রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭, ০৩:৩৬:০০

'ব্যক্তিগত আক্রোশ দাবি করা শাকিবের একটি কৌশল'

'ব্যক্তিগত আক্রোশ দাবি করা শাকিবের একটি কৌশল'

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই ছবির চিত্রনায়ক শাকিব খানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বয়কট করেছে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৩টি সংগঠন। গতকাল শনিবার (২৯ এপ্রিল) এফডিসিতে অবস্থিত চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে শাকিবকে বয়কটের কথা জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়েছে, ‌‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনসমূহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং কলাকুশলীদের নিয়ে এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয় আজ। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, চিত্রনায়ক শাকিব খান যেহেতু দেশের চলচ্চিত্র পরিচালকদের অসম্মান ও হেয় প্রতিপন্ন করে জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে বক্তব্য দিয়েছেন এবং বর্তমানেও একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন সেহেতু চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কুশলীরা মনে করেন প্রকারান্তরে তিনি দেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সব কুশলীকে অপমান ও তুচ্ছজ্ঞান করছেন।

কারণ পরিচালকই হলেন ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’। তাদের অপমান করা মানে সব কুশলীকে অপমান করা। তাই আজ থেকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য শাকিব খানের সঙ্গে কোনো চলচ্চিত্রের শুটিং ও ডাবিং কাজে অংশগ্রহণ করবেন না।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। শাকিবের দাবি পরিচালক বদিউল আলম খোকন শিডিউল না পেয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে শাকিবের বিরুদ্ধে সবগুলো সমিতিকে ব্যবহার করছেন। এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শাকিবের প্রতি আমার কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই। থাকার কারণও নেই। শাকিবের সঙ্গে আমার কোনো ছবি নিয়ে শিডিউলজনতি সমস্যাও নেই। আমি অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছি আমার নতুন ছবিটিতে কাজ করবে আরিফিন শুভ। আর একটি ছবিতে মাহি ও সজলকে নিয়ে কাজ করেছি।

শাকিবকে নিয়ে কোনো ছবি করে আমি পাঁচ বছর আটকে থাকতে চাই না। তবে সে কেন বারবার শিডিউল দেয়নি বলে দাবি করছে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা শাকিবের পুরনো অভ্যাস। আমার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত আক্রোশকে শিরোনামে রেখে তার বিরুদ্ধে যে পুরো ইন্ডাস্ট্রি ক্ষেপে উঠেছে সেটা হালকা করতে চাইছে। একটা কৌশল বলা চলে।’

এই পরিচালক নেতা আরও বলেন, ‘আমি পরিচালক সমিতির মহসচিব। আমার একটা ক্ষমতা আছে সবাই জানে। কিন্তু সেটা কখনোই সৈরশাসক নয়। এখানে ভোট দিয়ে আমাকে বসানো হয়েছে সবার স্বার্থ ভাবার জন্য। আমি একজনের উপর ব্যক্তিগত আক্রোশ দেখাতে গেলে সমিতির সবাই তো আর সেটা সমর্থন করবে না। সমিতির অনেক সদস্য। কেউ না কেউ আপত্তি করতোই। কিন্তু দেখুন, শাকিবের ব্যবহার, আচার-আচরণ, শুটিং নিয়ে শিডিউল ফাঁসানো ও প্রযোজকদের ভোগানোর কারণে সমিতির সবাই ওর উপর বিরক্ত। সবারই চাপা ক্ষোভ জমা আছে।

তাই সবাই একমত হয়েছে ওকে বয়কট করতে। শুধু তাই নয়, আমার একার পক্ষে দেশের ফাইট ডিরেক্টর, নৃত্য পরিচালক, চিত্রগ্রাহক, চলচ্চিত্র উৎপাদনসমিতিসহ ১৩টি সমিতিকে কখনোই প্রভাবিত করা সম্ভব নয়। এটা অবাস্তব ভাবনা বা দাবি। শাকিবের উপলব্দি করা উচিত সে দিনে দিনে নিজেকে কতোটা অপ্রিয় করে তুলেছে। আজকের সভায় কেবল প্রযোজক ও শিল্পী সমিতির কেউ নেই। কারণ তাদের কমিটি নেই। বলতে গেলে আলাদাভাবে ৫০ জনকে বলতে হবে। তাই আমরা ওই দুটি পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মতামত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শাকিব আমার কাছে সন্তানের মতো। ওকে আমিই প্রথম একক নায়ক হিসেবে সুপারহিট বানিয়েছি। ওর অশ্লীল নায়কের দুর্নাম কাটিয়েছি। আমিই ওকে নিয়ে ‘শাকিব নাম্বার ওয়ান’র মতো ছবি বানিয়ে দর্শকের কাছে সুপারস্টার হিসেবে হাজির করেছি। সোহানুর রহমান সোহান তাকে ইন্ডাস্ট্রিতে এনেছে। এফ আই মানিক শাকিবকে হাতে ধরে অভিনয় শিখিয়েছে। এখন সব ভুলে যদি সে আমাদের শিডিউল নাও দিতো তবু আমরা সেটা কাউকে বলতে পারি না। কারণ, সন্তান গুরুজনের অবদান ভুলে গেলে সেটা লজ্জার। তবে সে কেন শিডিউল ফাঁসানোকে টেনে আনছে?’

শাকিবের কলকাতাপ্রীতির জন্যও তিনি দেশের ইন্ডাস্ট্রির কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন দাবি করে খোকন বলেন, ‘আমি শাকিবের উপর কষ্ট পেয়েছি তার মুখে ভারতীয় শিল্পী, পরিচালক ও টেকনিশিয়ানদের প্রশংসা শুনে। এবং সে বলেছে বাংলাদেশে ভালো শিল্পী নেই। এখানকার পরিচালক ও টেকনিশিয়ানরা ব্যাকডেট। শাকিব দেশের টপ হিরো। তার মুখে এমন অকৃতজ্ঞ কথা মানায় না। যে শাকিব মাথায় কাফন পড়ে ভারতীয় ছবি ও নায়কদের ছবি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে মিডিয়া গরম করেছে সেই শাকিবই এখন ভারতের নায়ক হয়ে গেছে। ভারতীয় নায়িকাদের নিয়ে ছবি করছে।

সেখানে তাকে নিয়ে একটু আলোচনা হচ্ছে দেখে সে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। তার ভুলে যাওয়া রোগ থাকলেও আমরা ভুলিনি শাকিবকে এই ব্যাকডেট পরিচালক ও টেকনিশিয়ানরাই আজকের শাকিব বানিয়েছে। তবে সে কেন এসব বলছে? জবাব আমার কাছে আছে। শাকিবের সঙ্গে যে প্রযোজক বা পরিচালক একবার কাজ করে তারা আর কখনোই শাকিববে নিয়ে কাজ করতে পারে না। তাই এই ইন্ডাস্ট্রিতে শাকিবের কাজ কমে যাচ্ছিলো।

উপায় না দেখে আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি ভুলে, মাথার কাফন ভুলে সে ভারতের বাজারে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছে। আর ভারতের ছবি, নির্মাতা, টেকনিশিয়ান ও শিল্পীদের ঢাকাই ছবিতে কাজ করার সুযোগ দিতে তাদের প্রশংসায় মেতে উঠেছে। সে কলকাতার ছবির বিজ্ঞাপন করে বেড়াচ্ছে সর্বত্র। এমনকি আপনারা দেখেছেন সম্প্রতি একটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানেও সে দেশ রেখে বিদেশের গুণগান গাইতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছে।’

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘শাকিব তার স্বার্থে ব্যবহার করে সবাইকে। এখন কলকাতায় বাজার ধরতে ঢালাওভাবে সে ওই ইন্ডাস্ট্রির প্রশংসায় মেতে উঠেছে। কিন্ত সে যে মিথ্যে বলেছে তার প্রমাণ হলো ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ ছবিটি। এটি আমি পরিচালনা করেছি। এতে শাকিব নিজেই অভিনয় করেছে। ছবিটির বাজেট প্রায় তিন কোটি টাকা। এত বিগ বাজেটের প্রযোজক শাকিব নিজেই। যদি দেশের পরচিালক, টেকনিশিয়ানরা দক্ষ না হতো তবে এই ছবিটির পেছনে কেন শাকিব এত টাকা লগ্নি করলো? আমিও ছবিটি বানাতে পারতাম না। ছবিটির শুটিংয়ের জন্য আমাকে দেশের বাইরে যেতে হয়নি। এর সবরকম কাজ হয়েছে বাংলাদেশেই। শাকিব কী তা জানে না? নাকি জেনেও ভান করে।’

বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘ও প্রযোজকদের যে কতোভাবে ভুগিয়েছে সেটা ও নিজেও জানে না। একটা প্রযোজক সাহস করেন না শাকিবের পেছনে লগ্নি করতে। কারণ ওর ছবিগুলো হয় বিগবাজেটের। সবকিছু ঠিক করে কিছুদিন কাজ করে শাকিবের পাত্তা মেলে না। একটা ছবি মুক্তি দিতে ৫-৭ বছর কেটে যায়। ছবির মেরিট নষ্ট হয়ে যায়। চেহারার কন্টিনিউটি ধরে রাখা যায় না। এভাবে কে ছবি বানাবে?’

সবশেষে খোকন বলেন, ‘শাকিব আমাদেরই ভাই-বন্ধুদের হাতে গড়া। তাকে আমরা সন্তানের মতো জানি। ওকে যত্ন নিয়ে গড়েছি বলেই ওর প্রতি ভালোবাসা ও দাবিও সবার বেশি। কিন্তু ও সবাইকে হতাশ করেছে। তবুও আমরা চাইব শাকিবের উপলব্দি হবে তার ভুল সম্পর্কে। তার ভুলকে ব্যক্তিগত আক্রোশ হিসেবে প্রচার না করে সে নিজেকে সংশোধন করে ফিরে আসবে।’
৩০ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে