রবিবার, ০১ জানুয়ারী, ২০১৭, ১০:২৭:২৯

নতুন বছরে বাংলা ছবি কই?

নতুন বছরে বাংলা ছবি কই?

বিনোদন ডেস্ক : অনেকে ‘মোদী এফেক্টে’র কথা বলছেন। তবে এমনিতেও যে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি দারুণ চলছে, তেমন দাবি কেউ করছেন না। নগদ বাতিল থেকে ফ্লপের চাপ— সব মিলিয়ে টলিউড সংকটেই। আগামী বছরে খুব কম ছবি মুক্তি পেতে চলেছে। ২০১৬ সালে শ্যুট হওয়া বেশ কিছু ছবি রয়েছে। সেগুলো বাদ দিলে নতুন ছবির ঘোষণা নেই বললেই চলে। আরবান এবং বাণিজ্যিক, দুই ঘরানাতেই সমান দশা!
টলিউডের পয়লা নম্বর নায়ক- নায়িকার জায়গার দাবিদারও কেউ নেই। যেটা এক সময় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কিংবা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তেরা ধরে রেখেছিলেন। তারপর কোয়েল-জিৎ। খানিকটা হলেও দেব কিছুদিন এক নম্বর হিরোর জায়গাটায় ছিলেন। অঁসম্বল কাস্টের যুগে হিট জুটির কনসেপ্টটা উঠেই গিয়েছে প্রায়। আর এক নম্বরের স্থান তো অবলুপ্ত টলিউড থেকে!

নায়িকা সংবাদ
নায়কদের তুলনায় ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকার সংখ্যা অন্তত বেশি। এখানেও বাণিজ্যিক-আরবান ভাগ রয়েছে। তবে সেই পার্থক্যটা ক্রমশ সূক্ষ্ম হচ্ছে। বাণিজ্যিক ছবির নায়িকারা দিব্যি শহুরে ছবিতে কাজ করছেন। ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ছবিতে কাজ করেছেন নুসরত জাহান। সেদিক থেকে হিসেবে করলে এক নম্বর নায়িকার আসনের দাবিদার তিনি হতেই পারেন। কিন্তু ছবিগুলো যে চলেনি! ‘পাওয়ার’, ‘কেলোর কীর্তি’, ‘লাভ এক্সপ্রেস’, ‘জুলফিকর’, ‘হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা’ মুক্তি পেয়েছে নুসরতের। কিন্তু ছবি হিট না হলে এক নম্বর তো মিলবে না! তবে নুসরতের সঙ্গে সৃজিত কিংবা অরিন্দম শীলের মতো পরিচালকেরা যে কাজ করতে চাইছেন, সেটা অবশ্যই ভাল দিক। নুসরত আপাতত বিরসার ছবিতে কাজ করছেন। শ্রাবন্তীর গোটা বছরে একটাই মোটে ছবি মুক্তি পেয়েছিল। সেটা কবে এল আর গেল, কেউ হদিস রাখেনি! আগামী বছরেও তাঁর হাতে এখনও পর্যন্ত একটাই মোটে ছবি। শুভশ্রীর দু’টো ছবি ফ্লপ। তবে আগামী বছর তিনটে ছবি রয়েছে হাতে। সেগুলো ‘ক্লিক’ করে গেলে শুভশ্রী কিন্তু এক নম্বরের দিকে অনেকটাই এগিয়ে যাবেন। সায়ন্তিকাও মোটামুটি কাজ পাচ্ছেন। কিন্তু এক নম্বরে পৌঁছতে গেলে অভিনয়ে আরও ঘষামাজা করতে হবে। আরেকজন এক নম্বর নায়িকা হওয়ার দাবিদার। তিনি মিমি চক্রবর্তী। ‘কী করে তোকে বলব’, ‘কেলোর কীর্তি’, ‘গ্যাংস্টার’ মুক্তি পেয়েছে ২০১৬’য়। তার মধ্যে শেষ ছবিটা একমাত্র হিট। তবে আগামী বছর মিমি’র হাতে বাণিজ্যিক ছবিও থাকবে। তিনি নিজেকে একটা জঁরে আটকে রাখতে চান না। যে কারণে বিরসার ছবি ছেড়ে তিনি শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ‘পোস্ত’তে কাজ করছেন। সুতরাং আগামী বছর একটা হিট ইতিমধ্যে নিশ্চিত!

অন্য ঘরানার নায়িকাদের মধ্যে‌ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের হাতে গোটাতিনেক ছবি রয়েছে। ‘অসমাপ্ত’, ‘ব্রেকিং নিউজ’এর কাজ হয়ে গিয়েছে। রাজর্ষি দে’র ডেবিউ ছবিতে তাঁর দ্বৈতচরিত্র করার কথা। পাওলি গত দু’বছরে চুটিয়ে কাজ করেছেন। এখন তাঁর হাতে কাজ খানিকটা কমই। ঋক বসু’র পরিচালনায় ‘দেবী’ মুক্তি পাচ্ছে সামনে। পায়েল সরকার বাণিজ্যিক ছবি থেকে আরবানে চলে এসেছেন। যদিও তাতে তাঁর হাতে গোটা দু’য়েকের বেশি ছবি নেই। কমলেশ্বরের ‘মুখোমুখি’তে রয়েছেন তিনি। পার্নো মিত্র, তনুশ্রী চক্রবর্তীদের হাতে মেরেকেটে দু’টো ছবি। রাইমা সেনের গত বছর অনেকগুলো রিলিজ ছিল। তবে এ বছর তাঁর এখনও পর্যন্ত ছবি নেই। প্রিয়ঙ্কা সরকার কিন্তু ফের ছবি করতে শুরু করছেন। রাজ চক্রবর্তীর ‘চ্যাম্প’ ছাড়াও তাঁর হাতে বেশ কিছু ছবি রয়েছে।

ছবিহীন টলিউড
২০১৬ সালের বেশ কিছু প্রজেক্ট ২০১৭’য় মুক্তি পাবে। এর মধ্যে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ‘পোস্ত’, কমলেশ্বরের ‘অ্যামাজন অভিযান’ ছাড়া বড় মাপের ছবি আর নেই। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বিসর্জন’ এবং ‘ধুমকেতু’ও মুক্তি পাওয়ার কথা। রয়েছে অনীক দত্তের ‘মেঘনাদবধ রহস্য’। আরও বেশ কিছু ছবি থাকলেও এগুলোর উপর তাও বাজি ধরা যায়। সৃজিতের কাকাবাবুর শ্যুট শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মুম্বই নিয়ে ব্যস্ত হওয়ায় কবে ছবি শুরু করবেন, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে!  

নজরে বাংলাদেশ
ওপার বাংলার শিল্পী জয়া আহ্‌সান কিন্তু টলিউডেও ভাল কাজ করছেন। ‘আমি জয় চ্যাটার্জি’ এবং ‘বিসর্জন’এ রয়েছেন তিনি।  পশ্চিমবঙ্গের লোক বাংলা ছবি না দেখতে পারেন, কিন্তু ওপার বাংলায় দর্শক প্রচুর। যে কারণে টলিউডের শিল্পীদের কাছে বাংলাদেশ বেশ লোভনীয় জায়গা। টাকার অঙ্কটাও বেশি। জনপ্রিয়তাও। জিতের এপার বাংলায় ছবি হিট না করলেও ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ‘বাদশা: দ্য ডন’ ওপার বাংলায় সুপারহিট। পরমব্রত, পাওলি, পার্নো‌রাও বাংলাদেশে ছবি করছেন।

হিরো নম্বর ওয়ান
এই জায়গাটায় কে থাকবেন সেটা নিয়ে দস্তুরমতো ধন্দ রয়েছে। বাণিজ্যিক ছবির হিরোরা দাপিয়ে বে়ড়াবেন, নাকি আবরবানেরা আস্তিন গোটাবেন? দুই ঘরানার হালই খারাপ। দেব বা জিৎ, কেউই বাণিজ্যিক ছবিতে হিট দিতে পারেননি এ বছর। বাকি নায়কদের অবস্থাও তথৈবচ! অঙ্কুশ পরপর ছবি পাচ্ছেন। আগামী বছরেও তিনি বেশ কয়েকটা ছবি করবেন। কিন্তু এক নম্বরের জায়গাটা তিনি দখল করবেন এমন আশা কম। দেব বাণিজ্যিক দিকটা ছেড়ে আরবান ছবিতে মন দিয়েছেন। নিজের প্রযোজনা সংস্থা খুলেছেন। জঁর বদলে যে ফাটকাটা খেলেছেন তাতে ‘অ্যামাজন অভিযান’, ‘ধূমকেতু’ এবং ‘চ্যাম্প’এর উপর দেবের ভাগ্য ঝুলছে এখন। তাও ভাল তিনি নতুন কিছু করার চেষ্টাটা অন্তত করছেন। জিৎ যেমন দক্ষিণী রিমেকের বাইরে বেরোতেই পারলেন না। সোহম রাজনীতি না সিনেমা, কোনটায় বেশি মন দেবেন সেটা ঠিক করতেই ব্যস্ত। তাও আপাতত তাঁর হাতে গোটা দুই ছবি রয়েছে।

আরবান ছবিতে এই মুহূর্তে আবির চট্টোপাধ্যায় সবচেয়ে ভরসাযোগ্য মুখ। ‘মেঘনাদবধ রহস্য’, ‘আমি জয় চ্যাটার্জি’, ‘বিসর্জন’ মুক্তি পাবে তাঁর। তা ছাড়া আরও দু’টো নতুন ছবিতে কাজ করার কথা আবিরের। তাঁর ঘাড়ের কাছেই কিন্তু নিঃশ্বাস ফেলছেন যিশু সেনগুপ্ত। সামনেই তাঁর ‘বংগ্স এগেন’এর মুক্তি। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘মুখোমুখি’তে রয়েছেন। হাতে ব্যোমকেশের মতো হিট ফ্র্যাঞ্চাইজি তো রয়েছেই। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বরং খানিক পিছনে পড়ে গিয়েছেন। হাতে ছবি কম। তাঁর নিজস্ব পরিচালনার ছবিও যে কবে শুরু হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। ঋত্বিক চক্রবর্তীর উপর একটা সময় টলিউড বাজি রেখেছিল। একার কাঁধে তিনি কতটা ছবি টানতে পারবেন সেই প্রশ্নটা রয়েছে। তবে ঋত্বিকের হাতে অরিন্দম শীলের ব্যোমকেশ ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে। সামনে তাঁর ‘বিবাহ ডায়েরিজ’ মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটা তো আবার ‘টুকলি’র গেরোতে ফেঁসে! প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সিনিয়র অভিনেতা। চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের দিকেই তাঁর ঝোঁক বেশি। বিরসা দাশগুপ্তের নতুন ছবি এবং সৃজিতের কাকাবাবু ছাড়া তাঁর সামনে নতুন কোনও চ্যালেঞ্জ নেই। -এবেলা।
০১ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে