বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:২৬:২১

টলিউডে চলচ্চিত্র সার্কাস

টলিউডে চলচ্চিত্র সার্কাস

বিনোদন ডেস্ক : টলিউড নিরামিষ ইন্ডাস্ট্রি। গসিপ, খবর, হিট সবই কমের দিকে। তা-ও মাঝে মধ্যে কিঞ্চিৎ হইচই ঘটে থাকে বইকী! টলি-সেলেবদের মনে যা-ই থাক, সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলের মধ্যে বেশ ভাব-ভালবাসা রয়েছে। রকমসকম দেখলে মনে হবে ফোনে রিমাইন্ডার সেট করা থাকে। কারও ছবি রিলিজ করুক, ট্রেলার কিংবা গান, অহো কি দারুণ গোছের একটা টেক্সট পাঠিয়ে দিলেই হল!

প্রাক্তনই বর্তমান
কেউ কেউ ছবি ২৫ দিন হল’এ টিকে থাকলেই পার্টি দেন। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায় ১০০দিনের কমে কথা বলেন না! তাই ‘প্রাক্তন’ আর কিছুতেই প্রাক্তন হয় না। হল’এ গে়ড়ে বসে থাকে। টেলিভিশন আঁকড়ে থাকা বাঙালিরা পর্যন্ত দলে দলে তাঁদের ছবি দেখতে যান। যদিও অনেকে ছবিতে ‘মিসোজেনি’র গন্ধ পেয়েছেন। অনেকের মতে ছবিটা ‘চড়া দাগের’। তাতে ‘প্রাক্তন’এর হিট হওয়া আটকায়নি। ছবির বক্স অফিস সাফল্যই একমাত্র আলোচ্য বিষয় নয়। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে দীর্ঘদিন পরে পরদায় ফিরিয়ে এনেছিলেন পরিচালক জুটি। টলিউডের এ বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনায় ‘প্রাক্তন’কে অবহেলা কোনওমতেই করা যাবে না।

ক্লিন বোল্ড
সাহসী, পরিণত— এমন গুচ্ছের লোকভোলানো তকমা দিয়ে ছবি মুক্তি পেয়েছিল। জলে ভেজা কিছু মাখোমাখো দৃশ্য, বিরক্তিকর সংলাপ দশর্ককে ‘ক্ষত’ ছাড়া কিছু দেয়নি! পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি হলেই যে বক্স অফিসে হিট হবে, তেমন নয়। যেমন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সিনেমাওয়ালা’ চলেনি। শেক্সপিয়রকে নিয়ে মাতব্বরিতেও যে বাংলা ছবি পিছিয়ে, সেটা অঞ্জন দত্তের ‘হেমন্ত’ ফের প্রমাণ করল। সৃজিত মুখোপাধ্যায় ‘জুলফিকর’এ একটা চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু সেটাও ধোপে টিকল কই? এতো গেল মহীরুহ পতন। বাংলা ছবির শীঘ্রপতনের খুচরো তালিকা বিস্তর লম্বা।

মহানায়ক
উত্তমকুমারকে নিয়েই নাকি টেলিভিশন সিরিজ, অথচ পুরো বিষয়টা কাল্পনিকও বটে! মহানায়কের জীবনের সঙ্গে খানিক মিল রয়েছে। খানিকটা আবার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক়প্রসূত। সুতরাং সবটাই ঘেঁটে লাট! জনতার মনেও প্রশ্ন, উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের প্রেমের বিষয়টা কতটা সত্যি? পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তকে প্রশ্ন করলে তিনি ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের দিকে ইঙ্গিত করতেন। এত গোলমাল একসঙ্গে চলতে পারে না। চলেওনি। দর্শক ‘মহানায়ক’কে স্রেফ নাকচ করে দিয়েছেন। নির্মাতারা প্রাইম টাইম ছেড়ে একটু রাতের স্লট ধরলেন। যাতে শহুরে বাঙালিরা অন্তত একটু দেখেন। কারণ, ছোটপরদার আসল দর্শক গ্রামবাংলায়। ‘মহানায়ক’ নয়, ‘পটলকুমার গানওয়ালা’ই তাঁদের পছন্দ। সময় বদলেও ‘মহানায়ক’এর মহাপতন কেউ আটকাতে পারেনি।

থ্রিল আর নেই
বছরভর থ্রিলের ফাঁদ যতই নির্মাতারা ফেঁদে থাকুন না কেন, দর্শক তাতে পা দেননি। গোয়েন্দা গল্প ছাড়া বাকি থ্রিলারগুলো চলেনি। তবে যে হারে গোয়েন্দা গল্প নিয়ে ছবি হচ্ছে তাতে সেখানেও হিটের আকাল আসতে বাধ্য। বছরের সেরা গিমিকটা অবশ্য ফেলুদাকে নিয়েই হয়েছে। আবির চট্টোপাধ্যায় দু’খানা ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে দিব্যি ছিলেন। কিন্তু কপালে সইল না। ফেলুদা হাতছাড়া হল। বঙ্গ জুড়ে তোলপা়ড় চলল নতুন ফেলু মিত্তির খোঁজার। চরিত্রের ৫০ বছরের উদ্‌যাপনটা মাঠে মারা যেত, যদি না সব্যসাচী চক্রবর্তী অবসর ভেঙে ফের মাঠে নামতেন। বুড়ো হাড়েও তিনি ভেলকি দেখাচ্ছেন! বছর শেষে একসঙ্গে মুক্তিপ্রাপ্ত ফেলুদা আর ব্যোমকেশের মধ্যে মগজাস্ত্রের কেরামতি কিন্তু এগিয়ে।

বং গো বলিউড
কারও ছবিতে অমিতাভ বচ্চন লিড চরিত্রে। কেউ বিদ্যা বালনকে শট বোঝাচ্ছেন। বাংলার পরিচালকেরা এ বছর জাতীয় পর্যায়ে সত্যিই ছাপ ফেলেছেন। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘পিঙ্ক’ নিয়ে সারা দেশে চর্চা চলেছে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘বেগমজান’ কেমন হয় তা নিয়েও আগ্রহ রয়েছে। পিছিয়ে নেই শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ও। ‘বেলাশেষে’, ‘প্রাক্তন’ দু’টো নিয়েই আগ্রহী বলিউড। তাঁদের হিন্দি ছবির কাজও খুব তাড়াতাড়ি শুরু হবে।

দেব না জানন্তি
তাঁর বাংলা বচন নিয়ে কম হাসাহাসি হয় না। সেই বাংলা ভাষাতেই সংসদে ফাটিয়ে দিলেন দেব। সংসদে দাঁড়িয়ে দুঁদে রাজনীতিবিদদের সামনে তাঁর নির্বাচনী এলাকার সমস্যা তুলে ধরলেন মাতৃভাষাতেই! কোথাও মুখ খুলে তিনি কামাল করেছেন, কোথাও মুখ বন্ধ রেখে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘জুলফিকর’এ দেব মূক চরিত্রে ছিলেন। তাঁর মাপের সুপারস্টার একে তো অঁসম্বল কাস্টের ছবিতে অভিনয় করছেন, তার উপর সংলাপ দিয়ে বাজি মারার সুযোগটাও নেই। চ্যালেঞ্জটা কিন্তু নিয়েছিলেন তিনি।  

মগ্ন মৈনাক
বছরের সেরা খোরাকটা দিলেন মৈনাক ভৌমিক। নিজের পুরনো ছবিই ফের নতুন করে তৈরি করে ফেলেছেন! ভেবেছিলেন কেউ বুঝতে পারবেন না, কিন্তু লোকজন বোধহয় ততটা বোকা নন। কেরিয়ারের প্রথমদিকে রাহুল আর প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে ‘আমি ভার্সেস তুমি’ তৈরি করেছিলেন মৈনাক। প্রযোজক আর সেই ছবিকে দিনের আলো দেখাতে পারেননি। তাই মৈনাক সেই কনসেপ্টই নতুন করে তৈরি করে ‘বিবাহ ডায়েরিজ’ বানিয়ে ফেললেন। অবশ্যই অভিনেতারাও আলাদা। সবকিছু তো মগ্ন থাকে না। প্রযোজকও ইম্পা’তে মৈনাকের নামে অভিযোগ ঠুকে দিলেন। তবে প্রযোজক যদি ছবিটা রিলিজ করে দিতেন, তাহলে বোধহয় এই দিনটা দেখতে হতো না! -এবেলা।
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে