বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭, ০৯:২৬:৪০

আমার পাঁচ ভক্তের গল্প

আমার পাঁচ ভক্তের গল্প

বিনোদন ডেস্ক: দেশে ও দেশের বাইরে অসংখ্য ভক্ত মোশাররফ করিমের। ভক্তদের নিয়ে এই জনপ্রিয় অভিনেতার নানা রকম অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল এমন পাঁচ ভক্তের গল্প। একটু দোনোমনা করে মোশাররফ করিম অবশেষে রাজি হলেন। তবে শুরুতেই বলে নিলেন, এত ভক্তের ভেতর থেকে পাঁচজন আলাদা করা কঠিন। অনেক ঘটনা আছে ভক্তদের নিয়ে। তাঁদের দিয়েই তিনি আজকের মোশাররফ করিম।

মোশাররফ করিমকে জড়িয়ে ধরে অভিজিতের কান্নামোশাররফ করিমকে জড়িয়ে ধরে অভিজিতের কান্নাছুঁয়ে গেছে কলকাতার অভিজিতের কান্না

গত বছরের শেষ দিকের ঘটনা। আমার ভাগনে মুরসালিন শুভর কাছ থেকে শুনলাম, কলকাতা থেকে অভিজিৎ দত্ত নামে একটা ছেলে এসেছে আমার সঙ্গে দেখা করতে। ওকে যেন আলাদা করে একটু সময় দিই। ভাগ্য ভালো, ও আসার পরের দিন হুট করে আমার শুটিং বাতিল হলো। শুভকে বললাম, অভিজিৎকে নিয়ে উত্তরার একটি রেস্তোরাঁয় আসতে। আমরা আগেই সেখানে চলে গেলাম। খানিক বাদে ভাগনের সঙ্গে একটা ছেলে ঢুকল রেস্তোরাঁয়। আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হু হু করে কান্না! আমি কতভাবে থামানোর চেষ্টা করি, কিন্তু থামেই না। ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় আমাকে ধরে কেঁদেছে ছেলেটা। একটু স্থির হওয়ার পর গল্প করলাম ওর সঙ্গে। ওদের বাড়ি নদীয়াতে, থাকে কলকাতায়। পড়াশোনা শেষ করে এখন ব্যবসা করছে। আমার এমন কোনো নাটক নাই যে সে দেখেনি। কলকাতায় আমাকে নিয়ে ফ্যান ক্লাব খুলেছে। সেই ক্লাবের সদস্য বাড়ানোর জন্য সবাইকে আমার নাটক দেখায়। ওর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে। কিছুদিন আগে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। সেখানেও হাজির অভিজিৎ। তা-ও বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে!

মোশাররফের চরিত্রে অভিনয় করে ভিডিও নির্মাণ করেন প্রান্তমোশাররফের চরিত্রে অভিনয় করে ভিডিও নির্মাণ করেন প্রান্তআমার চরিত্রে অভিনয় করে প্রান্ত

প্রান্ত আমার একটা পাগলা ভক্ত। ওর বাড়ি ফেনীতে। পড়ে ক্লাস টেনে। ও যেটা করে, আমার অভিনীত নাটকের অংশবিশেষে আমার জায়গায় ও অভিনয় করে। আমার মতো করে সংলাপ দেয়। পোশাক এমনকি সাজসজ্জাও আমার মতো করে। একদিন আমি দেখে তো অবাক। সিকান্দার বক্স, অ্যাভারেজ আসলাম নাটকের বিভিন্ন অংশ ও অভিনয় করেছে। একদিন এল আমার সঙ্গে দেখা করতে। জানতে চাইলাম, এমন করে কেন? ওই এক কথা। ‘আমার খুব ভালো লাগে। সারাক্ষণ আপনার কথা ভাবি। এই কারণে অভিনয় করে আপনার মতো হওয়ার চেষ্টা করি।’

িপ্রয় তারকার সঙ্গে সেলফি তুলছেন জয়িপ্রয় তারকার সঙ্গে সেলফি তুলছেন জয়নাম পরিবর্তন করে মোশাররফ জয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ছেলেটার নাম জয় আহমেদ। কিন্তু ও ফেসবুক আইডি চালায় মোশাররফ জয় নামে। ওকে এলাকার সবাই নাকি এই নামেই ডাকে। আমার ভক্ত, এটা বোঝাতেই এই নাম ধারণ করেছে। ওকে নিয়ে একটা ঘটনার কথা বলি, একদিন টিকাটুলিতে শুটিং করছি। তিনজন ছেলে এল আমার সঙ্গে দেখা করতে। তিনজনই আমার ভক্ত। ওদের একজন মোশাররফ জয়। কথা প্রসঙ্গে জানলাম, জয় আমার কথা এত ভাবত যে ওকে বেশ কয়েকবার মনোচিকিৎসকের কাছে যেতে হয়েছে। ছেলেটা আমাকে ডাকে ‘গুরু’ বলে। জানাল, ডাক্তারের কাছে গিয়ে নাকি ও বলেছে, ‘সারাক্ষণ মাথার মধ্যে গুরু মোশাররফ করিম ঘোরে। এটা থেকে মুক্তি চাই।’ সব শুনে ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন সবার আগে আমার সঙ্গে দেখা করার। আমিও কিছুক্ষণ সময় দিলাম। ছবিও তুলল। ঘটনা এখানেই শেষ না। ওরা সবাই মিলে ফেসবুকে একটা সিক্রেট গ্রুপ চালায়। যেখানে আমাকে নিয়ে নাকি সারাক্ষণ কথা হয় ওদের।

গলায় দড়ি নিয়েই ছবি তুললেন আরেক ভক্তগলায় দড়ি নিয়েই ছবি তুললেন আরেক ভক্তগলায় দড়ি দেওয়া থেকে রক্ষা

ঘটনাটা অল্প কিছুদিন আগের। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গিয়েছিলাম নূর ইমরান মিঠুর কমলা রকেট নামে একটি সিনেমার শুটিংয়ে। পুরো সিনেমাটার শুটিং হয়েছে লঞ্চে। যখনকার ঘটনা বলছি, তখন লঞ্চ ঘাটে দাঁড়িয়ে ছিল। আমিসহ কয়েকজন কেবিনে বসে আছি। বাইরে থেকে একটু চিৎকার-চেঁচামেচি কানে এল। হঠাৎ আমার এক সহশিল্পীর মা বাইরে থেকে ঘুরে এসে আমাকে বললেন, ‘আপনি একটু নিচে যান। অবস্থা বেশি ভালো না।’ আমি জানালা দিয়ে নিচে তাকালাম। দেখি একটা ছেলে গলায় রশি লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রশির আরেক প্রান্ত ওপরে বাঁধা। চিৎকার করে বলছে, মোশাররফ ভাই নিচে এসে আমার সঙ্গে কথা না বললে এবং ছবি না তুললে আমি গলায় ফাঁস দেব।’ সে আয়োজনও চূড়ান্ত। আমি দ্রুত গিয়ে ওর দাবি মেটালাম। অনুরোধ করলাম, এ ধরনের কাজ যেন আর না করে। আমি ছেলেটার নাম ভুলে গেছি। যত দূর মনে পড়ে, ওর বাড়ি ওই এলাকাতেই।

তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে

এই ঘটনাটা মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত প্রজাপতি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পরপরই। আমার স্ত্রী জুঁইকে (রোবেনা রেজা) নিয়ে বনানীতে একটা কাজে গিয়েছি। হঠাৎ একটা মেয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। আমি খানিকটা বিব্রত। তারপর তার আবদার শুনে আরও অবাক। বলল, প্রজাপতি সিনেমায় আমি মৌসুমীর দিকে যেভাবে তাকিয়ে ছিলাম, সেভাবে যেন তার দিকে অতটুকু সময় তাকিয়ে থাকি। আমি কী করব বুঝতে পারছি না। সে নাছোড়বান্দা। তাকাতেই হবে। পরে তাকে বুঝিয়ে বললাম, আমি তো ‘ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান, জিরো অ্যাকশন’ বলা ছাড়া কারও দিকে ওভাবে তাকাতে পারি না। আমার ওইটা লাগবে। এখন যেহেতু সেই ব্যবস্থা নেই, তাই এবারের মতো মাফ চাই। মেয়েটি কী বুঝল কে জানে। রাগ করে আমার সামনে থেকে চলে গেল।

ভক্তদের প্রতি মোশাররফ করিমের অনুরোধ

*  এটা আমার বড় পাওয়া যে ভক্তরা আমাকে ভালোবাসেন। কিন্তু ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে নিজের কোনো ক্ষতি করবেন না, প্লিজ। ভালোবেসে আমার অভিনয় দেখলেই খুশি।

*  ভালোবেসে কোনো পাগলামি করবেন না। আপনার পাগলামিতে অন্য কারও সমস্যা হোক—এটা আমি চাই না।

*  ছোটবেলা থেকেই আমার ছবি তোলার অভ্যাস কম। কোনো ভক্তের সঙ্গে ছবি তুলতে না পারলে মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই।

*  জন্ম ও বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে একজন মানুষের দায়িত্ব হলো নিজের কাজটুকু ঠিকমতো করা। নিজেকে সমৃদ্ধ করে আপনাকে দিয়ে কী সম্ভব, সেটা খুঁজে বের করে সেই লক্ষ্যে চলা। এই কাজটুকুর মাধ্যমেই ভক্তরা তাঁদের সেরাটুকু করবেন।

*  কারও মোশাররফ করিমের মতো হওয়ার দরকার নেই। নিজের মতো হোন। নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তুলুন। মনে রাখবেন, আমি আমার ভক্তদের প্রচণ্ড ভালোবাসি।-প্রথম আলো
অনুলিখিত
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে