সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৭, ১০:১০:১৯

‘এখন যা ইচ্ছে করতে পারি’

‘এখন যা ইচ্ছে করতে পারি’

বিনোদন ডেস্ক: গাঁধী পরিবারের নামে আর কতদিন রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, বিল্ডিং নামকরণ হবে বলুন তো! দেশের উন্নতির জন্য কি অন্য কেউ কিছুই করেননি!

আত্মজীবনী লেখা খুব একটা সহজ কাজ নয়। হঠাৎ বই লেখার কথা ভাবলেন কেন?
অনেকগুলো কারণ ছিল এর পিছনে। আমাদের পরিবার নিয়ে অনেক বই হয়েছে। কিন্তু ফার্স্ট পার্সনে কেউ কোনওদিন লেখেনি। মনে হয়েছিল এটা করা খুব জরুরি। তবে ভাববেন না, নিজের গুণগান গাওয়ার জন্য বইটা লিখেছি। বরং নিজেকে নিয়ে রসিকতা করেছি বেশিরভাগ জায়গায়। নিজেকে ছোট করেছি, নিজের ভুলগুলো স্বীকার করেছি। এমনকী, এমন অনেক কথা লিখেছি যেগুলো লেখার হয়তো কোনও প্রয়োজনই ছিল না। কিন্তু আগাগোড়া সত্যি কথা লিখেছি।

সত্যি কথা বলাটা কতটা কঠিন? বিশেষ করে আপনি যখন কাপূর পরিবারের সদস্য।
(বিব্রত হয়ে...) কাপূর পরিবারের সদস্য বলে সত্যি কথা বলা কঠিন হবে কেন! কেউ তো আমার কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে বই লিখতে বলেনি। নিজের ইচ্ছেয় লিখেছি। মনে হয়েছিল কিছু ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়াটা আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই লিখেছি। নিজের কাছে সৎ থাকলে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।

ইন্ডাস্ট্রির অনেক গোপন কথা লিখেছেন। মনে হয়নি, বই প্রকাশের পর বাকিদের সঙ্গে আপনার সমীকরণ বদলে যেতে পারে?
(বেশ রেগে গিয়ে...) বদলালে বদলাবে। তাতে আমার কী! সত্যিটা সত্যিই থাকবে। আমি তো বইয়ের শুরুতেই লিখেছি, আমার কোনও বিষয়ে কোনও আফশোস নেই। একটা মানুষের জীবনে অনেক রকম ঘটনা ঘটে। কিছু আমরা মেনে নিই, কিছু পারি না। কোনও কোনও মুহূর্তে মনে হয়েছে, আমার সঙ্গে ঠিক হচ্ছে না। আবার এমন অনেক মুহূর্ত কেটেছে যখন আমি অন্যের সঙ্গে ঠিক করিনি। সে সবই স্বীকার করেছি।

কাপূর পরিবারের ছেলে হয়েও কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছিল, সেটা অনেকটা জুড়ে রয়েছে আপনার বইয়ে।
স্টারকিড হলেই ইন্ডাস্ট্রিতে সবকিছু সহজে পাওয়া যায়, এমন একটা ভুল ধারণা রয়েছে সকলের মধ্যে। সিনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে আমার এই ধারণাটা ভাঙা খুব জরুরি। আমায় হয়তো ফুটপাথে রাত কাটাতে হয়নি কিংবা আধপেটা থাকতে হয়নি। কিন্তু আমার স্ট্রাগলটা অন্য রকম ছিল। স্টারকিডদের লঞ্চ পেতে অসুবিধে হয় না। কিন্তু তারপর সেই জায়গাটা ধরে রাখা তার নিজের উপর। রাজ কাপূর কিন্তু পৃথ্বীরাজ কাপূরের জন্য বিখ্যাত হননি। কিংবা ঋষি কাপূরও রাজ কাপূরের জন্যে টিকে যায়নি।

স্টারডম ধরে রাখার লড়াইটা আপনাকে লড়তে হয়েছে তাহলে?
আমি ছিলাম রোমান্টিক চকোলেট বয়। হঠাৎ ১৯৭৩ সালে মিস্টার বচ্চনের আবির্ভাবের সঙ্গে পুরো হিন্দি সিনেমার ধরনই বদলে গেল। অ্যাংরি ইয়ং ম্যান ছাড়া দর্শক আর কিছু দেখতে চাইতেন না। আমার সমসাময়িক নায়করা তখন সকলে অ্যাকশন ছবিতে স্টান্ট করছেন। আর আমি ২৫ বছর ধরে রোমান্টিক ছবিতে নাচগান করে বেড়িয়েছি। তাই আমার টিকে থাকার লড়াইটা অনেক বেশি কঠিন ছিল।

কিন্তু সেকেন্ড ইনিংসে তো বেশ অনেক রকম চরিত্রে অভিনয় করছেন?
বয়স অনুযায়ী চরিত্র করছি। হিরো থাকাকালীন নিজের একটা ইমেজের মধ্যে আটকে থাকতে হতো। কিন্তু এখন যা ইচ্ছে করতে পারি। ভিলেন, দালাল, সমকামী, নব্বই বছরের বুড়ো সবই করেছি। দর্শককে সেল্‌সম্যানের মতো সব রকমই অভিনয় দেখাচ্ছি।
কোনও না কোনওটা নিশ্চয়ই পছন্দ হবে।

‘কাপূর অ্যান্ড সন্‌স’এর জন্য সম্প্রতি পুরস্কৃত হয়েছেন। শ্যুটিংয়ের সময় ভেবেছিলেন আপনার চরিত্রটা এতটা জনপ্রিয় হবে?
শ্যুটিংয়ের সময় বড্ড বিরক্ত থাকতাম। অত প্রসথেটিক মেকআপ নিয়ে অভিনয় করতে অসুবিধে হতো। হয়তো তাই শাকুনের (বাত্রা, পরিচালক) সঙ্গে মাঝে মাঝেই তর্ক লাগত। কিন্তু ছবি-মুক্তির পর বুঝলাম, ও ঠিক ছিল আর আমি ভুল। তবে নতুন পরিচালক বলে তর্ক করব, সেটা নয়। পুরনো হলেও হয়তো করতাম।

পরিচালকরা এখন কতটা স্বাধীন? ‘অ্যায় দিল...’ কিংবা ‘রইস’এর ক্ষেত্রে নানা রকম বাধা এসেছে।
‘অ্যায় দিল...’ বা ‘রইস’এর সঙ্গে যেটা হল, সেটা খুবই দুঃখজনক। উরি হামলার পর নানা রকম নিয়ম শুরু হল। কিন্তু লোকে ভুলে যাচ্ছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে আচমকা পাকিস্তান চলে গিয়েছিলেন। তখন দেশে বার্তা দেওয়া হয়েছিল প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সেই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি অভিনেতাদের কাস্ট করা হয়েছিল। ভারতে ভাল অভিনেতাদের অভাব বলে নয়। দু’দেশের দর্শককে ধরে রাখার জন্য। হঠাৎ সীমান্তে কিছু হবে আর সেই ছবি ব্যান করে দেবে তা তো হয় না! চাইলে ও দেশের অভিনেতাদের ফেরত পাঠিয়ে দাও। কিন্তু তাঁদের ছবি ব্যান করাটা আমাদের বুলি করা। কত টাকা, কত মানুষের পরিশ্রম জড়িয়ে থাকে। হঠাৎ করে ছবি ব্যান করলেই হল! একটা সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে। বলতে পারে, এই দিনের পর থেকে আর পাকিস্তানি অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করা যাবে না। কিন্তু আচমকা পলিসি বদল করলে আমরা কেন মাশুল গুনব। হোয়াই ডিড মোদী হ্যাভ টু গো টু পাকিস্তান অ্যান্ড শেক হ্যান্ডস? হয় হাত মেলান, নয়তো নয়। মানুষকে বিভ্রান্ত করার কোনও মানেই নেই।

এটা বোধহয় শুধু পাকিস্তানি অভিনেতাদের কাস্ট করার সমস্যা নয়। সম্প্রতি সঞ্জয় লীলা বনশালীর সঙ্গে জয়পুরে...।
(প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই উত্তেজিত হয়ে...) ব্লাডি ননসেন্স! কিছু না জেনে একজনকে এভাবে আক্রমণ করার অধিকার কে দিয়েছে ওদের! দেশে কি পরিচালক-অভিনেতাদের একটুও নিরাপত্তা নেই? ফিল্ম   ফ্র্যাটার্নিটির সঙ্গে চিরকালই অন্যায় হয়ে এসেছে। কাগজে পড়লাম জয়পুরের শ্যুটিং বাতিল হয়ে গিয়েছে। প্রোডাকশনের ক্ষতিপুরণ কার বাবা দেবে এবার! মিস্টার বনশালীর উচিত ওদের বিরুদ্ধে কোর্টে কেস করা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি নানা বিষয়ে মতামত দেন। অনেকে কিন্তু ভাবছেন আপনি খুব তাড়াতাড়ি রাজনীতিতে আসছেন...।
আমার কোনও পলিটিক্যাল অ্যাজেন্ডা নেই। গাঁধী পরিবারের নামে দেশের সব সম্পত্তির নামকরণ কেন করা হবে বলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। তার মানে এই নয় যে আমি বিজেপি’র পা চাটি। আমি কিন্তু গোমাংস নিষিদ্ধ হওয়ার সময়ও একইভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। বিহারে মদ নিষিদ্ধ হওয়ার সময়ও তার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম। নিষেধাজ্ঞা কখনওই কাজ করে না। এতে বেআইনি কাজকর্ম বাড়ে, কালো টাকার লেনদেন বাড়ে, কিছু লোক বেআইনিভাবে মদ তৈরি করে, তাতে আরও বেশি সংখ্যার মানুষ মারা যায়। বিজেপি তো এইসব করছে। গাঁধী পরিবারের নামে আর কতদিন রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, বিল্ডিং নামকরণ হবে বলুন তো! দেশের উন্নতির জন্য অন্য কেউ কিছুই করেননি!

এরপর কী ধরনের ছবিতে কাজ করবেন?
‘কাপূর অ্যান্ড সন্‌স’ করে নিজের ফ্র্যাঙ্কেস্টাইন তৈরি করেছি, কোনও চরিত্রই পছন্দ হয় না। অবশ্য আমার বয়সে খুব বেশি ইন্টারেস্টিং চরিত্রের সুযোগও মেলে না। হলিউডে ৫০ বছরের পর অভিনেতারা তাঁদের সেরা চরিত্রগুলো পান। এখানে ওই বয়সে আমাদের রিটায়ার করতে হয়। তবে মাসের পর মাস বাড়িতে বসে থাকতে আমার অসুবিধে নেই। ভাল চরিত্র পেলে তবেই করব।-এবেলা
৩০ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে