বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৬, ০৬:৫৯:২১

ঢাকাই ছবিতে শীর্ষ নায়িকা কে?

ঢাকাই ছবিতে শীর্ষ নায়িকা কে?

বিনোদন ডেস্ক: রতি সপ্তাহেই এফডিসিকেন্দ্রিক নতুন নতুন ছবির মহরত হচ্ছে। ঘোষণা করা হচ্ছে নতুন নতুন নায়িকার নাম। কেউ দু’একটি ছবি করেই চলে যাচ্ছেন অন্তরালে। কেউ আবার খ্যাতির ট্র্যাকে উঠে নানা স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়ছেন। বর্তমানে নিভু নিভু তারকার মতো অনেক নায়িকা আলো ছড়িয়ে গেলেও শাবনূরদের উত্তরসূরি হতে পারছে না কেউই।

তাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে অসংখ্য নায়িকা থাকা সত্ত্বেও কাটছে না নায়িকা খরা। তার মধ্যে কেউ কেউ আবার নিজেদের নাম্বার ওয়ান নায়িকা বলেও দাবি করছেন। এ সময়ে ঢাকাই ছবির শীর্ষ নায়িকা কে? এ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। চিত্রপাড়ার সিনেমা বোদ্ধাদের মতামত নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন- অনিন্দ্য মামুন।

প্রেক্ষাগৃহে রঙিন ফিতার নায়িকা মানেই অন্যকিছু। যাকে ধরা যায় না। ছোঁয়া যায় না। কেবল লাখো যুবকের স্বপ্নের রানী হয়ে হৃদয়মন্দিরে বসবাস তার। কিছুদিন আগেও ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়িকা কে- এমন প্রশ্ন করা মাত্রই উত্তর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন আর সে দিন নেই। দর্শক সারিতে বসা সিনেমা প্রেমীদের দিকে এ প্রশ্ন এখন ছুঁড়লে হাতের আঙ্গুল গুনেও উত্তর দিতে পারেন না। এমনকি কয়েকটি ছবি দেখার পরও বলতে পারেন না নায়িকার নাম। অথচ দেশীয় দর্শকরা চোখ বন্ধ করেই হলিউড বলিউডের শীর্ষ নায়িকাদের নাম বলে দিতে পারেন। আর দেশীয় ছবির শীর্ষ নায়িকাদের নাম জিজ্ঞেস করতেই শুরু হয়ে যায় কাচুমাচু ভাব। যদিও নায়কের বেলায় এমনটি ঘটে না। কয়েকজন নায়কই রাজত্ব করছেন ঢাকাই সিনেমায়। তাই চোখ বন্ধ করেই শীর্ষ নায়কের নাম বলে দিতে পারছেন তারা। কিন্তু নায়িকাদের ক্ষেত্রে এমনটি কেন? এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে। এর উত্তরও রয়েছে অসংখ্য। হলিউড-বলিউডে নায়িকাকেন্দ্রিক ছবি নির্মিত হচ্ছে। নায়িকা একাই ছবিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দেশে এখনও নায়িকানির্ভর ছবি তৈরি ওই রকমভাবে শুরু হয়নি। মাঝে দু-একটি নির্মিত হলেও সেগুলো শনির দশা কাটাতে পারছে না। কাজেই কেউ যদি নায়িকানির্ভর ছবি না হওয়াকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে চান সেটিকে একেবারে অমূলক বচন বলে অনায়াসেই উড়িয়ে দেয়া যায়। কারণ শাবানা, ববিতা, কবরীদের সময়ও নায়িকানির্ভর ছবি তৈরি হয়নি। এমনকি মৌসুমী, শাবনূর, পপি ও পূর্ণিমাদের সময়ও নির্মিত হয়নি এমন ছবি। তবুও তাদের সময়ে চোখ বন্ধ করেই বলা যেত শীর্ষ নায়িকার তকমা এখন কার গলায়। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে ধরা হয় নিপুন, অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি, পরিমণি, আঁচল, নুসরাত ফারিয়াকে। আরও একটু বিস্তৃতভাবে দেখলে এ কাতারে উঠে আসে র‌্যামকন্যা আইরিন, মম, জলি, মৌসুমী বিশ্বাস, তমা মির্জার নাম। সারা বছর এদের একাধিক ছবি মুক্তি পেলেও দর্শক জরিপে জনপ্রিয়তার ফলাফল শূন্য। তবে এদের মধ্য থেকেই অনেকে নির্বাচন করে দিয়েছেন শীর্ষ নায়িকা। যে যার মতোই বলে কিংবা লিখে যাচ্ছেন শীর্ষ নায়িকা হিসেবে যে কারও নাম। যা মূলত ‘দশটি ল্যাংড়া ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দিলে একটা না একটা তো এগিয়ে থাকবেই’ এমন বিষয়। কিছুদিন আগেও শীর্ষ নায়িকার মালা ছিল অপু বিশ্বাসের গলায়। বছরে দশ থেকে পনেরোটির বেশি ছবি মুক্তি পেয়েছে তার। শুধু ছবির সংখ্যার বিচারেই নয়, ব্যবসাসফল ছবি উপহারের দেয়ার ক্ষেত্রেও এগিয়ে তিনি। তাই নির্মাতাদের আগ্রহ অপু বিশ্বাসের দিকে বরাবরই লক্ষ করা গেছে। যদিও তার ছবির সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ রয়েছে। তার জন্যই নাকি অপু বিশ্বাস ছবির পর ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন। কথা যাই হোক, আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ নায়িকার খেতাব অঘোষিতভাবে অপুর কাছেই ছিল। তবে তার অভিনয় ও নায়িকসূলভ আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
 
এরপর আসা যাক মাহিয়া মাহির ব্যাপারে। ২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় তার। তখন থেকেই সম্ভাবনাময়ী নায়িকা হিসেবে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। শাবনূর পরবর্তী যুগে মাহিকে অনেকেই শাবনূরের জায়গায় ভাবতে থাকেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজের নৌকায় পা রেখে পরের কয়েক বছর একাধিক ছবিতে অভিনয় করে বেশ দাপুটে বিচরণ করতে দেখা গেছে তাকে। কিন্তু নায়িকা হিসেবে পরিচয় পাওয়ার পরই নানা স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিভিন্ন জনের সঙ্গে প্রেম এবং বিয়ে বিষয়ক জটিলতা তাকে ঘিরে ছিল সর্বক্ষণ। যা দর্শকদের কান পর্যন্ত না গড়ানোর কারণে তখনও দর্শকপ্রিয়তা ছিল তার। হুট করেই জাজের সঙ্গে মন কষাকষি করে এ প্রতিষ্ঠানের বাইরের ছবিতে অভিনয় শুরু করেন। এরপরই বের হয় নতুন স্ক্যান্ডাল। বন্ধু শাওনের সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেম ও বিয়ে করার পরও তাকে ডিভোর্স না দিয়ে বিয়ে করেন অপু নামের আরেক ব্যবসায়ি পাত্রকে। বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। ফলে দর্শক হৃদয়ে কিছুটা জায়গা পেলেও পতন হয় তার। হাতছাড়া হতে থাকে ছবির সংখ্যা। মাহির ক্যারিয়ারের ঠিক এ সময়ে বিয়েকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কাজ বলে মন্তব্য করেছিলেন ঢাকাই ছবির শীর্ষ খল অভিনেতা মিশা সওদাগর। এ বিষয়ে মাহির বিপরীতে গণমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ঝেড়েছেন তিনি।
 
ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সম্ভাবনাময়ী নায়িকা হিসেবে বিচেনায় নেয়া হয়েছিল পরিমণিকে। আকর্ষণীয় রূপের জাদু আর ছেলেমানুষী অভিনয় দিয়ে নিজের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ বাড়িয়ে শীর্ষ নায়িকা হওয়ার দৌড়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু আচরণগত সমস্যার কারণে মৌসুমীদের উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে বারবারই ব্যর্থ হচ্ছেন। বারবার পরিচালকদের শিডিউল ফাঁসানোর পাশাপাশি অসংলগ্ন আচরণের কারণে এ নায়িকার ভাগ্যেও দেখা দিচ্ছে দুর্গতি। পাশাপাশি একাধিক বিয়ের রটনাও তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছে। তাই বেশ কয়েকটি ছবি করলেও শীর্ষ নায়িকার খেতাব থেকে তাকে দূরে রাখতে হচ্ছে অবলীলায়।
 
বর্তমান সময়ের আরেক ব্যস্ত নায়িকা ববি। অনন্ত জলিলের ‘খোঁজ: দ্যা সার্চ’ ছবির মাধ্যমে ছবিতে অভিষেক হয় তার। এর পর অনেক ছবিতে অভিনয় করলেও পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীর বাইরে কারো ছবিতে তেমন একটা দেখা যায়নি তাকে। আর শীর্ষ নায়িকা হওয়ার ট্র্যাকে নামলে তাকে হতে হবে সর্বজনীন। যা এ নায়িকার মধ্যে নেই বললেই চলে।
 
অপরদিকে জাজের নৌকায় পা দিয়ে নায়িকা হয়ে আসেন নুসরাত ফারিয়া ও জলি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি এ দুই নায়িকাকে প্রতিষ্ঠিত নায়িকার তালিকায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেও এখনও সফল হয়নি তাদের মিশন। এ দুই নায়িকার মধ্যে নুসরাত ফারিয়া অভিনয়ের চেয়ে নিজের সৌন্দর্য আর স্ট্যাইলনেসের দিকেই বেশি নজর দিয়ে থাকেন। অভিনয়ের কোনো পারদর্শিতা নেই তার মধ্যে। তাই শীর্ষ নায়িকার তকমা তাকে যদি কেউ দিয়ে থাকেন তাহলে সেটা অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ বলে গন্য হবে। অন্যদিকে জলি স্ট্যাইলিস্ট নায়িকা না হলেও অভিনয়ের দিক থেকে এখনও আনকোরাই রয়ে গেছেন। এদিক থেকে ব্যতিক্রম রয়েছেন লাক্স তারকা বিদ্যা সিনহা মিম। ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবসা সফল ছবির নায়িকা না হতে পারলেও অভিনয়েগুণে সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে তার মধ্যে। তবে বেশ ক’বছর টিভি নাটকে কাজ করার ফলে দর্শকদের কাছে এখনও তিনি টিভি তারকা হিসেবেই পরিচিত। তাই শীর্ষ নায়িকার কাতারে দাঁড়াতে আরও কিছু সময় নিতে হবে তার। ইতিমধ্যে সিনেমার ব্যস্ততা বাড়তে শুরু করেছে। চিত্রনায়িকা পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য টিভি নাটকে আজকাল আর অভিনয় করছেন না তিনি।
 
আরেক লাক্স সুন্দরী জাকিয়া বারি মমর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এর বাইরেও নতুনদের কাতারে রয়েছেন আরও অনেক নায়িকা। যারা শীর্ষ নায়িকা নন, কেবল নায়িকা পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতেই লড়াই করে যাচ্ছেন। তাই বর্তমান ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে শীর্ষ নায়িকা কে? এর উত্তরটা বেশ আঁকাবাঁকা করেই দিয়েছেন সিনেমাবোদ্ধারা। এ প্রশ্নের উত্তর খল অভিনেতা মিশা সওদাগরই সরাসরি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকাই ছবিতে আমার দেখা শীর্ষ নায়িকা ছিল শাবনূর। এখনও তাকেই শীর্ষ নায়িকা মনে হয়। যে কোনো চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে যাওয়া নায়িকা সে। তৎকালীন সময়ে শীর্ষ নায়িকা হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে বিনয়ী ব্যবহারের এতটুকুও কমতি দেখিনি। সর্বদা নতুন কিছু শেখার আগ্রহ ছিল। পরে অবশ্য পরিমণির মধ্যে শাবনূরের জায়গায় যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলেও নানা কারণে তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি সে। আর অপু বিশ্বাস আমার চোখে বর্তমানের সর্বাধিক ব্যবসা সফল ছবির নায়িকা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
 
শীর্ষ নায়িকার কথা জানতে চাওয়া হলে এক সময়ের সেরা নায়িকা ববিতা বলেন, ‘এখনকার ছেলেমেদের অভিনয় তেমন একটা দেখা হয় না। তাই শীর্ষ নায়িকা কে এ বিষয়ে সঠিক উত্তর আমার কাছে পাওয়া যাবে না। তবে যতটা জানি অপু বিশ্বাস আড়ালে হওয়ার আগ পর্যন্ত সর্বাধিক ছবি তার কাছেই থাকত। তার হাতে ব্যবসা সফল ছবির সংখ্যাও বেশি। তাই যুক্তির বিচারে তাকেই শীর্ষ নায়িকা বলা যায়।’
 
এ বিষয়ে কাজী হায়াত প্রকাশ করলেন ভিন্নমত। তিনি বলেন, ‘আসলে শীর্ষ নায়িকা শব্দটির মিডিয়ার সৃষ্টি ছাড়া কিছুই নয়। কোনো কালেই নাম্বার ওয়ান বা শীর্ষ নায়িকা বিচার বিবেচনায় হয়নি ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে এখানে ফর্মে থাকার বিষয়টি আছে। একসঙ্গে অনেক নায়িকাই ভালো ফর্মে থাকতে পারেন। কিছুদিন আগেও শাবনূর, মৌসুমী, পপি ও পূর্ণিমা একসঙ্গে ফর্মে ছিলেন। তারও আগে ফর্মে ছিলেন শাবানা, ববিতা, কবরীসহ অনেকেই। আর এখন ফর্মে রয়েছে অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি ও পরিমণি। আমার চোখে যারা ফর্মে থাকবে ও দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে তারাই শীর্ষ নায়িকা।’
 
বর্তমানে নায়িকাদের মধ্যে পেশাদার মানসিকতার অভাব রয়েছে মন্তব্য করে শীর্ষ নায়িকার কথা জানান চিত্রপরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি বলেন, ‘একটা সময় নায়িকাদের মধ্যে অভিনয়ের তাড়না ছিল। ভালো কিছুর জন্য তারা একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করত। ফলে ইন্ডাস্ট্রি একাধিক ভালো ছবি পেত। ওই নায়িকারাও দর্শকদের কাছে শীর্ষ নায়িকা হিসেবে পরিগণিত হতো। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। নায়িকারা এখন তারকা হওয়ার পেছনে দৌড়ায়। ফলে কিছুই হয় না।’ তবে বর্তমানে নায়িকাদের মধ্যে অপু বিশ্বাস, পরিমণি ও মাহিকেই শীর্ষ নায়িকাদের দলে রেখেছেন এ চিত্রপরিচালক।
 
এক সময়ের শীর্ষ নায়কদের দলে থাকা চিত্রনায়ক আমিন খানের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘আসলে এ বিষয়ে আমাদের চেয়ে দর্শকরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার মতে দর্শকদের কাছে যে নায়িকার গ্রহণযোগ্যতা যত বেশি সে নায়িকা শীর্ষস্থানের দৌড়ে তত এগিয়ে।-যুগান্তর
১০ নভেম্বর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে