বিনোদন ডেস্ক : নিজের 'ধর্মীয় পরিচয়ের' কারণেই তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ব্যক্তির ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যের নিশানা হতে হচ্ছে, এমনটাই দাবি করলেন বিশিষ্ট অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ৷ দেশ জুড়ে বেড়ে চলা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, 'এত দিন পর্যন্ত আমার ধর্মীয় পরিচয় কি, তা নিয়ে মাথাই ঘামাতে হয়নি৷ কিন্তু এখন প্রতিদিন যে সব ঘটনা ঘটছে, তাতে এই পরিচয়ের কথাটা যেন আরও বেশি-বেশি করে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে! খুব কষ্টের সঙ্গেই এ কথা বলছি৷'
ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার, যে দিন মুম্বাইতে পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী কে এম কাসুরির বই প্রকাশ অনুষ্ঠান আয়োজনের 'অপরাধে' ওআরএফ চেয়ারম্যান সুধীন্দ্র কুলকার্নির মুখে কালি লেপে দেয় শিবসেনা কর্মীরা৷ তা সত্ত্বেও ৬৬ বছর বয়সি নাসিরুদ্দিন ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন, এবং বলেন, 'পার্থক্যের বদলে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে মিলগুলি রয়েছে সে দিকেই বেশি মনযোগ দেওয়া দরকার৷ আমি পাকিস্তানে অনেকগুলি অনুষ্ঠান করেছি, এবং কখনোই কোন প্রকার ঝামেলা বা হুমকির মুখে পড়িনি৷ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি৷ লাহোরে নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই ঘুরে বেড়িয়েছি৷' এর পরই কিছু ব্যক্তি ট্যুইটারে নাসিরুদ্দিনের নামে ব্যঙ্গ করা শুরু করে৷ তাকে 'ভারত-বিরোধী' হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করাহয়৷
এই প্রসঙ্গেই বুধবার এক সর্বভারতীয় সংবাদ চ্যানেলে সাক্ষাত্কারে নাসিরুদ্দিন বলেন, 'পাকিস্তানের ভালো দিকগুলির প্রশংসা করলেই কি তা ভারত-বিরোধী হয়? পাক ক্রিকেটার ইমরান খানকে ভালো বললে কি সুনীল গাভাস্কারকে ছোট করা হয়?' তার কথায়, 'আমার নাম নাসিরুদ্দিন শাহ হওয়ার জন্যই আমায় এ ভাবে নিশানা করা হচ্ছে৷ আমার পরিবারের চার প্রজন্ম এ দেশে বাস করেছে৷ ভারতীয় হিসেবে আমি গর্বিত৷' ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তিগুলিকে কটাক্ষ করে নাসিরুদ্দিনের মন্তব্য, 'বিভেদপন্থীরা দেশে এমন ক্ষমতায় পৌঁছে গিয়েছে যে, তারা খবর পালটে ফেলতে ও তৈরি করতেও পারে!'
'সরফরোশ' সিনেমায় ভারতে আমন্ত্রিত পাকিস্তানি গজল-শিল্পী গুলফাম হাসানের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন নাসিরুদ্দিন৷ সেখানে তাকে আইএসআইয়ের চর হিসেবে দেখানো হয়েছিল৷ শিবসেনা ঠিক সেই কথাটাই বিশ্বাস করে৷ অর্থাত্ পাকিস্তানের যেই আসুন না কেন, তিনি যত বড় শিল্পীই হোন না কেন, তারা নাকি সবাই 'গুপ্তচর'! এ ধরনের কথা স্বাভাবিক ভাবেই নাসিরুদ্দিন সমর্থন করেন না৷ আর বাস্তব জীবনে তার চরিত্রের সঙ্গে গুলফাম হাসানের কোনও মিলই নেই৷ তাই শিবসেনার বিক্ষোভের জেরে মহারাষ্ট্রে পাক গায়ক উস্তাদ গুলাম আলির অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কি ভাবে চুপ থাকেন তিনি?
তাই নাসিরুদ্দিন বলেই ফেললেন, 'যারা সন্ত্রাস ছড়ায়, আর যে সব শিল্পী ভালোবাসা ও মৈত্রীর বার্তা নিয়ে আসেন, তাদের এক করে ফেললে চলবে না৷ আমরা যেন সর্বদা লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য একটা খলনায়কের খোঁজ করে চলেছি৷ ভারতে কিছু সিনেমায় পাকিস্তানিদের খেটো করে উপস্থাপন করা হচ্ছে৷ তার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানেও ভারত-বিরোধী সিনেমা হচ্ছে৷ কিন্তু এসব করে আমরা কখনো ভালো কোথাও পৌঁছতে পারব না৷' তবে, কিছু না করেই শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য যে পর্দার গুলফামকে অপবাদ-ই বাস্তব জীবনে পেতে হবে, তা হয়তো ভাবেননি নাসিরুদ্দিন৷
মৌলবাদের দাপাদাপির প্রতিবাদে অকাদেমী পুরস্কার ফেরানো শিল্পী-সাহিত্যিকদের প্রতি নাসিরুদ্দিনের বার্তা, 'পুরস্কার ফেরানোর বদলে ওঁরা যদি নিজেদের কাজের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতেন, সেটাই ভালো হত৷' পদ্মভূষণ ও সঙ্গীত-নাট অকাদেমী পুরস্কার বিজয়ী এই শিল্পীর কথায়, 'খোলাখুলি রাজনৈতিক বক্তব্যের থেকে শৈল্পিক প্রকাশের মাধ্যমে প্রতিবাদ অনেক বেশি জোরালো হয়৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব৷ তার জন্য যা দাম দিতে হয় দেব৷'-এই সময়।
১৫ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই