মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : টিভি স্ক্রলে দেখাচ্ছে "দুই দেশের চলচ্চিত্র উন্নয়নে যৌথ ভাবে কাজ করতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ টাস্কফোর্স গঠিত"!
কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো :
1) উন্নয়নটা কার দরকার? ভারতের না বাংলাদেশের? শিরোনাম দেখে মনে হচ্ছে দুই দেশেরই উন্নয়ন দরকার । ভারতের চলচ্চিত্র উন্নয়নে বাংলাদেশের সাহায্য দরকার এটা একটা নতুন জ্ঞান বটে।
2) আর যদি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উন্নয়নের দায়িত্ব বলিউড নিয়ে থাকে সেটাও পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন জ্ঞানই বটে। কখনো শুনি নাই এক দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন আরেক দেশের পক্ষে ঘটানো সম্ভব। হ্যাঁ কিছুটা উইন উইন কোলাবোরেশন হতে পারে যদি ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে নতুন দিনের ফিল্মমেকারদের ছবিতে বিনিয়োগ করেন। ফলে তাদের একটা বিনিয়োগের ক্ষেত্র হয় আর আমাদের নতুন ছবি গতি পায়। কিন্তু সেই লক্ষণ কি কেউ দেখছেন?
আমি ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতায় পরিপূর্ণ ঈমান আনা একজন মানুষ। আমার বহু কাজের সঙী ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান এনএফডিসি । ভারতের নিউ ওয়েভের আমি সমর্থক এবং বন্ধু । আমার কাজেরও তারা সমর্থক এবং বন্ধু । আমরা নানা ভাবেই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। এই সম্পর্ক এবং সহযোগিতা সামনে আরো বাড়বে।
কিন্তু যখনই এইসব "চলচ্চিত্র উন্নয়ন মার্কা" ছেলে ভোলানো কথা বলা হয় তখনই রাগ ধরে। আরে ভাই ভারতের ছবি বাংলাদেশে ঢোকাতে চান, সেটাতে সমস্যা তো নাই। আগে জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালাটা হতে দেন। সেখানে নীতি ঠিক হোক কত শতাংশ আমদানি করা যাবে, স্থানীয় ছবি কত শতাংশ দেখাতে হবে, বিদেশী ছবির উপর কর কত শতাংশ হবে। কতবার বলবো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তার তার প্রয়োজন মাফিক নীতিমালা আছে। যে কারনেই স্থানীয় ছবি কম কর দেয়, হিন্দী বেশী কর দেয়। কেবল করের ক্ষেত্রে না, নীতিমালা ছবির প্রদর্শন হার নির্ধারণের টুলও বটে। সেই নীতিমালা তাই আগে ঠিক হওয়া ফরজ।
কিছুদিন আগে আমরা অনেকেই নীতিমালার উপর মতামত দিয়ে এসেছিলাম । সেগুলো কি হলো এখনও জানি না । তো সেই নীতিমালা ঠিক হলে তো আর এইসব টাস্কফোর্স লাগছে না ।
ভারতের বন্ধুদের বোঝার সময় এসেছে এই বিষয়টা যারা ডিল করছে, তারা চরম অপরিপক্কতা ও অস্থিরতার পরিচয় দিচ্ছে । এটা বাংলাদেশের তো নয়ই, ভারতেরও উপকার করবে না।
মনে রাখা প্রয়োজন, অস্থিরতা উইকেট পতনের কারণ।
(সংযুক্তি : আর টাস্কফোর্স যদি বানানো হয় এর বাইরের গুরুত্বপূর্ন কিছু কাজ করার জন্য, যেমন কার্যকর যৌথ প্রযোজনা বাড়ানো, তাহলে আমার প্রশ্ন আমরা কি এইরকম একটা টাস্কফোর্সে কাজ করার মতো যথাযথ জ্ঞানওয়ালা লোকজন আমাদের টিমে দেখবো? নতুন এই দুনিয়ার প্রযুক্তিগত, বানিজ্যিক এবং সৃজনশীল চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রেখে আমাদের হয়ে যথাযথ ভয়েস রেইজ করার লোক যদি না থাকে তাহলে আমাদের সামনে বিপদ আছে।
সংযুক্তি 2: প্রথম আলো আমাদের জানাচ্ছে, রমেশ সিপ্পি এবং মুকেশ ভাট বলছেন তারা আমাদের তরুণদের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করেন, তাই আমাদের সিনেমাকে সাহায্য করতে এসেছেন। কিন্তু পুরো সাক্ষাৎকার পড়ে ভারতের ছবি আমদানি ছাড়া আর কোনও ব্লু প্রিন্ট খুঁজে পেলাম না । আর যে তরুণদের সম্ভাবনার কথা বললেন তার উদাহরণ হিসেবে আমেরিকায় কর্মরত টেক উইজার্ড নাফিস ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পেলেন না। তো বাংলাদেশের কোন তরুনদের পাশে এসে উনি দাঁড়াতে চাইলেন ঠিক বোধগম্য হলো না । বাংলাদেশের কোন কোন ছবি দেখে উনারা সম্ভাবনা খুঁজে পেলেন জানা গেলো না । এতো কম হোমওয়ার্ক করে আসলে এরকম হাস্যকর কথাবার্তাই বের হবে। ভারতের চলচ্চিত্র অংগনে বহু মেধাবী মানুষ আছে যারা বাংলাদেশের ছবি সম্বন্ধে ভালো ধারনা রাখে। সহযোগিতার সফরে ওয়াকিবহাল মানুষজনকে পাঠালে তখন পুরো জিনিসটাকে আর একটা বিশেষ এজেন্ডার অংশ মনে হবে না ।
আশংকার জায়গা হলো, এরকম ফাঁকা এবং হাস্যকর মুভমেন্ট ভারত আর বাংলাদেশের মাঝে সত্যিকারের সহযোগিতা বাধাগ্রস্ত করবে। আমরা কেউ কাউকে বোকা না ভেবে সত্যিকারের সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আগালে দুই দেশেরই লাভ হবে। অর্থনৈতিক এবং শৈল্পিক লাভের চাইতে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক লাভটা কম না।) -লেখাটি নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী’র ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহিত
০৭ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন