দেবমাল্য চক্রবর্তী: একজন দৃষ্টিহীন কী করে কোনও প্রমাণ না রেখে স্ত্রীয়ের উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচারের বদলা নেয়, সেটা দেখার লোভ তো ছিলই। আর সেটা দেখতেই হল’এ যাওয়া, গাঁটের কড়ি খরচ করা। কিন্তু সে আশায় বালি! পরিচালক সঞ্জয় গুপ্ত এমন কিছু দেখাতে পারেননি, যেটা দেখে মনে হবে আরিব্বাস! কী দেখিনু!
ছোটবেলায় একটি ছেলে আমাদের সঙ্গে থ্রো-বল ক্রিকেট খেলতে আসত। বাঁ-হাতে ব্যাট করত। বাঁ-হাতে বল করত। অন্য পাড়া থেকে আসত খেলতে। আমরা খেলায় নিতাম। কেন? কারণ ছেলেটি কথা বলতে পারত না, কানে শুনতেও পেত না বলে ‘সিমপ্যাথি’ দেখিয়ে নয়। ছেলেটি ভাল ক্রিকেট খেলত বলেই আমরা নিতাম। ওর জেদটা ভাল লাগত বলে নিতাম। ‘কাবিল’ দেখতে শুরু করে ও রকম একটা জেদি ছেলেকে খুব মনে পড়ছিল। দেখতে ভাল লাগছিল ছবিটা। কিন্তু ‘কাবিল’এর ছেলেটি যেই মুহূর্ত থেকে জেদ ছেড়ে দিল, আর পাঁচটা লোকের মতো ভোঁতা প্রতিহিংসার খেলা শুরু করল, বিশ্বাস করুন আর ভাল লাগল না। আর রিলেট করা গেল না!
রোহন (হৃতিক রোশন) ডাবিং আর্টিস্ট। গরু, গাধা, শুয়োর সবকিছুর মিমিক্রি করতে পারে। তবে দৃষ্টিহীন। ‘ব্লাইন্ড ডেট’এ ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’! প্রথম দিনেই সুপ্রিয়াকে (ইয়ামি গৌতম) ভালবেসে ফেলে রোহন। সু-ও প্রেমে পড়ে রোহনের। তারপর বিয়ে। নতুন বাড়ি, নতুন স্বপ্ন। দু’জন দৃষ্টিহীনের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নতুন জীবন শুরুর একটা গল্প শুরু হতে না হতেই ভিলেন বাবাজি হাজির। কর্পোরেটর মাধবরাওয়ের (রণিত রায়) ভাই অমিত (রোহিত রায়) এবং তার বন্ধু ধর্ষণ করে সু’কে। একবার নয়, দু’বার। আত্মহত্যা করে সু। এরপর ট্রেলারে যা দেখেছিলেন, তাই। ‘রিভেঞ্জ ট্র্যাজেডি’!
একজন দৃষ্টিহীন কী করে কোনও প্রমাণ না রেখে স্ত্রীয়ের উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচারের বদলা নেয়, সেটা দেখার লোভ তো ছিলই। আর সেটা দেখতেই হল’এ যাওয়া, গাঁটের কড়ি খরচ করা। কিন্তু সে আশায় বালি! পরিচালক সঞ্জয় গুপ্ত এমন কিছু দেখাতে পারেননি, যেটা
দেখে মনে হবে আরিব্বাস! কী দেখিনু! ব্যাপারটা এরকম, কেউ আপনাকে ফোন করে আপনারই বাবার গলা নকল করে বলল, আপনি বরাহনন্দন। পরমুহূর্তেই বাবার কাছে আপনার গলায় ফোন, তিনি একটি আস্ত বরাহ! এ কী ছেলেখেলা সঞ্জয়? প্রেম-ভালবাসা দেখব বলে তো কেউ যায়নি। কেমিস্ট্রি পড়তেও নয়। তাহলে যেটাকে টিআরপি করে হল’এ টানলেন, সেখানে লক্কা পায়রা দেখালেন কেন? সবই তো মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল!
একটা ‘ইনটেন্স’ দৃশ্যে যেখানে পুলিশকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দেয় রোহন, গা-টা বেশ রি-রি করে ওঠে। কিন্তু মাথা বিগড়ে যায় যখন ছবির ডিএনএ-টাকেই ভেঙে দেয় উর্বশী রাউতেলা-খ্যাত ‘সারা জমানা’! এভাবে অহেতুক গান ঢুকে পড়ায় বেশ কয়েকটা মুহূর্ত নষ্ট হয়েছে ছবিতে। নেহাত হৃতিক রোশন, ইয়ামি গৌতমদের পারফরম্যান্সটা ভাল, তাই ছবিটা কিছুটা হলেও দেখা যায়। কোরিয়ান ছবি ‘ব্রোকেন’এর সঙ্গে প্লটে মিল রয়েছে ছবির। সেখানে মেয়েকে ধর্ষণের বদলা নিতে দেখা যায় বাবাকে। ‘কাবিল’এর পরিচালক সঞ্জয়ের আবার এদিক-সেদিক থেকে টোকার একটা রেকর্ড রয়েছে কিনা! তবে টুকেও লাভ হয়নি বিশেষ। সেই তো একই রাজনৈতিক দাদা, ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা ‘হুব্বা’ গোছের ভাই প্লটে। সেই পুলিশের টেবিলের নীচের আমদানি। তাই প্লেটে থ্রিলার বাস্পীভূত! ঠান্ডা মাথায় কী সবসময় রিভেঞ্জ জমে? কোরিয়ায় জমতে পারে, ভারতে নয় বোধহয়!
শেষটায় ওই ছোটবেলার খেলার সঙ্গীটিকে খুব পড়ছিল। সে-ও কি এ রকমভাবে বদলা নিত? সে-ও কি মনে মনে ‘কমজোর মত সমঝ’ বলত? সে-ও কি নো বলে আউট হলে রেগে ব্যাট ছুড়ে না দিয়ে, ব্যাটটা আমাদের মাথায় মারত? ভাবনাগুলো কেমন যেন নেতিয়ে গেল রোহনের ‘রিভেঞ্জ’-পর্ব দেখতে দেখতে। কেমন যেন জোলো হয়ে গেল অনুভূতিগুলো। কেমন যেন ভিডিও গেমের মতো, খেলো!-এবেলা
৩০ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস