রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭, ০২:৫৮:১৪

এবার আজানের ভিডিও ছাড়লেন 'বেপরোয়া' সোনু নিগম

এবার আজানের ভিডিও ছাড়লেন 'বেপরোয়া' সোনু নিগম

বিনোদন ডেস্ক: নিজের বক্তব্যের সপক্ষে এবার আজানের ভিডিও টুইটারে ছাড়লেন ভারতীয় গায়ক সোনু নিগম। এতে বোঝা গেল, মাথা ন্যাড়া করেও তিনি এই বিতর্কে থেকে সরতে পারছেন না বা চাইছেন না। ভিডিওর সঙ্গে তিনি লিখেছেন, গুড মর্নিং ইন্ডিয়া।

ভোরে এলাকার মসজিদের মাইকে আজানের সুরে তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে বলে গায়ক সোনু ক্ষোভ প্রকাশ করে টুইট করেছিলেন। আজানের শব্দে অসময়ে তার ঘুম ভেঙে যায়- এই অভিযোগে একে ‘গুণ্ডামি’ বলেও আখ্যা দেন। বিষয়টি ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানরা ভালোভাবে নেয়নি। এমনকি সোনুর প্রতিক্রিয়ার ধরণে এবং শব্দের ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানান অন্যান্য ধর্মানুসারীরাও।   প্রতিবাদ উঠে বলিউড তারকাদের কাছ থেকেও। তবে তারপক্ষেও দাঁড়ান অনেকে।

এরই মধ্যে বিবিসিসহ বেশ কয়েকটি মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা সোনুর টুইটের পর বিষয়টি সরেজমিন তদন্তে যান তার মহল্লায়। তারা ভোর বেলা ফজরের আজান শুরুর আগে থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করেন- কিন্তু তারা আজানের শব্দ শোনেননি বলে মিডিয়ায় প্রকাশ করেন।

ওইদিনকার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বিবিসি জানায়, সাংবাদিকদের আগ্রহ ছিল সোনুর ফ্ল্যাট থেকে আজানের শব্দ কেমন মাত্রায় শোনা যায় তা পরীক্ষা করা। ভোর ৫টার সময় তারা সোনুর মুম্বাই শহরের আন্ধেরি এলাকার বাড়ির সামনে জড়ো হন। কিন্তু তারা আজানের শব্দ শুনতেই পাননি। এমনকি সোনুর প্রতিবেশী লতা সচদেব জানান, তিনি কখনো আজান শুনতে পাননি। একই কথা বলেন কিরণ ওয়াসান নামের অপর প্রতিবেশী।

সাংবাদিকরা দেখতে পান, ওই সময় সোনুর ফ্ল্যাটের আলো নেভানো ছিল। বাইরে দাঁড়ানো ছিল পুলিশের গাড়ি। বিবিসির সাংবাদিক জানান, অন্য সংবাদকর্মীরা চলে গেলেও তিনি আরো আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেন। কিন্তু গাড়ি চলাচলের শব্দ ছাড়া কিছুই শুনতে পাননি।
এছাড়া সোনুর বাসা যে এলাকায় সেখান থেকে মসজিদগুলো বেশ দূরে অবস্থিত।

বিবিসির সাংবাদিক জানান, ওই এলাকায় তিনটি মসজিদ রয়েছে। তার সবগুলোই সোনুর বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার দূরত্বে। সোনুর বাড়ি বাম দিকে আধা কিলোমিটার দূরে রয়েছে মাদ্রাসা তালিমুল কুরান ট্রাস্ট মসজিদ। সেখানে আজান হয় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে। মসজিদের ট্রাস্টি মাহবুব খান জানান, এ এলাকায় সোনু এসেছেন বছর চারেক আগে। কিন্তু তারা আছেন প্রায় ৩৫ বছর যাবত। কেউ কখনো আজান নিয়ে সমস্যার কথা জানাননি। আজানের শব্দ এতদূর যায়ও না। লোকজনের কাছে শুনে এসেছেন তারা আজান দ্বারা উপকৃত হন। কিন্তু সোনু সে পরিবেশ নষ্ট করেছেন। এটা তার প্রচারণা কৌশল।

সোনুর বাড়ির ডান প্রান্তে থাকা মাদ্রাসা তুল-সালাই ট্রাস্টের একজন জানান, তারা আজানের সময় লাউডস্পিকার ব্যবহার করেন না। এছাড়া ভোর ৫টায় আজান হয় মাদ্রাসা-ই-নবাবিয়ার মসজিদে। তাও শুনতে পাননি সাংবাদিকরা। এদিকে ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইনরিটি ইউনাইটেড কাউন্সিলের সহসভাপতি সৈয়দ শাহ আতেফ আলি আল কাদেরি কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, আজান নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন সোনু নিগম৷ যদি কেউ তার মাথা মুড়িয়ে তার গলায় জুতোর মালা পরিয়ে রাস্তায় ঘুরাতে পারে তাহলে তাকে ১০ লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দেবেন তিনি। এমন ঘোষণার পর সোনু রস্কারের টাকা দাবি করে নিজেই মাথা ন্যাড়া করে ফেলেন। তবে পুরষ্কার ঘোষণাকারী জানান, শুধু মাথা ন্যাড়া নয়, গলায় জুতোর মালা পড়িয়ে পুরো ভারতবর্ষ ঘোড়াতে হবে তাকে- তারপরই মিলবে টাকা।

এরমধ্যে গত শনিবার ফতোয়া ঘোষণাকারীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে সোনুর পক্ষাবলম্বনকারী একটি গ্রুপ।
এতসব ঘটনাবলীর ধারাবাহিকতায় সোনু আত্মপক্ষ সমর্থনে ফজরের আজানের ভিডিও আপলোড করেন নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে।
সোনু অবশ্য এটাও বলেন, আজান নিয়ে তার আপত্তি নেই, আপত্তি লাউড স্পিকারে। তবে বলিউডের মুসলিম অভিনেতা রাজা মুরাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, এখন সব ধর্মের অনুষ্ঠানাদিতে লাউড স্পিকার ব্যবহার হয়।

এসব ধর্মের শুরুর দিকে কী হতো? তার মতে, ৭০ বছর হয়ে গেছে ভারত স্বাধীন হয়েছে কিন্তু মুসলমানরা কেউ তো বলেনি মন্দিরে শঙ্খ ধ্বণি কেন দেওয়া হয়, ঘণ্টি কেন বাজানো হয়... গণপতি পাপ্পার মিছিলের প্রচলন যখন হয় তখন তো লাউড স্পিকার ছিল না। এখন তাতে ব্যবহার হয়। দুর্গাপূজায় লাউড স্পিকার ব্যবহার হয় এখন কিন্তু মা দুর্গার সময়ে তো লাউড স্পিকার ছিল না... সোনুর মতো খ্যাতিমান গায়কের এই ভাষায় বলা উচিৎ হয়নি... শিল্পীরা মনের দিক দিয়ে কোমল হন... সব ধর্ম-সম্প্রদায়ের লোক তাদের ভালোবাসে, তারা শিল্পীর ধর্ম দেখে না, তারা শিল্পকে বিচার করে, এই দেশে আমির খান, সালমান খান, শাহরুখ খানকে লোকজন ভালবাসে- তারা তাদের ধর্ম দেখে না, দেখে শিল্পগুণ... শিল্পীরা তো আগুন নিভিয়ে থাকেন, জ্বালান না... সোনু যখন মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, শারজা, কাতার, মাস্কাট যান শো করতে তখন সেখানকার আজানের শব্দ তো আপনার কাছে খারাপ লাগে না! সেটা বিজনেসের জন্য বলে সমস্যা হয় না! আর এখানকার মসজিদের আজানে আপনার কষ্ট হয়! এটা আফসোসের কথা।

রাজা মুরাদ অবশ্য বলেন, যদি সোনুর নিজের মন থেকে অনুভব হয় যে তিনি ভুল করেছেন তবে তার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। অন্যথায় কারও জোর বা চাপে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ নয়। কিন্তু সোনু যে তার আগের টুইটে অটল আছেন এটা আজানের ভিডিও আপ করে বুঝিয়ে দিলেন। অর্থাৎ আজান ইস্যু নিয়ে তিনি পিছু হটছেন না।

টুইটারে এ ভিডিও যুক্ত করার পর অনেকেই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বেপরোয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, সোনুর আপ করা আজানের ভিডিও প্রসঙ্গে অনেকে বলছেন, ওই আজানের সুরে সোনুর ঘুম ভেঙেছে নাকি আজানের শব্দ শোনা ও তা রেকর্ড করার জন্য সোনু অপেক্ষা করছিলেন রাত জেগে ক্যামেরা হাতে- সে প্রশ্নটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে ফের। আর প্রায় অন্ধকারে রেকর্ড করা ওই ভিডিও দেখে বোঝার উপায় নেই ওটা আসলে কোন জায়গা থেকে নেওয়া হয়েছে।
২৩ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে