সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ০৫:১৬:৫৫

কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে কাঁদলেন মোশাররফের ভক্ত

কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে কাঁদলেন মোশাররফের ভক্ত

কুদরত উল্লাহ : ১৯ নভেম্বর। সময় বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট। অফিস থেকে প্রিয়.কম ফিচার টিম যাচ্ছে উত্তরা। কারণ আজ কোন শুটিং কিংবা মডেলের ফটোশুট নয়। অভিনেতা মোশাররফ করিমের একজন পাগল ভক্তকে দেখতেই উত্তরায় যাওয়া আজ। একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজন করা হয়েছে একটি ঘরোয়া পার্টি।

সেই পার্টিতেই মোশাররফ করিমকে দেখতেই আসবেন সেই ভক্ত। যে কিনা সুদূর কলকাতা থেকে মোশাররফ করিমকে দেখতে চলে এসেছেন বাংলাদেশে। তার নাম অভিজিৎ দত্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম করেছেন। যদিও তার গ্রামের বাড়ি নদিয়ার বার্লিন গ্রামে। কিন্তু বসবাস করছেন কলকাতাতে।

সে আসার পর রেস্টুরেন্টে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। সেই ঘটনাটি আসুন পাঠক দেখে নেই দৃশ্য দিয়ে। এটা কোন নাটকের দৃশ্য নয় এটা একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ও একজন ভক্তের মধ্যকার দৃশ্য। এ দৃশ্যে কোন লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশেন ছিল না ছিল একটি গল্প। সেই গল্প বলতেই আজকে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন।

প্রথম দৃশ্য : উত্তরা আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। গাড়ি থেকে হাউজবিল্ডিং নেমে, যাচ্ছি ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি রেস্টুরেন্টে। পৌঁছে দেখি এখনও কেউ আসেনি। তাই অপেক্ষার পাল্লাটি ভারি হতে হতে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসলেন তারা। সাদাকালো যুগের একটি গাড়ি নিয়ে হাজির মোশাররফ করিম, তার স্ত্রী রোবেনা রেজা জুঁই, পরিচালক মুরসালিন শুভ, অঞ্জন ও তমাল। আমাদের কথা হচ্ছে রেস্টুরেন্টটির সামনে।

এরমধ্যে মোশাররফ করিম তার কলকাতা থেকে আসা ভক্তটির জন্য একটি টি-শার্ট এ অটোগ্রাফ দিয়ে রেডি হতে থাকলেন। মোশাররফ করিম আসতেই তার পথচলা ভক্তগুলো তার সঙ্গে কথা বলা শুরু করে দিল। মোটামুটি একটা জটলা পেকে গিয়েছে। ভক্তরা মোশাররফ করিমের সঙ্গে ছবি তুলবেন কিন্তু মোশাররফ করিম ছবি তুলবেন না। এটা তার অনেক আগের অভ্যাস। কিন্তু তিনি ভক্তদের সঙ্গে কথা বলেন। ভির যখনই বাড়তে থাকল তখন মোশাররফ করিম বুঝতে পারলেন এখানে আর থাকা যাবে না। তাই আমাদের সঙ্গে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে চলেন গেলেন।

দ্বিতীয় দৃশ্য : রেস্টুরেন্টের ভেতরের অবস্থাও একই। সবাই এক নজর মোশাররফ করিমকে দেখার জন্য যে যার টেবিল থেকে উঁকি মারতে থাকলেন। কেউ কেউ আবার ছবিও তুলতে এলো কিন্তু মোশাররফ করিমের ‘না’ শুনে কেউ কেউ কথা বলাতেই খুশি। এভাবেই যখন ভেতরে কথা-বার্তা চলছে আমাদের তখনই কলকাতার সেই ভক্ত এসে হাজির হলেন রেস্টুরেন্টে।

এসেছেন ভালো কথা। কিন্তু মোশাররফকে দেখেই তিনি কেঁদে ফেললেন। এই যে শুরু হলো কান্না আর কোন থামাথামি নেই। মোশাররফ করিমকে দেখে জরিয়ে ধরে প্রায় ১০ মিনিট ধরে তিনি কেঁদেই চলছেন। রেস্টুরেন্টের মধ্যে থাকা প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ সবাই অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকল। সবার মনেই একটাই প্রশ্ন কি হচ্ছে এখানে?

তৃতীয় দৃশ্য : এই প্রশ্নের উত্তরটি জানতে একেবারে কাছেই চলে এলেন এক মধ্যবয়সি এক ভক্ত। মোশাররফ তাকে জানালেন ছেলেটি কলকাতা থেকে চলে এসেছে আমাকে দেখতে। পরে মধ্যবয়সি ভদ্রলোকটি বুঝতে পারেন ঘটনা। হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় যখন কাঁদছে অভিজিৎ তখন মোশাররফ এর স্ত্রী জুঁই এর চোখেও পানি। চারপাশে তাকিয়ে দেখি অভিজিৎ এর কান্না দেখে প্রায় সবার চোখই ছলছল করছে। কান্নার পুরাটা সময় সব কিছু একবারে নীরব হয়ে গেল।

চতুর্থ দৃশ্য : অভিজিৎ এর কান্না দেখে মোশাররফ নিজেও অবাক হলেন। তাকে জরিয়ে ধরে আস্তে আস্তে বুঝিয়ে শান্ত করা হলো। কেঁদে তার চোখ হয়েছে লাল। এখন তো তাকে হাসানোর প্রায়োজন। আর তাই মোশাররফ হেসে বললেন, কেঁদে তো সব ভাসিয়ে দিলে। আর কেঁদো না। এবার একটু হাসো। দেখো আমি তোমার জন্য কি এনেছি।

এই কথা শুনে অভিজিৎ চোখ তুলে হাসি দিয়ে তাকালেন সবার দিকে। মোশাররফ করিম আমাদের সবার সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দিলেন। ধীরে ধীরে অভিজিৎ স্বভা্বিক হতে লাগলেন। মোশাররফ অভিজিৎ এর জন্য আনা সেই অটোগ্রাফ দেওয়া টি-শার্টটি তাকে দিলেন। অভিজিৎ মহাখুশি হলো। সেও মোশাররফ করিমের জন্য আনা একটি ঘড়ি ও একটি ছবি বাঁধাই করা পাথরের ফ্রেম দিলেন। মোশাররফ আরও অবাক হলেন।

পঞ্চম দৃশ্য : ইতোমধ্যেই রেস্টুরেন্টের ভেতরে সবাই অভিজিৎ সমন্ধে জেনে গেছে। এর মধ্যে মোশাররফ করিম বললেন, অভিজিৎকে নিয়ে একটু বাইরে গিয়ে কথা বলি। একটু আলো-বাতাসে অভিজিৎ এর মনটা ভালো হবে। আমরাও গেলাম। বাইরে যেতেই অভিজিৎকে অনেক রকম প্রশ্ন করলেন মোশাররফ করিম। অভিজিৎ ও তার উত্তর দিতে থাকলেন। এই রকম কিছুক্ষণ কথা বলে বিশ্বজিৎকে স্বাভাবিক করা হলো। তারপর আমরা আবারও রেস্টুরেন্টের ভেতরে চলে আসলাম।

ষষ্ঠ দৃশ্য : ভেতরের পরিবেশ সেই আগেরই মতো। তবে নতুন একটি আয়োজন করা হয়েছে। এলাকাভিত্তিক যারা গান করেন। তারা প্রতিদিনই এই রেস্টুরেন্টে এসে গান করেন। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। এখন চলছে গান। আমরা গিয়ে ভেতরে গান শুনতে থাকলাম। আর এর মধ্যে আমাদের খাবার চলে আসল। রাতের খাবার পর্ব চলছে। সঙ্গে চলছে অভিজিৎ এর সঙ্গে আমার কথা।

কলকাতার বেশির ভাগ মানুষ বাংলাদেশি নাটক দেখেন। তাদের কাছে অনেক ভালো লাগে এদেশের নাটক-টেলিছবি। বিশেষ করে কলকাতার তরুণ ছেলে-মেয়েরা বাংলাদেশের নাটক দেখেন ইউটিউবে। অভিজিৎকে আমার প্রশ্ন কবে থেকে দেখছেন বাংলাদেশের নাটক? তিনি বললেন, সেই ২০০৮ সাল থেকেই বাংলাদেশের নাটকগুলো দেখি। নাটক দেখতে দেখতে একসময় এসে মোশাররফ দাদা’র ভক্ত হয়ে যাই। এমন অভিনয় তিনি করেন যা দেখে আমি পাগল হয়ে যাই। এক কথায় তিনি আমার জন্য ভগবান।’

আমি আবার প্রশ্ন করলাম কেনো মোশাররফ করিমের নাটক দেখেন? তিনি বললেন, মোশাররফ দাদা’র নাটক দেখে আমার কাছে নাটক মনে হয়না। আমার কাছে মনে হয় আমি নিজেই অভিনয় করছি নাটকটিতে। এতটা বাস্তব তার অভিনয় তাই আমি তার ভক্ত হয়ে গেছি। এখন শুধু আমি সবাইকে তার নাটকের কথাই বলি। আমার গ্রাম নদিয়াতে তার প্রচুর ভক্ত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যারা নিয়মিত মোশাররফ দাদার’র নাটক দেখে। শুধু নদিয়াতে তার ভক্ত রয়েছে তা নয়। কলকাতা থেকে শুরু করে আসাম, বর্ধমান, চব্বিশ পরগণাসহ ভারতে যারা বাংলা বোঝেন তারা সবাই মোশাররফ করিমেকে চেনেন। তারাও বাংলাদেশের নাটক দেখেন।’ এই সব কথা বলতে বলতে আমাদের খাওয়ার পর্ব শেষ হলো। ওদিকে গান গাইছেন শিল্পী।

গল্পটি হয়তো লেখায় শেষ হয়ে গেল। কিন্তু অভিনেতা মোশাররফ করিমের জনপ্রিয়তা থেমে নেই। যেখানেই বাঙালি সেখানেই মোশাররফ করিমের ভক্ত। একজন অভিনেতার অভিনয় দেখে অভিজিৎ এর মতো ভক্তরা কলকাতা থেকে বাংলাদেশে চলে আসছেন। এটা কি বাংলাদেশের অভিনেতা হিসেবে মোশাররফ করিমের পাওয়া না। পাঠক অবশ্যই বলবেন ‘হ্যাঁ’ এটাই একজন অভিনতোর বিশাল পাওয়া। অভিজিৎ এর মতো ভক্তরা আরও আসুক। বাংলাদেশের চ্যানেলেগুলো প্রচার শুরু হোক ভারতে। এমনটাই প্রতাশ্যা করেছেন অভিজিৎ দত্ত ও মোশাররফ করিম। প্রিয়.কম

২১ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে