পরিস্থিতি সামলালেন শাকিব, কিন্তু শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ

নিপু বড়ুয়া : শাকিব খান-অপু বিশ্বাসের প্রেম, বিয়ে ও সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সিনেপাড়ায় গুঞ্জন চলছিল। অবশেষে সোমবার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভে এসে হাঁড়ির ঢাকনা সরিয়ে দেন অপু বিশ্বাস। অপু দাবি করেন, ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল শাকিব খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তানও আছে।

স্ত্রী এবং সন্তানকে শাকিব আনুষ্ঠানিকভাবে মর্যাদা দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন অপু। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার শাকিব জানান, আব্রাহাম খান জয় আমার ছেলে। আমি তার দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু অপুর নয়।

শাকিবের এমন বক্তব্যে সমালোচনা শুরু হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। একদিন পর মঙ্গলবার শাকিব ভোল পাল্টে অপুকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করেন। যা গণমাধ্যেমে প্রকাশ পায়। বিয়ে, সন্তান নিয়ে কেন শাকিবের লুকোচুরি? এমন প্র্শ্নই সবার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আর সেইসব প্রশ্নের উত্তর জানাতে মঙ্গলবার রাতে একটি টিভি চ্যানেলের লাইভে কথা বলেন শাকিব খান। অনুষ্ঠানে ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এই চিত্রনায়ক। এ নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শাকিব বলেন, ‘আমার ছেলে আব্রামের জন্যই অনেক কিছু মেনে নিয়েছি। বিকজ আই লাভ মাই সন। অপু যেহেতু আমার স্ত্রী, তাই বিতর্ক আর না বাড়িয়ে আমি ওকে মন থেকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কারণ অপু আমার স্ত্রী এবং সন্তানের মা।

এরপর তিনি যোগ করে বলেন, মাশাআল্লাহ আমার ছেলে দেখতেও খুব সুন্দর হয়েছে।’ বিয়ে সন্তান নিয়ে কেন লুকোচুরি প্রসঙ্গে শাকিব বলেন, অপুর ক্যারিয়ারের কথা ভেবেই বিষয়টি গোপন রাখতে হয়েছিল।

আক্ষেপের সুরে শাকিব বলেন, ‘ব্যাপারটা আরও সুন্দর হতে পারতো। আমার ছেলেকে এমন প্রেজেন্টেশন দিতে চাইনি। আমি চেয়েছি আমার ছেলেকে শাকিব খানের মতোই মানুষের সামনে প্রেজেন্টেশন দিতে। কিন্তু সেটি আর হলো না।’

অনুষ্ঠানে শাকিব বলেছেন, ‘অপু আমার ছেলের মা। অফকোর্স সে আমার ওয়াইফ। কারণ, আমার ছেলে তো অবৈধ নয়। আমার সন্তানের মা হিসেবে সে অনেক ওপরে। বাট সাম হাউ- কিছু অশুভ মানুষ, কাছের মানুষ অপুকে দিয়ে এই বিব্রতকর কাজটা ঘটিয়েছে। এটা আমি আগে বুঝতে পারিনি।’

অপুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন,  আপনারা খেয়াল করবেন, অপু নিজেই বলেছেন আমি সময় দিয়েছি। বাচ্চাকে আদর করেছি। টাকা দিয়েছি। পারিবারিকভাবে সবাই বিষয়টি অবগত। সে আসলে আমার সন্তান কিংবা সংসার চায়নি। চেয়েছে তার ক্যারিয়ার রক্ষা করতে। আমি নিজেও কোরবানির ঈদে তাকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছিলাম। বাট সেটা তো আর হলো না। আমার ক্যারিয়ারের চেয়ে অপু তার নিজের ক্যারিয়ারকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিলো।

তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে এরপর আর কখনও আমাদের জুটি হয়ে পর্দায় আসা হবে না। কারণ, স্বামী-স্ত্রী নায়ক-নায়িকা হতে পারে না। এটা আমাদের দর্শক নেবে না।’

শাকিব–অপু একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। দুজনই একই দোষে দুষ্টু। কারণ দুজনই ক্যারিয়ার রক্ষার জন্যই বিয়ে সন্তানকে আড়ালে রেখেছিলেন। শাকিবের লাইভ অনুষ্ঠানে ফোনে যোগ দিয়ে অপু প্রশ্ন করেন, আমাদের সর্ম্পকে এই অনুষ্ঠানে কথা হচ্ছে। ব্যাকড্রপে কেন বুবলীর ছবি রাখা হলো? একইসঙ্গে বুবলীর দেয়া স্ট্যাটাসের বিষয়ে শাকিবের মন্তব্য জানতে চেয়েছেন।

অপুর এমন প্রশ্নে খানিকটা বিব্রতই হয়েছেন শাকিব। বুদ্ধিমানের মতো সবকিছু সামলেও নিয়েছেন। কৌশলে প্রযোজকের ওপর সবকিছু চাপিয়ে দিয়ে বুবলির পক্ষে সাফাই দিলেন তিনি। শাকিব খানের লাইভ অনুষ্ঠান দেখে অনেকেই বাহবা দিলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা সমালোচনাও হয়েছে।

অপু এবং সন্তানকে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি যতটা সন্মানিত হয়েছেন, তার চেয়ে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিতে পেরে সমালোচিত হয়েছেন। অপুকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়ার ঘোষণা, তাকে ‘ক্ষমা’ করে দেওয়া, বুবলির পক্ষে সাফাই—সব মিলিয়ে অস্পস্ট বক্তব্যে ছিল শাকিব খানের। অপুর বিরুদ্ধে অভিযোগও তুলেছেন তিনি।

কারণ ভক্ত অনুরাগীদের মনে প্রশ্ন থেকেই গেল, ভবিষ্যতে অপুকে নিয়ে সংসার করবেন কিনা? স্ত্রী হিসেবে অপুকে কতটা মেনে নিয়েছেন? এর পরিষ্কার জবাব শাকিব দিতে পারেননি। দুইদিনের চলমান বিতর্কে ঠিকই সামলে নিয়েছেন্ শাকিব। কিন্তু শাকিব-অপু বিতর্কের শেষ কোথায়। এ জন্য ভক্ত অনুরাগীদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিষয়টি যেন ’শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ।’
১২ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস