সোমবার, ২৬ জুন, ২০১৭, ১০:২৮:১২

‘পুরোহিত শাকিবকে বললেন, তুমি অপুকে সিঁদুর পরিয়ে দাও’

‘পুরোহিত শাকিবকে বললেন, তুমি অপুকে সিঁদুর পরিয়ে দাও’

অপু বিশ্বাস: নাচের সঙ্গে তার প্রথম প্রেম। সেই প্রেমের প্রথম প্রাপ্তি সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ। ২০০৫ সাল। মুক্তি পেল আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’। কিন্তু  নায়িকাখ্যাতি এ সিনেমায় পেলেন না। বছর ঘুরতেই মুক্তি পেল ‘কোটি টাকার কাবিন’। তার বিপরীতে নায়ক শাকিব খান। ব্যস, এই এক সিনেমাতেই খুলে গেল সিসেম দুয়ার। চলচ্চিত্রে তখন ক্রান্তিকাল। সেই কালে একের পর পর ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয় করে রাতারাতি দর্শক মনে জায়গা করে নিলেন তিনি। মান্না, নিরব, ইমন, অমিত, মারুফ, সম্রাটের বিপরীতে অভিনয় করলেও জুটি গড়ে উঠল একজনের সঙ্গেই। তিনি শাকিব খান। পর্দার ন্যায় অপু বিশ্বাসের ব্যক্তি জীবনের নায়কও এখন শাকিব খান। এই দম্পতি বিয়ের সংবাদ গোপন রেখেছিলেন দীর্ঘ আট বছর। অপু বিশ্বাসের প্রেম, ধর্মান্তরিত হওয়া, বিয়ে, মাতৃত্বের স্বাদ, সংসারের হাঁড়ির খবর নিয়ে রাহাত সাইফুলের অনুলিখনে পড়ুন এই আয়োজনের প্রথম কিস্তি।

২০০৬ সালে আমি প্রথম প্রেমে পড়ি। এটাই আমার জীবনের প্রথম প্রেম। বিএফডিসিতে ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ সিনেমার শুটিংয়ে হলুদ রঙের টি শার্ট পরা ছিলো শাকিব। তখনই প্রথম আমি শাকিবকে সরাসরি দেখি। শাকিবকে আমার বান্ধবীরা পছন্দ করতো। আমার বান্ধবীরা আমাকে বলতো, এই সিনেমার কাজ করছিস, শাকিব খানের নাম্বার পেলে দিস। আমার বান্ধবীরা হলো বৃষ্টি, সিমিম ও চুমকি। সিমিম শাকিবকে বেশি পছন্দ করতো। মজার ব্যাপার আমি আর সিমিম দেখতে প্রায় একইরকম। আমরা একই স্টাইলে হেয়ার কাট দিতাম, একই স্টাইলের পোশাক পরতাম। আমাদের গাড়িতে একসঙ্গে স্কুলে যেতাম।

‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমার শুটিং চলাকালে আমার আর শাকিবের মধ্যে চোখাচোখি হতো। তখন বিষয়টা এমন হয়েছে, শাকিব যদি আমার দিকে তাকাত ভালো লাগতো। ওর সাথে শটের জন্য অপেক্ষা করতাম। শুটিং সেটে শাকিবের সঙ্গে কথা বলতাম না। লজ্জা পেতাম।  একদিন শাকিব আমার কাছে ইশারায় মোবাইল নাম্বার চেয়েছিলো। লক্ষ্য করলাম, শাকিব টিস্যু পেপার খুঁজছে মুখ মোছার জন্য, তখন আমি কৌশলে আই লইনার দিয়ে টিস্যুতে আমার মোবাইল নাম্বার লিখে বললাম- এটা নিন। ও বিষয়টি বুঝতে পেরে টিস্যু নিয়ে পকেটে রেখে দিয়েছিল।

রাতেই ওর প্রথম এসএমএস পেলাম। সেখানে লেখা: আমি রানা ফোনটা রিসিভ করো। তখন আমি এক ভাইয়ের বাসায় থাকতাম। আশেপাশে লোকজন ছিলো তাই ফোন রিসিভ করার সুযোগ পেলাম না। ফোন এলেই আমি এক দৌড়ে বাথরুমে চলে যেতাম। পানির কল ছেড়ে দিয়ে চলত আমাদের কথা বলা। এভাবে দেড় মাস চলল। হঠাৎ একদিন মা জানতে পারল এই ঘটনা। এরপর মা আমাকে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দিয়ে স্পষ্ট বলে দিল-  সিনেমায় আর কাজ করার দরকার নেই। ওখানেই লেখাপড়া কর।  কিন্তু ইন্ডিয়া গিয়েও আমি শাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। শাকিব ‘রসের বাইদানী’ সিনেমার শুটিং শিডিউল ফাঁসিয়ে কলকাতা গিয়েছিলো আমার সঙ্গে দেখা করতে। এজন্য তাকে সাফারার হতে হয়েছে। শাকিব ওখানে গিয়ে একটা হোটেলে উঠলো। আমি জামাইবাবুকে সঙ্গে নিয়ে শাকিবের সঙ্গে দেখা করলাম। আমার বোন বাশমতি চালের ভাত, পাবদা মাছ, খাসির মাংস রান্না করে হোটেলে নিয়ে গিয়েছিল।

আমি শাকিব দার্জিলিং ঘুরতেও গিয়েছিলাম। দার্জিলিংয়ে যাওয়ার পথে একটা মন্দির রয়েছে। মন্দিরে অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। শাকিব বললো, ঢুকে তো ভালোই লাগছে। তখনও আমরা জানতাম না, ওটা একজন পুলিশ অফিসারের অনুষ্ঠান। নিরাপত্তাকর্মীরা কিন্তু আমাদের দেখেই সন্দেহ করল। একজন তো জানতেই চাইল- কার কাছে এসেছেন? আমি তখন রীতিমত অপ্রস্তুত। তখন পুরোহিত মশাই আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের দুজনের সর্ম্পক কী?

তখন যেটা হয়েছে নতুন প্রেম। দুজন দজনকে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিতে প্রাউড ফিল করছিলাম। ওই ফিলিংস থেকেই আমি বলে ফেললাম, আমরা স্বামী-স্ত্রী। শুনে পুরোহিত আরো প্যাঁচাতে লাগলেন। জাত কী? শাখা নেই, সিঁদুর নেই! ইত্যাদি প্রশ্ন। শাকিব বললো, আমরা মারোয়ারি। শাকিব আগেই জানত মারোয়ারিরা অনেক পয়সাওয়ালা এবং দেখতে সুন্দর হয়। সিঁদুর নেই দেখে পুরোহিত শাকিবকে বললেন, তুমি ওকে সিঁদুর পরিয়ে দাও। শাকিব কিন্তু তখনও বিষয়টি এনজয় করছে। ঢোলে বাড়ি পরার অবস্থা! ফলে সে ঠাকুরের পায়ের সিঁদুর নিয়ে আমার কপালে পরিয়ে দিল। পুরোহিত মশাই চালওয়ালা টিকা শাকিবের কপালে পরিয়ে দিল।

হঠাৎ এ ঘটনায় আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। শাকিবকে বললাম, আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেল! শাকিব বললো, তাহলে তো আমাদের সম্পর্কটাও হয়ে গেল। আমি কিন্তু তখনও মায়ের ভয় পাচ্ছিলাম।

সেই অবস্থাতেই আমরা দার্জিলিং গেলাম। সবাই আমাদের দেখে স্বামী-স্ত্রী ভাবছিল। এভাবে আমরা তিনদিন কাটিয়েছি। চতুর্থ দিন সকালে শাকিব বাইরোডে ঢাকা ফিরে আসে। আমাকে রেখে আসার সময় শাকিবের খুব কষ্ট হচ্ছিল। বলল, আমার কলিজাটা ইন্ডিয়া রেখে ধরটা নিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছি এমন মনে হচ্ছে।

আমারও খুব খারাপ লাগছিল। আমি ভেবেছিলাম, আমি সিনেমায় কাজ করলেই শাকিবকে পাব। ফলে আমি মাকে অনেক বলে কয়ে বাংলাদেশে ফিরে এলাম। আবার কলেজে যাওয়া শুরু করলাম। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বড় আপুদের রুমে গিয়ে শাকিবের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতাম। একদিন এমন হলো- পপি আপুর সঙ্গে শুটিং করছিলো শাকিব। তখন আমাকে ফোন করে বললো, তোমার ক্লাস কয়টা পর্যন্ত?

বললাম, চারটা পর্যন্ত। সে ঠিক দুইটার মধ্যে বগুড়ায় আমার কলেজের সামনে চলে এলো। আমি তখন কলেজের সাদা ড্রেস পরে ছিলাম। আমি সিমিমকে নিয়ে ওর গাড়িতে উঠলাম। গল্প করতে করতে চলে গেলাম মহাস্থান গড়। এই ঘটনা বাসায় জানতে পেরে আমাকে মারধর করেছিলো।

আরো একবার হঠাৎ করেই শাকিব বগুড়া চলে গিয়েছিল। আসলে ও আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইত। মা’র কড়া নির্দেশ ছিল- বাসার বাইরে যাওয়া নিষেধ। কিন্তু আমি দিদাকে পটিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলে বের হতাম। দিদাও শাকিবকে খুব ভালোবাসতো। সেদিন শাকিব বগুড়া এলে আমি ওকে নিয়ে পর্যটনে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি মা সেজ মামাকে নিয়ে পর্যটনে উপস্থিত। আমাকে দেখেই মা খুব রেগে গিয়ে থাপ্পর দিলেন। তারপর তার সব রাগ গিয়ে পড়ল দিদার ওপর।

এই ঘটনার পর আমি ডেসপারেড হয়ে যাই। আমি সিনেমায় কাজ করবোই। আমি পরিবারকে বলে দিলাম, তোমরা আমাকে কাজ করতে না দিলে আমি একাই চলে যাবো সিনেমায় কাজ করতে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে সোজা মিরপুরে আমার এক আত্মিয়ের বাসায় চলে এলাম। শাকিব শুটিং শেষ করে আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমি বেলকুনিতে গেলে দুজনের দেখা হতো। শাকিব ছাদ খোলা গাড়ি থেকে আমাকে দেখত। একদিন মা শাকিবকে ডেকে বললেন, তুমি কি চাও?

শাকিব বললো, আমি অপুকে ভালোবাসি। মা জানতে চাইলেন, এই ভালোবাসা কি ঘুমানোর মতো নাকি মন থেকে? সেদিন শাকিব মাকে বলেছিল, আপনি এরকম বলতে পারেন না। তখন মাও পাল্টা জবাবে বলেছিল, আমি এটা বলতে পারি না, আর আমি এটা দেখতেও পারি না। শাকিব এবার স্পষ্ট বলে ফেলল, আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করবো। মাও তখন স্পষ্ট বলে দিলেন, যেদিন তুমি ওকে বিয়ে করবে সেদিন থেকে আমি আমার মেয়েকে ত্যাজ্য করবো।

আসলে আমার অবস্থা এমন হয়েছিল, শাকিবের বাসার কাজের লোকও যদি আমার বাসার সামনে দিয়ে হেঁটে যেত আমার ভালো লাগতো। শাকিবের বাসার গেঞ্জির টুকরাও যদি আমার বাসার সামনে পড়ে থাকতো ভালো লাগতো। আমি ধরেই নিলাম, বিয়ে করলে আমি স্বাধীনভাবে শাকিবের সঙ্গে ঘুরতে পারবো। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি বিয়ে করবো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিন তারিখও ঠিক করে ফেললাম।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে