বিনোদন ডেস্ক : প্রথম ছবিতে অবাক করেছিলেন গৌরী শিন্দে। চেনাশোনা গল্পকে তুলে ধরতে আলাদা মুনশিয়ানা লাগে। ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ও সে রকমই একটা গল্প। স্রেফ ছোট্ট কয়েকটা কারণে ছবিটা ‘ইংলিশ ভিংলিশ’এর উচ্চতায় যেতে পারল না!
একটু ঘেঁটে যাওয়া, বেসামাল জীবনকে পরদায় চিঠি লিখেছেন গৌরী। তাঁকেও পাল্টা চিঠি লেখা যেতে পারত। কিন্তু ‘স্টার স্ট্রাক’ দর্শকের পক্ষে সেটা মুশকিলের! যেন সবটাই তারকাদের কেরামতি! তাই ভূমিকা আর উপসংহার বাদ দিয়ে বাকি লেখাটা আলিয়া আর শাহরুখের জন্য।
বলিউডের মেনস্ট্রিমের ভিতরেই আলিয়া তাঁর ডিঙি নৌকায় তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছেন। ‘হাইওয়ে’, ‘উড়তা পঞ্জাব’এর পর ‘ডিয়ার জিন্দেগি’। তাঁর ছবি বাছাইয়ের ক্ষমতার প্রশংসা করতেই হয়। শাহরুখ থাকা সত্ত্বেও আলিয়ার উপর থেকে ফোকাস নড়েনি।
কমিটমেন্ট ফোবিক প্রজন্মের অন্যতম সদস্য কায়রা, ওরফে আলিয়া। পাছে প্রেম ভেঙে যাওয়ার দুঃখটা পেতে হয়, তাই নিজেই আগে থেকে সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে যায়। মুখে ‘গো টু হেল’ বললেও ভিতরে কুঁকড়ে থাকে। মনের ভাঙা টুকরোগুলো জোড়া লাগানোর জন্য ‘দিমাগ কি ডক্টরে’র কাছে হাজির হয়।
শাহরুখ ছাড়া ডাক্তার জাহাঙ্গীর খান (জগ) আর কেউ হতে পারতেন বলে মনে হয় না। গৌরী ছবিতে কিছু আশ্চর্য কাণ্ড ঘটিয়েছেন। শাহরুখ খানকে ছবি শুরুর ৪০ মিনিট পর এনেছেন। একখানা গানও তাঁর জন্য রাখেননি। কায়রা জাহাঙ্গীরের প্রেমে পড়লেও তার কোনও পরিণতি নেই। শাহরুখের জন্য না আছে হিরোচিত এন্ট্রি, না আছে প্রস্থান। তা সত্ত্বেও শাহরুখের ভাল চরিত্রগুলোর মধ্যে এই ছবিটা থেকে যাবে।
শাহরুখ এখানে বয়সোচিত চরিত্র করেছেন। অনাবশ্যক কচি সাজার চেষ্টা করেননি। উস্কোখুস্কো চুল, অযত্নের দাড়ি নিয়ে তিনি সত্যিই গ্রেসফুলি ওল্ড!
কায়রার চরিত্রটার জন্য আলিয়া একদম যথাযথ। চিত্রনাট্যে খুঁতগুলো ঢেকে যায়, তাঁর স্বতঃস্ফূর্ততার জন্য। একের পর এক প্রেমিক বদলায় কায়রা। এ জন্য আবার নিজেকে সে ‘চিপ’ও ভাবে। যতক্ষণ না জগ এসে তাকে ‘চেয়ার’এর ফান্ডাটা বুঝিয়ে দেয়! এই জায়গাগুলো একটু আরোপিত মনে হতে পারে।
তবে কায়রা আর জগের সেশনগুলো মন্দ নয়। বিশেষত, শাহরুখ-আলিয়ার বায়াস্ড ভক্তদের জন্য। বাকিদের একটু একঘেয়ে লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। শাহরুখের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে কতগুলো আপাত সত্যি সুন্দর করে বুঝিয়েছেন পরিচালক।
প্রেমের সম্পর্কের উপরেই আমরা সবচেয়ে বেশি চাপটা দিয়ে ফেলি। ভালবাসার মানুষটাকে একধারে বন্ধু, মেন্টর, রাগ দেখানোর জায়গা, সবটা ভাবি। আর সেটা করতে গিয়েই সম্পর্কটা ঘেঁটে ফেলি। বাবা-মা’কে যেমন দোষত্রুটি পূর্ণ সাধারণ মানুষ না ভেবে প্রত্যাশার মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে রাখি!
খুব সাদামাঠা গল্পকে আলিয়া খুঁটির মতো ধরে রেখেছেন। শাহরুখ এবং বাকি চরিত্রগুলো স্রেফ সঙ্গত করেছে। অনেকদিন পর কুণাল কপূরকে পরদায় দেখে বেশ ভাল লাগে। সাধারণত আরবান ছবিগুলোয় নিয়মরক্ষার জন্য চরিত্রদের একটা পেশা রাখা হয়। এখানে সেটা হয়নি। কায়রা সিনেম্যাটোগ্রাফার। যার সঙ্গে গল্পের অল্প হলেও যোগ রয়েছে। জাহাঙ্গীরের চরিত্রটাও ‘তারে জমিন পর’এর নিকুম্ভস্যারের মতো নয়! এসো তোমায় জ্ঞান দিই এবং উদ্ধার করি— ধাঁচের ব্যাপার-স্যাপার একেবারেই নেই। সমস্যা মিটে গেলে যে যার রাস্তায়!
আলিয়ার সমস্যা এবং আচরণের মধ্যে নতুনত্ব নেই। এই প্রজন্মের দিকে তাকালে অজস্র উদাহরণ। কিন্তু তার পিছনে বাবা-মা’কে ভিলেন করতে চাওয়ার কি প্রয়োজন ছিল? এই প্রজন্মের কাছে পারিবারিক বাঁধন যে ঢিলেঢালা, সেটা তো আর নতুন করে বলার নেই। গৌরী ছবিটা আড়াই ঘণ্টা ধরে টেনেছেন। সেটারও প্রয়োজন ছিল না।
সেটা করতে গিয়ে আরও গোলমাল পেকেছে। ছবির টুকরো মুহূর্তগুলো দিয়েই টিজার ছেড়েছিলেন নির্মাতারা। শাহরুখ এমনিতেই ছবিতে অল্প সময়ের জন্য রয়েছেন। এর মধ্যে তাঁর দৃশ্যগুলো আগাম দেখে থাকলে ছবি দেখার সময় আর নতুনত্ব থাকবে না।
এই ত্রুটিগুলো না থাকলে, ছবিটা হয়তো ডিয়ার থেকে ডিয়ারেস্ট হয়ে যেতে পারত! তবে গৌরী ইন্ডাস্ট্রিতে থাকবেন। ইমতিয়াজ আলি, অয়ন মুখোপাধ্যায়দের তিনি যোগ্য উত্তরসূরি। প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলেন না অমিত ত্রিবেদীও। দু’টো বাদ দিলে কোনও গানই গুনগুন করতে ইচ্ছে করে না। -এবেলা।
২৭ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম