বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭, ০৫:৩৫:৪৬

বাবা চলে গেছেন ২৩ বছর হয়ে গেল, বাবার অনুপ্রেরণা আমার মনে পড়ে: আফজাল শরীফ

বাবা চলে গেছেন ২৩ বছর হয়ে গেল, বাবার অনুপ্রেরণা আমার মনে পড়ে: আফজাল শরীফ

মাহতাব হোসেন: আফজাল শরীফ বড়পর্দা ছোট দুটোতেই বেশ পরিচিত মুখ। সম্প্রতি অহঙ্কার ও পবিত্র ভালোবাসা ছবির কাজ শেষ করেছেন। বড় পর্দা আর ছোট পর্দা দুইজায়গার আফজাল শরীফ যেন ভিন্ন। নিজেকেও সেভাবেই প্রেজেন্ট করেন তিনি।

আফজাল শরীফের শুরুটা ছিল গ্রুপ থিয়েটারের মাধ্যমে। এরপর পুরোদস্তুর পর্দার অভিনেতা হয়ে ওঠা। একদিন মিনু ভাই (আহসানুল হক মিনু) এর সাথে আমার ভালো খাতির। ঢাকার এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াই। একদিন মিনু ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন থিয়েটারে। বেইলি রোডের সেই থিয়েটারের অন্ধকারে আমাকে বসিয়ে কোথায় যেন চলে গেলেন। পরে দেখলাম তিনি মঞ্চে অভিনয় করছেন।

দারুণ লাগলো নাটকের এই জগত। নাটক শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মিনু ভাইকে আমিও ধরলাম আমাকেও থিয়েটারে আমাকে নেওয়ার জন্য। এরপর মিনু ভাই আমাকে সেই ব্যবস্থা করে দিলেন। সেটা ১৯৮৪/৮৫ সালের ঘটনা। আমার প্রথম থিয়েটার হলো আরামবাগ গ্রুপ। তারপর থেকেই অভিনয়ের এই জগতে এখন পর্যন্ত আছি। এখনো চলছে। ১৯৮৮ সালে হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও পরিচালিত টিভি ধারাবাহিক ‘বহুব্রীহি’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ছোটপর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। বেইলি রোডে প্রথম হুমায়ূন আহমেদের সাথে আফজাল শরীফের সাক্ষাৎ হয় এবং বহুব্রীহি, অয়োময় প্রভৃতি ধারাবাহিক এবং পরবর্তীতে আরও খণ্ড নাটকে অভিনয় করেন তিনি।

বলা হয় আফজাল চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। ১৯৯২ সালে এটা মুক্তি পায়। সবাই জানে আফজাল শরীফের প্রথম ছবি গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি। মুক্তির দিক থেকে এটিই আগে। তবে আফজাল শরীফের চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে চাষী নজরুল ইসলামের হাত ধরে। আফজাল বলেন, একদিন চাষী নজরুল আমাদের মঞ্চে চলে এসেছেন। আমরা রিহার্সেল করছিলাম। তখন থিয়েটারের বাইরে কাজ করতে হলে দলের প্রধানের অনুমতি লাগতো, জানি না এখনকার অবস্থা কি। আমাদের দলের প্রধান ছিলেন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। উনি তাকে বললেন আফজালকে আমাকে দিন, তাকে আমার ছবিতে অভিনয় করাবো। বলা যায় চাষী নজরুল থিয়েটার থেকে আমাকে চেয়েই নিয়ে আসেন। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার প্রথম ছবি 'দাঙ্গা ফ্যাসাদ। ' তবে শুটিং শুরু হয় পদ্মা নদীর মাঝি আগে।

আফজাল পদ্মা নদীর মাঝি ছবির বিষয়ে বলেন, গৌতম ঘোষ ঢাকায় এসে অভিনয়শিল্পী খুঁজছিলেন। সম্ভবত আমি তখন রাক্ষুসি নাটক নিয়ে মঞ্চে অভিনয় করছিলাম। তিনি আমাকে সেখান থেকেই কাস্ট করেন। এভাবেই পদ্মা নদীর মাঝিতে আমার যুক্ত হওয়া।

কমেডি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। অভিনয়ে রয়েছেন দীর্ঘদিন। ক্রমাগত চোখের সামনেই দেখছেন অভিনয়ের মাধ্যমের পরিবর্তন। অভিনয়ের টেকনিক্যাল বিষয়ের পরিবর্তন, অভিনয়ের কৌশলগত পরিবর্তন। এসব সম্পর্কে আফজাল শরীফ বলেন, আসলে আমরা শুধু অভিনয়শিল্পী ছিলাম না, ছিলাম সচেতন একজন মানুষ। আমাদের মাথার পেছনে সামনে একটা বাড়তি চোখ রাখতে হতো। কেননা এখনকার মতো তখন মেমোরি কার্ডের যুগ ছিল না। রিল নষ্ট করা যাবে না। শট যেন একবারেই দেওয়া যায় সেই প্রচেষ্টাই থাকতো। এখন এটা বাড়তি সুবিধা, শট ভুল হলে আবার দেওয়া যাচ্ছে। এটার একটা ক্ষতিকর দিক হচ্ছে অভিনয়ের দিকে শিল্পীদের ম,অনোযোগ কমে যাচ্ছে।

আশির দশকের মধ্যভাগের পরে বিয়ে করেন আফজাল শরীফ। স্ত্রীর নাম তাহমিনা শরীফ। মানে টিভি পর্দায় আত্মপ্রকাশের আগেই বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হয়ে যায়। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার আফজাল শরীফের। জন্ম ঢাকায়, থাকেন রাজধানীর গাবতলিতে। ছেলে তানজিব শরীফ মিরপুরের বিইউবিটিতে পড়েন আর মেয়ে আফসানা শরীফ লালমাটিয়া মহিলা কলেজে অনার্স করছেন। আফজাল শরীফের বাবা আলিম মিয়া ছিলেন গাবতলী এলাকার একজন ডাক্তার।

ডাক্তার বাবা কেমন সাপোর্টিভ ছিলেন? আফজাল শরীফ বলেন, আমার বাবা ছিলেন ডাক্তার, কিন্তু আমার অভিনয়ের প্রতি তার অসীম আগ্রহ ছিল। তার সমর্থনের কারণেই অভিনয়ের এতোটা পথ চলতে পেরেছি। বাবা চলে গেছেন ২৩ বছর হয়ে গেল। বাবার অনুপ্রেরণা আমার মনে পড়ে।-কালের কণ্ঠ
২২ জুন ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে