শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ০১:২৯:৫৯

বাংলাদেশে আসলে আমি থাকবো কোথায় : প্রিয়তি

বাংলাদেশে আসলে আমি থাকবো কোথায় : প্রিয়তি

বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশে নিজের কোন থাকার জায়গা নেই মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল মাকসুদা আক্তার প্রিয়তির। তার বিধবা মায়ের শেষ সম্বল একখানি বাড়িও ক্ষমতাবানরা দখল করে নিয়ে নেয়। ২০ বছর ধরে বাস করা স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি উদ্ধারে কোর্টে মামলা লড়তে লড়তেই পৃথিবী ছাড়েন প্রিয়তির মা। বাড়িটিতে আর থাকা হয়নি।

পিতা-মাতার ভিটেবাড়ি হারিয়ে অবশেষে সবার অনুরোধে প্রিয় জন্মভূমির রাজধানী ঢাকায় একখণ্ড জমি কিনেছিলেন প্রিয়তি। আশা ছিল বাড়ি করবেন। কিন্তু সেটিতেও বাড়ি করার সুযোগ হয়নি আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত প্রিয়তির। এ নিয়ে শুক্রবার রাতে ফেসবুকে এক পোস্টে আক্ষেপ প্রকাশ করেন অসংখ্য আন্তর্জাতিক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ নারী।  প্রিয়তির সেই পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

''আপনারা সবাই জিজ্ঞেস করেন, বাংলাদেশে কেন তেমন একটা আমার আসা হয় না। সত্যি উত্তরটা একটু তিক্ত হলেও বলি, বাংলাদেশে আসলে আমি থাকবো কোথায়? মায়ের একটা বাড়ি ছিল যা প্রায় ২০ বছর মায়ের অধীনে ছিল কিন্তু যখন লোকাল ক্ষমতাবান মানুষগুলো দেখল আমার মা একা বিধবা নারী, তার আসে পাশে কেউ নেই, মেয়ে একটা বিদেশে থাকে , তখন আর কি , ওরা সব কাগজপত্র নকল করে বাড়িটা দখল করে নিয়েছে।

আইনের আশ্রয় মা নিয়েছিলেন, তিন বছর মামলা লড়তে লড়তে এক সময় মারাও যান তিনি। হাইকোর্ট পর্যন্ত তিনি মামলা লড়েছেন একা অল্প শিক্ষিতা গ্রামের অসহায় বিধবা মহিলা। কিন্তু উনার জানা ছিল না তার ভাড়া করা উকিল- ব্যারিস্টাররা অপর পাশ থেকে ঘুষ খেয়ে আমার মায়ের কেইসটি প্রতিবার হারিয়ে দেন। আত্মীয় – স্বজনদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছিলেন সাহায্যের জন্য কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি বরং তিরস্কার করেছেন। মা ফোনে কাঁদতেন আমার সাথে। আমি নিজেকে এত অসহায় আর অবলা মনে করতাম, যার ব্যাথা এখনো কুড়ে কুড়ে খায় আমাকে, এই যে আমার হাত কাঁপছে এই কথা গুলো টাইপ করার সময়। ''

মা চেয়েছিলেন আমি যেন বাংলাদেশে একটা বাড়ি করি নিজের আয় করা টাকা দিয়ে । নিজের সর্বশ্ব দিয়ে কিনেছিলাম একটা জায়গা বারিধারাতে। ভেবেছিলাম নিজের জন্য একটা থাকার ঘর করবো বাংলাদেশে। ফ্লাইং কোর্স করার সময় টাকার প্রয়োজন পড়ে , ভেবেছিলাম অর্ধেক জমি বিক্রি করে কোর্স শেষ করবো আর অর্ধেক জমিতে নিজের জন্য বাংলাদেশে থাকার জন্য ঘর করবো।

বাংলাদেশে গিয়ে দেখি, ওই জমিও দখল করে বসে আছে ক্ষমতাবান গ্যাং- স্টার, আমার কোন ক্ষমতা নেই ওই জমির উপর । পরিবর্তীতে না পেরে, পৈতৃক সব সম্পত্তি বিক্রি করে ফ্লাইং কোর্স করা শুরু করি, পরবর্তীতে ফ্লাইং টেস্ট এর সময় ফী এর কমতি পড়ায় মায়ের দেয়া সব গহনা বিক্রি করতে হয়েছে। কারন আমার ফ্লাইট ট্রেনিংয়ের সময় আমার দুইটা দুধের বাচ্চা ছিল, যাদের কে আমার বেবিসিটার এর কাছে রাখতে হতো, যার খরচও ব্যয়বহুল ছিল আমার জন্য। ''

''আমি এই কথাগুলো কারও সিম্পাথি পাওয়ার জন্য বলছি না। অনেকে হয়তো আবেগের বশে বলতে পারেন, '' কেন আপু, আমরা আছি না? আমাদের বাসায় থাকবেন। '' প্রশ্নটা বা দুঃখটা, আমি কার বাসায় থাকবো, তা নয়। আমার ভাইয়ের বাসা আছে, আমি আমার বাচ্চারা ওইখানে উঠতেই পারি। কিন্তু আমি আমার নিজ দেশে আরেক জনের বাসায় মেহমান হয়ে, আরেকজনের গতানুগতিক সাংসারিক গুছানো জীবনে মেহমান হয়ে কেন থাকবো যেই খানে আমার সব কিছু ছিল। কেন আমার নিজের দেশে নিজের ঘর থাকবে না, যেখানে আমার সব কিছু ছিল? আমি কি ডিজারভ করি না, মেহমান হয়ে নয় , নিজের ঘরে নিজের মতো যত দিন খুশি থাকার? আমার গুছিয়ে কথা বলার ভাণ্ডার আপাতত ফুরিয়ে গিয়েছে। আপনি শুধু নিজেকে আমার জায়গায় রাখুন, স্পষ্ট সব দেখতে পারবেন আমার অনুভুতিগুলো। ''

''দুঃখিত বাংলাদেশ, তোমার গর্ভে জন্ম হওয়ার পর এই গুলোই পেয়েছি। ঘর থেকেও পাইনি। তবে হ্যাঁ, সবার ভালোবাসা হাজার মাইল দূরে থাকার পরও পাচ্ছি, যার জন্য অনেক কষ্ট ভুলে যাই। আরও ভুলে যাই যখন দেখি, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী সম্মান পান না , সোশ্যাল সিকিরিউটি পান না, অনেক অন্যায় আর জুলুমের শিকার হন, তার সাথে তুলনা করলে আমি তো কিছুই না। ''

''দুঃখিত, লম্বা একটি পোস্ট এর জন্য আর আপনাদের প্রশ্নের উত্তরটি সংক্ষিপ্ত করতে না পারার জন্য। ''

''জয় হোক ভালোবাসার ! জয় বাংলাদেশ !!''

১৮ ফেব্রুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে