাউস আছে, কলেজে ঢুকলাম৷ কলেজের বিশাল কোর্টইয়ার্ড, বিল্ডিং-য়ের সমস্ত আনাচে কানাচে থেকে মেয়েরা দেখছে, আর আমরা তিনটা ছেলে প্রায় রাজার ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছি৷ হঠাৎ... নারীকণ্ঠে আওয়াজ ভেসে এল... 'আয়-হায়!! ক্যা প্যান্ট পহনা হ্যায়... তেরি তো...'... সঙ্গে জোর সিটি! আমি বাজি রেখে বলতে পারি সেদিনের মতো এত অপ্রস্তুত আজ পর্যন্ত কোনোদিন হইনি! সুতরাং, যে সমস্ত মেয়েরা এ সব পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন আমি তাদের অসহায়তা অনুভব করতে পারি৷
প্রশ্ন : আপনার বাড়ির স্বনামধন্য মহিলারা - জয়া ম্যাডাম, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন, শ্বেতা নন্দা, নভ্যা নাভেলি নন্দা - 'পিঙ্ক' দেখেছেন?
অমিতাভ বচ্চন : কয়েকজন দেখেছেন৷ আবার কয়েকজন দেশের বাইরে থাকাতে এখনো দেখে উঠতে পারেননি৷ যারা দেখেছেন - তাদের মধ্যে অভিষেকও আছে - তাদের সবার প্রতিক্রিয়া ভালো এবং যথাযত৷
প্রশ্ন : কয়েক মাস আগে আপনার নাতনি নভ্যা নাভেলি নন্দার ছোট পোশাক-পরাহিতা একটি ছবিকে কেন্দ্র করে প্রচুর কথা উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ সমাজের ভণ্ডামি এমনই যে যদি এই ছোট পোশাক কোনো নন-সেলিব্রিটি মহিলা পরতেন তাহলে বোধহয় কোনো কথাই উঠত না৷ হয়তো বা তার প্রশংসাই করা হত এই বলে যে তার কি অসাধারণ ফিগার! এত কথা কি উঠল এই জন্য যে নভ্যার গায়ে 'বচ্চন' ছাপ আছে? এই বিপরীতগামী মতামতকে আপনি কীভাবে দেখেন? এই অভিজ্ঞতা কি কোনোভাবে দীপক সেহগল গড়বার ক্ষেত্রে কাজে এসেছে?
অমিতাভ বচ্চন : আপনার প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরটা আছে...!! এই দ্বিচারিতার ব্যাপারগুলোর বিষয়ে সুজিত আর লেখক রীতেশ শাহ অত্যন্ত সচেতন ছিলেন 'পিঙ্ক'-এর সংলাপ আর চিত্রনাট্য লেখার সময়ে৷
প্রশ্ন : ট্যুইটারে আপনার ২২.৪ মিলিয়ন ফলোয়ার৷ এই সংখ্যায় সুপারস্টার খানদের আপনি পেছনে ফেলে দিয়েছেন! এই মুহূর্তে তাদের যদি কোনো প্রতিযোগী থাকে তাহলে সেটা আপনি! তারা নিজেরা নন!
অমিতাভ বচ্চন : এটা কি প্রশ্ন, নাকি উক্তি...!? সোশ্যাল মিডিয়ার ফলোয়ার স্টার স্ট্যাটাস বা প্রতিযোগীতার কোনো মাপকাঠি নয়৷ সালমান, আমির, শাহরুখ - আপনি যদি এই খানেদের প্রেক্ষিতে কথা বলেন, তাহলে বলি, তারা আমার থেকে বহু যোজন এগিয়ে এবং ওপরে। আর তারা এটার উপযুক্ত৷ আপনার বা অন্য কারো মত অনুযায়ী, আমি কোনোমতেই তাদের প্রতিযোগী হতে পারি না!
প্রশ্ন : 'Actor... Well, at least some are STILL saying so!!" (অমিতাভ বচ্চনের টুইটার অ্যাকাউন্ট-এ তার পরিচয়)... এটা কি কোনোদিন বদলাবে?
অমিতাভ বচ্চন : (ঠিক 'পিঙ্ক'-এর সুরেই) নো...!!
যে দুই প্রশ্নের উত্তর আসেনি
১) সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ আপনি করন জোহরের আগামী ছবি 'অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল'-এ ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের সঙ্গে রণবীর কাপুরের ঘনিষ্ট দৃশ্যের প্রতিবাদ করেছেন৷ এ নিয়ে আপনার মন্তব্য?
২) আপনি 'রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি' (সদ্য প্রকাশিত রেখার জীবনী) পড়েছেন? না পড়ে থাকলে, আগামী দিনে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে কি?
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/শান্ত/মো:শাই