শুক্রবার, ১২ মে, ২০১৭, ০২:৩৯:০৪

‘মা’ যখন কষ্টে থাকে আবেগ লুকানো যায় না

‘মা’ যখন কষ্টে থাকে আবেগ লুকানো যায় না

বিনোদন ডেস্ক: ছেলেরা নাকি আবেগ প্রকাশ করতে পারে না। কখনো খুব কাছের মানুষের কষ্ট দেখে চোখ ভিজে এলেও তাদের হয়তো বলতে হয়, ‘চোখে ময়লা পড়েছে!’

কিন্তু যখন ‘মা’ কষ্টে থাকেন, তখন সেই আবেগ আর অস্থিরতা কিছু দিয়েই লুকানো যায় না। আগামী রোববার আন্তর্জাতিক মা দিবস। দিনটি উপলক্ষেই আজ থাকছে দুই তারকা ছেলের কথা, যাঁরা বললেন মাকে নিয়ে তাঁদের মনের ভেতর চেপে রাখা সেই অস্থিরতার গল্পগুলো।

গত ১৪ এপ্রিল মুক্তি পায় আরিফিন শুভ অভিনীত ধ্যাততেরিকি ছবিটি। ছবি মুক্তির ঠিক এক দিন আগে খবর আসে, মা খুব অসুস্থ। স্পষ্ট মনে আছে শুভর, দিনটি ছিল শনিবার। তিনি তখন একুশে টেলিভিশনের অফিসে নতুন ছবির প্রচারাভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।

মায়ের অসুখ বেড়েছে—এই খবর শুনে একদম অস্থির হয়ে পড়েন এই অভিনেতা। স্টুডিও থেকে বেরিয়ে সেখান থেকেই চলে যান মায়ের কাছে, ময়মনসিংহ। তাঁকে সেই রাতেই ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। রাত দেড়টার দিকে ঢাকায় এসে পৌঁছান।

পরদিন তাঁর অনেক প্রিয় একটি ছবির মুক্তি, কত কাজ, কত ব্যস্ততা। সবাই সে সময় শুভকেই খুঁজছিল। কিন্তু মায়ের যন্ত্রণার সামনে সব কিছুই ম্লান হয়ে যায়। শুভ সেই দিনগুলোর কথা মনে করে বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরেই খবর আসছিল যে মায়ের শরীরটা খারাপ হয়ে পড়েছে।

কিন্তু আমি চাইছিলাম, কাজের ওপর মায়ের অসুস্থতা নিয়ে আমার যে চিন্তা, তার যেন প্রভাব না পড়ে। চাইছিলাম, দুই দিকে ব্যালান্স করে চলতে। কিন্তু বৃহস্পতিবার যখন শুনি মায়ের শরীরটা খুব বেশি খারাপ, তখন পৃথিবীর সবকিছুই আমার কাছে কেমন জানি গুরুত্বহীন মনে হচ্ছিল।’

মা শুভর তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধুর মতো। তাই মাকে বিপর্যস্ত দেখে শক্ত-সামর্থ্য শুভও তাঁর স্বাভাবিক জীবন থেকে খেই হারিয়ে ফেলেন। যেদিন তিনি মাকে চিকিৎসার জন্য তাড়াহুড়ো করে ঢাকায় নিয়ে আসেন, সেদিন নাকি মায়ের যন্ত্রণা দেখে দারুণ অস্থির হয়ে পড়েছিলেন এই অভিনেতা। কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলেন না মায়ের বিপর্যস্ত অবস্থা।

সেই সংকটময় মুহূর্তের কথা মনে পড়তেই শুভ বলেন, ‘সেদিন একটা সময় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলাম। অর্পিতা (শুভর স্ত্রী) আমাকে বোঝাল, যখন ছোট ছিলাম তখন আমার যেকোনো ধরনের অসুস্থতায় কিংবা যন্ত্রণায় মা নিশ্চয়ই এত সহজেই হাল ছাড়তেন না।

‘তাই ভেঙে পড়ার সেই সময়টা অর্পিতা আমাকে মায়ের মতো শক্তি আর মনোবল ধারণ করতে বলল। সত্যিই তখন আমি নিজেকে মায়ের সেই অবস্থানে নিয়ে গেলাম। মা তো কত রাত জেগেছে আমার জন্য, কত কষ্ট সহ্য করেছে, সেখানে মায়ের এই কষ্টের সময় আমি কীভাবে ধৈর্যহারা হই! এই ভেবে আমিই যেন সে মুহূর্তে মায়ের মা হয়ে উঠি!’

শুভর মা দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন অবসাদে। গত এপ্রিলে অবসাদ তাঁকে জেঁকে ধরায় মানসিকভাবে দারুণ ভেঙে পড়েন তিনি। তখনই দ্রুত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয় তাঁকে। এখন অনেকটাই ভালো আছেন তিনি। শুভ জানালেন, ‘মা এখন স্বাভাবিক নিয়মেই খাওয়াদাওয়া করছেন, ঘুমাচ্ছেন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে এখনো সময় লাগবে অনেক।’

এসব কথা যখন শুভ বলছিলেন, তখন তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। মাকে এই অবস্থায় রেখে এতদূর? এই প্রশ্ন যখন শুভকে করি, তখন তিনি বলেন, ‘সত্যি বলি, এখানে আসার আগের দিন পর্যন্ত একটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম।

মাকে রেখে কীভাবে এত দূরে আসি। কিন্তু মা যখন ডেকে বললেন যেতে, তখনই মনস্থির করি আমি। প্রতিটা মুহূর্ত মায়ের কথা মনে হচ্ছে। বুঝতে পারছি এখন, এতদিন মায়ের কেমন লাগত আমার কথা ভেবে ভেবে।’
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এম, জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে