বিনোদন ডেস্ক : ডেয়ারিং বলে ডেয়ারিং! সোলো রিলিজ না করে হৃতিক রোশনের সঙ্গে টক্কর। সঙ্গে নামী নায়িকা নেই। ওজনদার পরিচালকের (যদিও রাহুল ঢোলাকিয়া জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত) ছবিও বলা যাবে না। বিদেশি লোকেশন, বড় ক্যানভাস কিচ্ছু নেই। তাও স্রেফ নিজের ক্যারিশমার জোরে মাঠে নেমে পড়েছিলেন শাহরুখ খান। কারণ, দিন ভাল কি মন্দ চলছে তিনি বিচার করেন না। শেরো কা জমানা হোতা হ্যায়!
কিন্তু জমানাতেও টাইম খারাপ হতে পারে। শাহরুখ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন একটা বড় মাপের হিট দেওয়ার। ‘রইস’ হিট হবে কি না সময়ই বলবে।
শাহরুখ যে ফারহা খান, রোহিত শেট্টিদের ঘরানার থেকে বেরিয়ে অন্য কিছু করার চেষ্টা করেছেন এর জন্য তাঁকে স্যালুট করতেই হবে। গোটা ছবি একা টেনেছেন। চিত্রনাট্যের ফাঁক-ফোকরগুলো নিজস্ব ম্যানারিজম দিয়ে ভরানোর চেষ্টা করেছেন।
শাহরুখের বোধহয় একটা ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ কিংবা একটা ‘দঙ্গল’ প্রয়োজন। হিটের জন্য ‘ইমোশন’এর চেয়ে ব়়ড় মশলা আর হয় না। যে আবেগ দিয়ে শাহরুখ এর আগে আমজনতাকে তুর্কি-নাচন নাচিয়েছেন, সেই আবেগটাই ‘রইস’এ অনুপস্থিত। অ্যান্টিহিরোর পরিণতি সকলেরই জানা। কিন্তু সেই পরিণতিতে চোখের কোণ না ভিজলে বুঝতে হবে ছবি মোক্ষম জায়গায় আঘাতটাই হানতে পারেনি।
গুজরাতকে প্রেক্ষাপট করে ছবি। নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত। যদিও ছবির সময়কালে মোদীর উত্থান ঘটেনি। গুজরাতে মদ নিষিদ্ধ। কিন্তু পুলিশ-রাজনীতি-প্রশাসন সকলের চোখের সামনে দিয়েই মদের কারবার চলে। দেশি-বিদেশি সব। আশির দশকে বলিউডে যে গ্যাংস্টার ফ্লিকগুলো তৈরি হতো, ‘রইস’ সে রকমই। শুধু সেই সময়ের মতো চড়া দাগের নয়। অনেক বেশি পলিশ্ড।
ভারতীয় ছবি অ্যান্টিহিরোকে কেন যে তার মহিমাতেই রাখতে পারে না! ছবিতে ডন’কে রবিনহুড হতেই হবে। যদিও গল্পে নতুনত্ব কিছু নেই। রইস (শাহরুখের চরিত্র) ছোট থেকেই মদের কারবার দেখতে অভ্যস্ত। মায়ের থেকে শিখেছে, কোই ভি ধন্দা ছোটা নেহি হোতা। যদি না সেটা অন্য কারও ক্ষতি করে। তাই দিশি মদের বদলে ইংরেজি মদের কারবারে ভিড়ে যায় রইস। একটা সময় নিজের
ব্যবসা শুরু করে। তার কারবারের রাস্তায় নানা বাধাবিপত্তি আসে। যেমনটা একটা গ্যাংস্টার ছবিতে থাকে আর কী! সব কিছুকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে রইসের রথ চলতে থাকে।
সে রকমই একটা বিপত্তির নাম মজমুদার। সে পুলিশ। অভিনয়ে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি। চোর-পুলিশের খেলা জমে ওঠে। ঝপাঝপ দৃশ্যগুলো এগোতে থাকে। প্রথম অর্ধ অনেক বেশি টানটান। পরের অর্ধে মিঞাভাইকে মসিহা করতে গিয়েই গোলটা পাকালেন রাহুল ঢোলাকিয়া। গল্পের খেই হারিয়ে গেল। রইসের রাজনীতিতে যোগদান পর্বটাও কেমন খাপছাড়া।
বলা হচ্ছিল, গুজরাতের গ্যাংস্টার আবদুল লতিফের জীবন আধারে রইসের চরিত্রটা লেখা হয়েছে। খানিকটা সত্যি তো বটেই। বেআইনি মদের ব্যবসা থেকে মুম্বই বিস্ফোরণের যোগসূত্র— মিল অনেকটাই। ক্লাইম্যাক্সেও।
গুজরাত নিয়ে পরিচালকের নিজস্ব জ্ঞানগম্যি আছে। তিনি ‘পরজানিয়া’র পরিচালক। সেই কারণেই বোধহয় এবারেও গুজরাতকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু সেটা নেহাতই প্রেক্ষাপট। গল্পে ইতরবিশেষ হয়নি। আর পাঁচটা মাফিয়া কাহিনির সঙ্গে তফাতও নেই।
শাহরুখ খান ছাড়া ছবির দু’টো জিনিস ভাল। এক, সংলাপ। দুই, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি। ‘রইস’এর ওয়ানলাইনার ইতিমধ্যেই হিট। অনেকদিন পর বলিউড ভাল পাঞ্চলাইন সমৃদ্ধ ছবি দিতে পারল। আর নওয়াজ তো নওয়াজই। ঝাঁঝালো সংলাপগুলোও মোলায়েম ঢঙে বলে যান। রইসের বন্ধু সাদিকের চরিত্রে মহম্মদ জিশান আয়ুব বেশ ভাল। আর সানি লিওনি তো সব সময়েই মোলায়েম। তবে মাহিরা খান তেমন জুতসই হতে পারলেন কই!
ছবির প্রায় প্রতিটা ফ্রেমেই শাহরুখ আছেন। তাই দু’ঘন্টা ২২ মিনিটের ছবিটা ক্লান্তিকর লাগে না। শাহরুখ ছবিতে কয়েকবার তাঁর ‘ব্যাটারি’ বদলেছেন। দেখতে ভাল লেগেছে। নিজের বয়সটাকে ব্যবহার করেছেন শাহরুখ। সেইমতো ছবির লুক তৈরি করেছেন। তাতে যে তিনি সফল সেটা হল’এর মুহুর্মুহু সিটিতেই প্রমাণিত। শাহরুখ বলে থাকেন, তিনি অতি-অভিনয়টা সহজেই করতে পারেন। আবার আন্ডার পারফর্মও করতে পারেন। এই ছবিতে শাহরুখ একেবারেই মাপসই। চোখের দৃষ্টি আর শরীরীভাষা দিয়েই অর্ধেক কাজ সেরে ফেলেছেন।
শাহরুখের চেষ্টাটা চোখে পড়ছে। কিন্তু সেই চেষ্টার উত্তরণ ঘটছে না। ‘ফ্যান’এর মতো ‘রইস’এও পরিচালক আর চিত্রনাট্য ঝোলাল তাঁকে। তাই ক্ল্যাইম্যাক্সে পুলিশ যখন রইসের দিকে বন্দুক তাক করে তখন কষ্টটা বুকের কাছে পাকিয়ে ওঠে না। এটাই খামতি। এই আবেগের ম্যাজিকটাই শাহরুখের কাছে দর্শকের চাহিদা। -এবেলা।
২৬ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম