মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:১৩:৫৮

ছবি থেকেই নেয়া হচ্ছে প্রচারের মালমশলা, বলিউডে নতুন প্রোমোশন ফিকির

ছবি থেকেই নেয়া হচ্ছে প্রচারের মালমশলা, বলিউডে নতুন প্রোমোশন ফিকির

বিনোদন ডেস্ক : বলিউডে সবকিছুরই বিবর্তন ঘটতে থাকে। ছবির বিষয় পাল্টায়। অভিনেতা, অভিনেত্রীদের স্টাইল পাল্টায়। চরিত্ররা বদলে যায়! ফলে মার্কেটিংও যে বদলাতে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। আগে ছবির প্রচার বলতে ব্যাপারটা ছিল ট্রেলার মুক্তি, ফার্স্ট লুক লঞ্চ, দু’তিনটে সং প্রোমো। এতেই শেষ!

কিন্তু দিনবদলের পালা যেহেতু, ঘটনাক্রম এক থাকলেও উদ্দেশ্য তার পুরো আলাদা! ছবি-মুক্তির আগে তাই ট্রেলার, লুক, টিজার, পোস্টার— সবেতেই ধারাবাহিকভাবে ছবি সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে দিচ্ছেন নির্মাতারা। গল্পটা না বলেই। অনেকটা জিগ’স পাজ্‌লের মতো! যেমন ‘ডিয়ার জিন্দেগি’! টিজারেই বাজিমাত করে দিচ্ছে ছবি। কিংবা ‘বেফিকরে’।

যেখানে পৃথিবীর নানা জায়গার ব্যাকগ্রাউন্ডে শুধু চুমুই খেয়ে যাচ্ছেন রণবীর সিংহ-বাণী কপূর! প্রতিটা ফিকিরের মধ্যে একদিকে যেমন দর্শকের আগ্রহ জিইয়ে রাখার কায়দা ধরা যায়, তেমনই খবরের শিরোনামে থাকার বন্দোবস্তও হয়ে যায় বাই ডিফল্ট। অনেকটা মাছের তেলেই মাছ ভাজার মতো! যেখানে, ফিল্মের টুকরো টুকরো অংশ নিয়ে বোনা যায় গোটা প্রচারের ক্যানভাস।

প্রচারে স্টান্টবাজি
‘গজিনি’র সময় নাপিত সেজেছিলেন আমির খান। ‘ববি জাসুস’এর প্রচারে ছদ্মবেশে কখনও ভিখারি, কখনও পাগল সেজে রাস্তায় দেখা গিয়েছিল বিদ্যা বালনকে। ‘মরদানী’র জন্য রানি মুখোপাধ্যায় বাস্তবের ‘মরদানী’দের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাঁরা ঝাঁসির মহিলা পুলিশ অফিসার। ঘটনাটা নিয়ে বেশ চর্চাও হয়েছিল। এই ধরনের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি বানিয়ে তারকাদের দিয়ে কস্ট-এফেক্টিভ প্রচার নতুন নয়।

কিন্তু এখানে একটা মুশকিলও রয়েছে। তারকাদের শিডিউলের সঙ্গে মানিয়ে, তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, খরচের বহর ক্রমাগতই বাড়িয়ে তুলে এই জাতীয় প্রচার সারতে হয়। তাই খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই ধরনের প্রচারমূলক ‘স্টান্ট’ ইদানীং আর হয় না। তার জায়গায় বরং ফিল্ম থেকেই উপকরণ নিয়ে সাজিয়ে-গুছিয়ে প্যাকেজ করে অনেক কম খরচে বেশি লাভ তোলা যায়। দর্শকের সোশ্যাল মিডিয়া টাইমলাইনে ট্রেন্ডিংও থাকা যায়!

টুকরো মে জি রহা হুঁ
প্রথম টিজারে সমুদ্রের সঙ্গে কবাডি খেলে ভক্তদের মন জিতে নিয়েছিলেন ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র শাহরুখ। এমনিতেই গৌরী শিন্দের দ্বিতীয় ছবিতে আলিয়া ভট্টের সঙ্গে শাহরুখ’কে অভিনয় করতে দেখা যাবে জেনে উল্লসিত ছিলেন দর্শক। তারপর পুঁচকে প্রথম টিজারে শাহরুখ আর আলিয়ার খুনসুটি দেখে তাঁরা আশা করতেই পারেন ভরপুর এনটারটেনমেন্ট প্যাকেজ। এই ‘প্রত্যাশা’র পারদ চড়ানোটাই এই ধরনের মার্কেটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য। দ্বিতীয় টিজার মুক্তি পাওয়ার পর সেটা বেশ স্পষ্ট।

চ্যালেঞ্জিং বিষয় হল, ছবির প্রতিটা দিক দেখানোর পরেও মুক্তির আগে গল্প বলা থেকে বিরত থাকা! এটা করার জন্য আলাদাই মুনশিয়ানা লাগে। ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র ক্ষেত্রে যেমন টিজারগুলোকে বেশ একেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ থিমে বেঁধেছেন নির্মাতারা। যেমন ছবির ‘টেক টু টিজারে’র গোটা বিষয়টা হল ‘রিসাইকলিং’। তাই নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ার্কি! দেখলে মনে হবে, ছবির বিজ্ঞাপন যেন! আসলে তো ছবিরই এক টুকরো। কিন্তু ব্যবহার হচ্ছে বিজ্ঞাপনেরই মতো করে! এই পন্থায় নেমেছে ‘কহানি টু’র টিম’ও।

গোটা দেশের বিভিন্ন শহর তারা বিদ্যা বালনের ‘ওয়ান্টেড’ পোস্টারে ছেয়ে দিয়েছিল। সোমবারই নতুন পোস্টার বেরলো ছবির। যাতে দেখা যাচ্ছে, সেই ‘ওয়ান্টেড’এর পোস্টারটি ছেঁড়া। তার তলায় আরেকটি ছবি, যেখানে বিদ্যার কোলে একটি বাচ্চা! রহস্য যে আবৃত বোঝাই যাচ্ছে। আবার কী থেকে কী হল— সেটা জানার জন্য সুজয় ঘোষের ছবি দেখতে এমনিই হল’এ পৌঁছে যাবেন দর্শক!

সোশ্যাল মিডিয়া!
সংবাদ মাধ্যমে তো প্রচার হবেই। সেলেবরা হাঁচি-কাশি দিলেও যেখানে খবর হয়, সেখানে টিজার-ট্রেলারে তাঁদের অন্যভাবে ব্যবহার করা হলেও খবর হবে। সেটা এখন খুব ভাল করেই জানে মুম্বই ইন্ডাস্ট্রি। তাই বেশির ভাগ প্রচারটা তাঁরা করে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়াতেই। যেমন ধরুন, কর্ণ জোহরের ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’। সোমবার তার নতুন গান মুক্তি পেল— ‘কিউটিপাই’। ‘ধর্ম প্রো়ডাকশন্‌স’ টুইট করেছেই তার লিঙ্ক। করবেই। কর্ণও শেয়ার করেছেন। অনুষ্কা শর্মাও কম যান না।

এই পুরোটার ফলে বেড়ে গেল ভিউয়ার সংখ্যা। ভক্তরা তো বসেই আছেন পোস্ট-রিপোস্ট করতে। ফলে ট্রেন্ডিংও হবে বিষয়টা সোশ্যাল মিডিয়ায়! পুরোটা একটা বৃত্তের মতো। এমনিতেই কর্ণের ছবি নিয়ে বহুল বিতর্ক ছবিকে মাইলেজ দিয়ে এগিয়েই রেখেছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রত্যেকটা গানের পরপর মুক্তি। টাইটেল সং প্রকাশ পাওয়া মাত্র রণবীর-অনুষ্কা-ঐশ্বর্যা’র ত্রিকোণটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ‘বুল্লেয়া’র পর ঐশ্বর্যা আর রণবীরের কেমিস্ট্রি। ‘ব্রেকআপ সং’এর পর অনুষ্কা-রণবীরের ফান ফিল্‌ড ভাইব। আর এখন ‘কিউটিপাই’! পুরোটার মাধ্যমে ঝলকে ঝলকে দেখিয়ে দেওয়া— কী কী পেতে চলেছেন দর্শক! অথচ গল্প বোঝার জো নেই!

অল্প অল্প গল্প
সামনেই মুক্তি পাচ্ছে ‘শিবায়’। অজয় দেবগণ বলেছেন, সচেতনভাবে ছবির টিজার-ট্রেলার ছেড়েছেন বাজারে। দিওয়ালি’তে ছবির মুক্তি। কর্ণের ছবির সঙ্গেই। ফলে অজয়কে তাঁর ছবির জোরের জায়গাটা ‘সেল’ করতেই হতো। তাই তিনি ছবির অফিশিয়াল ট্রেলারে রেখেছেন জ্যাম-প্যাকড অ্যাকশন। কেন অত অ্যাকশন, কাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন অজয়, রোম্যান্স কি একটুও নেই— এসব প্রশ্ন তৈরি হবেই ট্রেলার দেখতে দেখতে। সেটাই চেয়েছিলেন অজয়।

ছবি নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয় যাতে। তারপর প্রকাশ করলেন ছবির একটি গান ‘রাতে’। সেই গানে আবার পুরোদস্তুর ইমোশন! দ্বিতীয় ট্রেলারও মুক্তি পেয়েছে সোমবার। তার স্বাদ আবার একদম আলাদা। সবটাই করা ছবির প্যাকেজ কেমন, তার আঁচ যাতে দর্শক পেয়ে যান। আসল তো তাঁরাই! না হলে কম পড়তায় মার্কেটিং করেও তো বক্স অফিসের হাঁ-মুখ বন্ধ করা যাবে না! -এবেলা।
২৫ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে