জুটি হয় জুটি ভাঙে, আবার গড়ে ওঠে নতুন জুটি—নাটক-সিনেমায় এই ট্রেন্ড বহু পুরনো। অপূর্ব-মম, নিশো-মেহজাবিন, তৌসিফ-ফারিয়া, জোভান-সাবিলা—টিভি নাটকে এ সময়ের পাঁচ জনপ্রিয় জুটি। তাঁদের নিয়ে লিখেছেন মীর রাকিব হাসান
জিয়াউল ফারুক অপূর্ব—জাকিয়া বারী মম
অপূর্ব তখন ল্যাবএইডের বিজ্ঞাপন করে আলোচনায়। টিভি নাটকও করছেন। মম সবে ‘লাক্স সুপারস্টার’ হয়েছেন, ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছবির নায়িকা। একসঙ্গে প্রথম অভিনয়ের আগে দুজনের অবস্থা ছিল এমন।
‘অপূর্বকে প্রথম দেখেছি টিভিতে। বেশ হ্যান্ডসাম ছেলে। ওই সময়টায় ল্যাবএইডের বিজ্ঞাপনটি প্রচার হচ্ছিল বলে ওর একটা পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছিল। অভিনয় করার আগে ভাবলাম, সে তো স্টার। নিয়মিত টিভিতে দেখা যায়। আমি কি তার সঙ্গে সাবলীল অভিনয় করতে পারব! অপূর্ব তখন বেশ মুডি ছিল। ঈশিতা আপু সাহায্য করেছিলেন বেশ।’ বললেন মম।
এরপর আরো কিছু নাটকে অভিনয় করলেও জুটিটা তেমন জমেনি তখন। মাঝখানে লম্বা বিরতি। চার বছর পর এই জুটি ফিরল ‘ভালোবাসার চতুষ্কোণ’ দিয়ে। ধারাবাহিক নাটকটি বেশ জনপ্রিয় হয়। নাটকের সূচনা সংগীতে কণ্ঠও দিয়েছেন তাঁরা। এরপর একসঙ্গে বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেন তাঁরা।
সহশিল্পী হিসেবে মম কেমন? ‘এককথায় চমৎকার। অভিনয়ের প্রতি ডেডিকেটেড।’ বললেন অপূর্ব।
একই প্রশ্ন ছিল মমর কাছে—‘ও অনেক বেশি দায়িত্ববান। শুটিংয়ে সবকিছু নিজ দায়িত্বে করে। কারো অপেক্ষায় থাকে না। মজার ব্যাপার হলো, শুটিংয়ে প্রায়ই গিটার নিয়ে আসে। অবসর পেলেই আমাদের গান শোনায়। ও অনেক বেশি হেল্পফুল। নতুন কোনো পরিচালক তাকে নিয়ে কাজ করতে চাইলে তাঁকে অনেকভাবে সাহায্য করে।’
শুটিংয়ে একটা কমন ঘটনা ঘটে। দুজনই তাঁদের ছেলেদের নিয়ে গল্প করতে থাকেন। অপূর্ব দেখায় তাঁর ছেলে আরাশের নতুন ছবি আর মম দেখায় তাঁর ছেলে উদ্ভাসের ছবি। পর্দার বাইরেও তাঁরা ভালো বন্ধু। একজনের শরীর বা মন খারাপ হলে আরেকজন খবর নেন। সাজু খাদেম, ইরেশ যাকের, শিহাব শাহিন তাঁদের কমন বন্ধু। সময় পেলেই আড্ডায় মজে যান।
অপূর্বর হয়ে সাফাইও গাইলেন মম—‘অনেকেই বলে ও শুটিংয়ে ঠিকমতো আসে না। এটা ভুল। আমরা একসঙ্গে এত এত কাজ করি, কখনোই আমার চোখে এমন কিছু পড়েনি।’ সঙ্গে কিছু দোষও যোগ করলেন, ‘ও ভয়ানক রকমের চা-খোর। এত এত চা খায়!’
আফরান নিশো—মেহজাবিন চৌধুরী
মডেলিং-অভিনয়ে নিশো তখন বেশ জনপ্রিয়। মেহজাবিনও লাক্স সুপারস্টার। তবে বয়সটা মেহজাবিনের কম। অনেক কিছুই বুঝতেন না। নিশো ধরে ধরে বুঝাচ্ছিলেন, এটা করো ওটা করো। এভাবে দাঁড়াও, একটু বেশি ভালো লাগবে। সেই গল্প ভোলেননি মেহজাবিন—‘আগে থেকেই আমি নিশো ভাইয়ের ফ্যান। তাঁর সঙ্গে প্রথম যখন অভিনয় করি, তখন আমি একেবারেই নতুন। অনেক ভুল করতাম। তিনি বিরক্ত হতেন না। তারপর তো একে একে অনেক নাটক করেছি। কিন্তু গেল দুই বছরে আমরা একসঙ্গে বেশ কিছু ভালো নাটক করেছি। আমি অনেক লাকি, নাটকগুলো করতে পেরেছি আর নিশো ভাইকে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছি।’
নিশো বলেন, ‘মেয়ে হিসেবে মেহজাবিন অনেক ভালো, সহশিল্পী হিসেবেও। নতুন-পুরান অনেকের সঙ্গেই তো অভিনয় করি। সেখান থেকে বিচার করলে মেহজাবিনকে ভালোই বলব। বিশেষ করে রোমান্টিক আর ইমোশনাল জায়গায় ও অনেক ভালো।’
পর্দার বাইরে এ জুটির সম্পর্কও বেশ ভালো। বয়সের পার্থক্যের কারণে নিশোকে ভাইয়া বলেন মেহজাবিন। নিশোকে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড অভিনেতা মনে করেন মেহজাবিন।
জুটি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পেছনে রহস্যটা কী? উত্তরে দুজনের প্রায় একই কথা—“নাটক যদি জনপ্রিয় হয় তখনই দর্শক একটা জুটিকে বারবার দেখতে চায়। অনলাইনের যুগে এখন পরিচালকরা সহজেই দর্শকের চাওয়াটা বুঝতে পারেন। ঈদের নাটক ‘ও রাধা ও কৃষ্ণ’, ‘তুমি না থাকলে’ থেকে ভালো রেসপন্স পাই। মনে হচ্ছে এর পর থেকেই পরিচালকরা আমাদের নিয়ে একটু বেশিই ভাবেন। বিশেষ করে রোমান্টিক নাটকের জন্য।”
আনিকা কবির শখ—নিলয় আলমগীর
‘সত্যি বলতে ওপরওয়ালাই আমাদের জুটি করে পাঠিয়েছেন। বাস্তব জীবনে যখন জুটি ছিলাম না তখনো আমরা বেশ ভালো বন্ধু ছিলাম। শুটিংয়ে একজন আরেকজনকে অনেক সাহায্য করতাম।’ বললেন নিলয়।
শখ বলেন, ‘আমি জুটি প্রথায় বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু কেন যেন সবাই আমাদের একসঙ্গে কাস্ট করে। আমরাই বলি, ভাই একসঙ্গে আর কত! পরিচালকরা বলেন, আমাদের জুটি নাকি দর্শকদের কাছে কখনো পুরনো হবে না।’ ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন তাঁরা। দীর্ঘদিন প্রেমের পর এ বছরের শুরুতে বিয়ে করলেন এ জুটি।
পর্দাজুটি হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন? ‘শখ অনেক খুঁতখুঁতে। বাসায় যেমন শুটিংস্পটেও তেমন। চরিত্র না বুঝে অভিনয়ে রাজি হবে না। যেটা আমি অনেক সময়ই পারি না। সম্পর্ক রক্ষার খাতিরে হ্যাঁ বলে দিই। জুটি ভাঙে জুটি গড়ে কিন্তু আমাদের কখনো অন্য কারো সঙ্গে জুটি হয়নি। আবার আমাদের জুটিকে দর্শক কখনো ফিরিয়েও দেয়নি। হ্যাঁ, অনেকের সঙ্গে অভিনয় করছি, সামনেও করব। সব আমরা আমরাই করব, এমনটা নয়।’ বললেন নিলয়।
শবনম ফারিয়া—তৌসিফ মাহবুব
দুজনের শুরুটা একই টেলিফিল্ম দিয়ে—‘অ্যাট এইটিন : অলটাইম দৌড়ের ওপর’। প্রথমবারেই হিট জুটি। ফারিয়ার পরের দুটি নাটকেও তৌসিফকে জুটি হিসেবে পেয়েছেন। তৌসিফ বলেন, ‘নতুনদের মধ্যে আমাদের জুটিটা বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করে দর্শক। তাই একসঙ্গে বেশ কিছু নাটক করেছি। একসঙ্গে কাজ করতে গেলে যে বন্ডিংটা দরকার, সেটা আছে আমাদের মধ্যে।’
এ মুহূর্তে দুজনই থাইল্যান্ডে শুটিং করছেন। জুটি হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? অনলাইনে ফারিয়া বলেন, ‘সত্যি খুব মজার। আলাদা করে কিছু বলা যাবে না । তবে শুটিংয়ে থাকলে অনেক মজা হয়। ও যত ভালো অভিনেতা তার চেয়ে হাজার গুণ ভালো মানুষ। আমার একটা খারাপ দিক হলো হুটহাট প্রচণ্ড রেগে যাই। ও সব সময় আমাকে বুঝিয়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখে। আমাদের বন্ডিংটা অনেক মজবুত।’
তৌসিফের একটা মজার ব্যাপার আবিষ্কার করছেন ফারিয়া। তৌসিফের ১৭টা ঘুমের ছবি আছে ফারিয়ার কাছে। ‘ওর মতো ঘুমকাতুরে ছেলে জীবনে দেখিনি। যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়তে পারে। এই তো সেদিন থাইল্যান্ডে শুটিংয়ের সময় একটা পাথরের ওপরে ঘুমিয়ে পড়েছে!’
জুটি হিসেবে পর্দায় বেশ সাবলীল হলেও পর্দার বাইরে তাঁদের দেখা-সাক্ষাতের সময় হয় না। একটাই কারণ, তৌসিফের ঘুম। সময় দেওয়ার কথা বলে তৌসিফ ঘুমিয়ে পড়ে। “আর একটা বদভ্যাস হলো কিছুদিন পর পর ঘোষণা দেয় সিগারেট ছেড়ে দেবে কিন্তু পারে না। এ জন্যই ‘আই ডোন্ট স্মোক, আই ভেপ’ নামে নতুন একটি নাটক করেছে।” বললেন ফারিয়া।
তৌসিফ বলেন, ‘আমাদের বন্ডিংটা আসলেই ভালো। অনেকে অনেক কিছু মনে করেন কিন্তু না, আমরা ভালো বন্ধু।’
ফারহান আহমেদ জোভান—সাবিলা নূর
দুজনের ক্যারিয়ার সবে শুরু। তবু বেশ কিছু নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিশেষ করে বয়সে তরুণ দর্শকের কাছে। ‘বাখরখানি’তে প্রশংসিত হওয়ার পর ক্লোজআপের নাটক ‘শত ডানার প্রজাপতি’ দিয়ে জুটি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলেন। ‘এ নাটকের মাধ্যমে সব শ্রেণির দর্শকের কাছ থেকে প্রশংসা পাই। আমাদের বন্ডিংটা হয় এই নাটকে অভিনয় করতে গিয়েই। নাটকটি প্রচারের পর অনেক পরিচালকই ফোন করে বলেছেন, তোমাদের নিয়ে গল্প ভাবছি।’ বললেন জোভান।
জোভান সম্পর্কে সাবিলা বলেন, ‘খুবই পরিশ্রমী ছেলে। অভিনয়ে ডেডিকেটেড। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিয়মিত লড়ে যাচ্ছে, এটা ভালো লাগে। ও যে আমার খুব ভালো বন্ধু তা বলব না। কারণ, সবারই তো আলাদা আলাদা সার্কেল থাকে। ওর আর আমার সার্কেল আলাদা। একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে অনেকটাই ভালো সম্পর্ক হয়েছে। সাবলীলভাবে ওর সঙ্গে অভিনয় করতে পারি। যেটা অনেকের সঙ্গেই পারি না।’
আর সাবিলাকে নিয়ে জোভান অবশ্য হতাশ, ‘সবচেয়ে ভালো গুণ ও অনেক ভালো অভিনেত্রী। আমাদের নিয়ে অনেক পরিচালক ভাবতে শুরু করেছিলেন একটা সময়। নাটক বা সিনেমা হিট করার জন্য গল্পের পাশাপাশি নায়ক-নায়িকার জুটিটাও একটা ফ্যাক্ট। স্ক্রিনে সব জুটিকে ভালো লাগে না। কিন্তু ওর কিছু কিছু অপূর্ণতার জন্য অনেক পরিচালক আমাদের নিয়ে কাজ করতে চাননি। পার্সোনাল ব্যাপার নিয়ে ও অনেক সময় ডিস্টার্বড থাকে। যেটা ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর। ও আসলেই অনেক ভালো অভিনেত্রী। যদি ক্যারিয়ারের প্রতি মনোযোগী হয়, তাহলে অনেক ভালো করবে।’ -কালের কন্ঠ।
২৭ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম