বিনোদন ডেস্ক : মিডিয়া জগতে আলোচিত-সমালোচিত মডেল, ঢাকাই ছবির আইটেম গার্ল জ্যাকলিন মিথিলা চট্টগ্রামে বাবার বাসায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কেন এই আত্মহত্যা, কী তার নেপথ্য কাহিনি?
নেপথ্য কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ বারিক বিল্ডিংয়ের নিজ বাসায় আত্মহত্যা করলেও ঘটনাটি জানাজানি হয়েছে মঙ্গলবার। পারিবারিকভাবেও বিষয়টি এত দিন গোপন রাখা হয়েছিল। প্রশাসনকে না জানিয়ে লাশও দাহ করে ফেলা হয়। তবে গত শুক্রবার বিকেলে মিথিলার বাবা স্বপন শীল নগরীর বন্দর থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মিথিলার বাবা স্বপন শীল বলেন, ‘১০-১২ দিন আগে আমার মেয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বাসায় আসে। বাসায় এসে সে আমাকে ফটিকছড়ির ধুরং গ্রামের উৎপল রায় নামের এক তরুণের সঙ্গে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে হয়েছে বলে জানায়। সে আরো জানায়, উৎপলের পরিবার তার বিয়ের বিষয়টি মেনে নেয়নি এবং তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন তাকে নানাভাবে ফোন করে হুমকি দিচ্ছে, অপমান করছে। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে শুক্রবার সকালের দিকে আমার বাসায় সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করে সে। সুইসাইড নোটে মিথিলা তার স্বামী ও স্বামীর আত্মীয়স্বজনদের নিয়মিত অপমানের কথা লিখে গেছে এবং এ কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে উল্লেখ করে।’
জানা গেছে, আত্মহত্যার আগে জ্যাকলিন মিথিলা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তার এক বন্ধু জানান, মিথিলা এর আগেও অনেকবার ফেসবুকে আত্মহত্যার কথা জানিয়েছিল। তাই তার আত্মহত্যা করার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। এবার সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করলেও সেই খবরটি কারো কাছে ছিল না।
চট্টগ্রাম বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম জানান, মিথিলা আত্মহত্যা করেছেন বলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন তার পিতা। এই আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, স্বামীর সঙ্গে তার ঝগড়া। ডায়েরিতে মিথিলার প্রকৃত নাম দেওয়া হয়েছে জয়া শীল, বয়স ২২ বছর।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, মিথিলা বিবাহিত ছিলেন। তার স্বামীর নাম উৎপল রায়। স্বামীর বাড়ি ফটিকছড়ির ধুরং ইউনিয়নে। স্বামীর সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া লাগত। এই কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ডায়েরিতে তার পিতা উল্লেখ করেছেন। আত্মহত্যার পর ময়নাতদন্ত শেষে তাকে চিতায় পোড়ানো হয়েছে বলে জেনেছি। মিথিলার বাবা স্বপন শীলও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মিথিলা মারা গেছে। গলায় দড়ি দিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। এর আগে সে ঘুমের বড়ি খেয়েছিল।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে খোলামেলা ছবি পোস্ট ও বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে বেশ আলোচিত ছিলেন জ্যাকুলিন মিথিলা। আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে এ সংন্ত্রান্ত কয়েকটি পোস্টও করেন মিথিলা।
৩০ জানুয়ারি রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘কালকে আমি আত্মহত্যা করব। কেউ আমাকে প্রত্যাখান করে নাই। আমিও কাউকে প্রত্যাখান করি নাই। কিন্তু আমি আত্মহত্যা করব।’ এছাড়া, ৩১ জানুয়ারি সকাল ৭টা ২৮ মিনিটে লিখেন, ‘ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে পা বাড়াচ্ছি।’
গত শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামের বন্দর থানার নিজ বাড়িতে গলায় ওড়ানা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। ঘটনার ৪ দিন পর আজ মঙ্গলবার বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ময়নুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত শুক্রবার নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেছেন মডেল জ্যাকুলিন মিথিলা। ঘটনার দিনই তার লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিলো। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওসি আরও জানান, জ্যাকুলিনের লাশের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে ‘আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের পর তার ভালোবাসা কমে গেছে।’ এ ঘটনায় থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।
০৮ ফেব্রুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসএস