বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:০৫:৪৫

কীভাবে এমন মহাবীর হলেন আমির খান? মহা ঝুঁকি নিয়েছেন তিনি?

কীভাবে এমন মহাবীর হলেন আমির খান? মহা ঝুঁকি নিয়েছেন তিনি?

বিনোদন ডেস্ক : বেশ কয়েকটা ছবির ট্রেন্ড ফলো করলে দেখা যাচ্ছে, আমির খান শরীরের ব্যাপারে ইদানীং একটু বেশিই ‘পারফেকশনিস্ট’। ‘গজিনি’ বলুন কিংবা মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘দঙ্গল’। ‘ট্রান্সফর্মেশন’ কাকে বলে, সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন আমির। কিন্তু প্রশ্ন হল, পারফেকশনের জন্য স্টেরয়েড নিচ্ছেন না তো তিনি? পছন্দের শরীর পেতে ঝুঁকি নিয়ে ফেলছেন না তো?

‘গজিনি’র সময় নাকি ন’মাসে ও রকম চেহারা বানিয়েছিলেন আমির। ‘দঙ্গল’এ আরও কম সময়ে মারাত্মক রকমের শারীরিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁর ট্রেনার রাহুল ভট্ট বলছেন, ‘বৈজ্ঞানিক’ ডায়েট-চার্ট মেনে এটা সম্ভব। ফিটনেস বিশেষজ্ঞেরা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। তাঁদের মতে, মহাবীর ফোগতের মতো ও রকম ভারী চেহারা থেকে পেশিবহুল চেহারার ‘মহাবীর’ হওয়াটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ভুঁড়ি থেকে সিক্স প্যাকে আসতে গেলে অন্তত তিন-চার বছর লেগে যাওয়ার কথা! শুধু তাই নয়, বয়সটাও বড় ফ্যাক্টর।  

অনেকে বলতে পারেন, তাহলে কি সলমন খান, হৃতিক রোশনও স্টেরয়েডেই বাজিমাত করছেন? বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য সেটা মানতে নারাজ। সলমনের চেহারা গঠনের সময়টা খেয়াল করুন। শার্ট খুলে ‘ও ও জানে জানা’ গানটা মনে পড়ছে? ওই সময় থেকেই সলমনের ‘ট্রান্সফর্মেশন’ শুরু। ধাপে ধাপে শরীরটা তৈরি করেছেন তিনি। সম্প্রতি ‘সুলতান’এর সময় যদিও একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলেন। তখন সলমনেরও ট্রেনার ছিলেন রাহুল ভট্ট। তখনও বলেছিলেন, ওই রকমভাবে শরীর নিমেষের মধ্যে ভাঙাচোরা করা যায়। জিমখানায় শরীরচর্চা করেই এটা সম্ভব। কারণ, সলমনের ট্রান্সফর্মেশন একটা স্ট্রাকচার্ড শরীরের উপর ছিল। যেটা চোখে লাগেনি।

হৃতিক রোশনও তাই। গ্রিক দেবতার মতো পারফেক্ট ‘কাট্‌স’ তাঁর শরীরে। ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’এর হৃতিকের কিন্তু তখনই গোছানো শরীর ছিল। সেটার ভলিউম ধীরে ধীরে বাড়িয়েছেন। তাই ‘ব্যাং ব্যাং’ কিংবা ‘কৃষ থ্রি’তে পেশিবহুল হৃতিককে দেখে সে রকম বাক্যিহারা হতে হয়নি! আর হৃতিক তো বলেই থাকেন, আগে ওয়ার্ক আউট পরে ওয়ার্ক! কয়েক মাস পরেই মুক্তি পাচ্ছে রানা ডগ্গুবাটি অভিনীত ‘বাহুবলী টু’। তাঁর লুক’ও প্রকাশ পেয়েছে। যদিও সেখানে রানাকে স্টেরয়েড-সর্বস্ব বলছেন অনেকে। ঝুঁকির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ কেউ।

বলিউডের এই ‘ট্রান্সফর্মেশন’কে খুব একটা নম্বর দিচ্ছেন না টলিউডের পেশি-শিল্পীরা। অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, যিনি তাঁর গোছানো শরীরের জন্য বেশ জনপ্রিয়, বলছিলেন, ‘‘আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। দীর্ঘদিন ধরে শরীরচর্চা করছি। এ নিয়ে পড়াশোনাও করি নিয়মিত। এসব করে একটা কথাই বুঝেছি। এই ধরনের বিরাট শারীরিক পরিবর্তন যে অসম্ভব, তা নয়। তবে সেটা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’’ কাজেই আমিরের শরীর-বদলে স্টেরয়েডের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বোধহয়! যদিও আমির বলেছেন, সবটাই ‘ডায়েট’! সত্যিই কি?

এ সম্পর্কে টোটা রায়চৌধুরী বলছিলেন, ‘‘কোনও চরিত্রের জন্য তাড়াতাড়ি ট্রান্সফর্মড হতে গেলে অভিনেতারা সাধারণত ‘নিউট্রিশনাল এড’ নিয়ে থাকেন। সব এড কিন্তু শরীরের পক্ষে ভাল না-ও হতে পারে।’’ অভিনেতাদের শারীরিক ক্ষতির দিকটাও মেনে নিচ্ছেন তিনি। বললেন, ‘‘প্রতিদিন দু’তিন ঘণ্টা হেভিওয়েট ট্রেনিং একটা বয়সের পর শরীরের পক্ষে ভাল নয়। এতে মাস্‌ল এবং নার্ভের ক্ষতি হতে পারে।’’ তাঁর মতে, অভিনেতারা এক্ষেত্রে এতটাই বেশি ফোকাস্‌ড, যে পছন্দমতো শরীর পেতে যা-খুশি-তাই করতে পারেন। ওজন বাড়া-কমার পর যে আফটার ট্রিটমেন্ট, তার সেরাটা ওঁরা পেয়ে থাকেন।

হলিউডি ছবিতে এ ধরনের ব্যাপক শরীর বদলের গল্প কম নেই। ‘থ্রি হান্ড্রেড’ ছবিতে জেরার্ড বাটলারকেই ধরুন। কিন্তু তাঁর পরিবর্তন লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন, বিরাট ‘মাস গেন’ করেননি তিনি। শটের আগে শরীরটা ‘পাম্প-আপ’ করে নিতেন শুধু। ক্রিস হেম্‌সওয়ার্থও ঝুঁকি নেননি। ‘থর’এর জন্য যে চেহারাটা বানিয়েছিলেন, সেটা প্রচুর খেয়ে এবং ওয়েটলিফ্‌ট করে। টম হার্ডিও কোনও স্টেরয়েড না নিয়ে শুধু খেয়েই ভলিউম বাড়িয়ে নিয়েছিলেন! তবে ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’ ছবিতে কম্পিউটার গ্রাফিক্স এবং নীচ থেকে তাঁর শটগুলো নেওয়ার ফলে বড়সড় দেখিয়েছিল তাঁকে। ক্রিস্টোফার নোলানের নির্দেশে একই কাজ করেছিলেন ‘ব্যাটম্যান’ ক্রিশ্চিয়ান বেলও।

অতএব জিমে গিয়ে ওজন তুললেই রাতারাতি ‘ট্রান্সফর্মেশন’ হয়ে যায় না! কোনও জাদুবিদ্যাতেও নয়! আমির অবশ্য ভেলকিটা দেখিয়েই চলেছেন! -এবেলা।
১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে