বৃহস্পতিবার, ০৬ জুলাই, ২০১৭, ০৯:২৮:১১

এই সিনেমা লইয়া আমরা কী করিব?

এই সিনেমা লইয়া আমরা কী করিব?

বিনোদন ডেস্ক : গল্প বা যুক্তির পরোয়া না করে সুপারহিরোর কারিশমা আর তামিল ফর্মুলার অ্যাকশন-ওয়ান্ডার দিয়ে দর্শক ধরে রাখার একটি অতি সাধারণ প্রয়াস, যা দুটি দেশ মিলে প্রযোজনার (বা প্রযোজনার দাবি করার) কোনো প্রয়োজন নেই। রিভিউ এখানেই শেষ করে দিতে পারি কিন্তু আমাকে আরও ৪৭৫ শব্দ লিখতে হবে।

মেল গিবসনকে দ্যপ্যাশনঅবক্রাইস্ট-পরবর্তী একটা সাক্ষাৎকারে পেঁচিয়ে ধরা প্রশ্নের উত্তরে বলতে শুনেছিলাম, ‘Its cinema, man...’ সে রকম ভেবেই মনে মনে ঠিক করেছিলাম বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বানানো ছবি, ‘কে? কেন? কীভাবে?’ এসব যুক্তির প্রশ্নে যথেষ্ট ছাড় দেব। সাধারণ দর্শক হিসেবেই দেখব। গল্পটা কেমন লাগল তাই বলব।

বন্ধু, বন্ধু-পত্নীরা মিলে মোট ৮ জন বিনোদনের উদ্দেশ্যে গিয়ে বসলাম বলাকায় ইভিনিং শো দেখতে। কিন্তু গল্প খুঁজতে খুঁজতে বিরতি চলে এল, গল্পের দেখা পেলাম না। হিরোকে সুপার হিরো বানাতে গিয়ে নানা রকম অ্যাকশন, সুপার-অ্যাকশন, পাঞ্চিং ডায়লগ, আর গিমিকের পাংখা লাগিয়ে গল্প একবার গাছে চড়ে তো একবার পাহাড়ে।

আগামাথা বুঝছিলাম না কিছুই। গল্প না পেয়ে কোনোভাবেই বিনোদিত হচ্ছিলাম না আমরা। বিরতির সময় লবিতে বন্ধুরা একবার বলেই ফেলল, ‘চল যাই...’ কিন্তু আমার কমিটমেন্টের কথা ভেবে জোর করল না আর। তাই বসলাম আবার।

বিরতির পর একটু একটু করে গল্পের পথে হাঁটল ছবিটা। হিরোর সুপার হিরোগিরি কমল। দ্বিতীয় নায়িকার আবির্ভাব হলো। চমক দিয়ে সামনে এলেন মূল ভিলেন। কিন্তু তখনই হিরো আবার হয়ে গেলেন সুপার হিরো। পূর্বানুমিতভাবেই মেরেকেটে ভাসিয়ে একাই করলেন সব দুষ্টের নাশ। ছবি দেখা শেষে যে প্রশ্নগুলো করব না ভেবেছিলাম শুরুতে, তা-ই চেপে বসল মাথায়, কে? কেন? কীভাবে?

বস-১ দেখা হয়নি, তাই বস-২দেখে গল্প উদ্ধার করে একরৈখিকভাবে ফেললে তা মোটামুটি এ রকম: সূর্য, মুম্বাইয়ের বিখ্যাত ডন বা জননেতা (আসলে কে?) নিজের নামে এক ফাউন্ডেশন গড়ে জনকল্যাণমুখী মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়। যার জন্য তার প্রয়োজন ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তার এই পরিকল্পনায় সাহায্যের জন্য মুম্বাইয়ের মুখ্যমন্ত্রী গোপিনাথকে রাজি করিয়ে ফেলে এবং মুখ্যমন্ত্রী ‘সূর্য ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন (কেন?)।

এবং বিজনেস মিট আহ্বান করেন!! সেই মিটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রিন্স শাহনেওয়াজ পুরো টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং সেই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কিন্তু সূর্য ফাউন্ডেশনের কাজ থেমে থাকে না। শাহনেওয়াজ ৫ হাজার কোটি টাকা প্রথম কিস্তি দিয়ে দেন (কীভাবে?)। সূর্যের সঙ্গে থাকে তার প্রেমিকা রুশা, মুম্বাইয়ের পুলিশ কমিশনারের মেয়ে। যথারীতি বাধা আসে। শাহনেওয়াজ হঠাৎ আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান।

কিন্তু সূর্য ফাউন্ডেশনের কাজ এগিয়ে যায়। সূর্যের নির্দেশে তার লোকজন রাতারাতি ভারতবর্ষের প্রতি ৫ কিলোমিটারে ব্যাংকের একটি শাখা খুলে ফেলে (ভারতের আয়তন হিসাব করলে ৬ লক্ষাধিক ব্রাঞ্চ!)।

চেয়ার-টেবিল নিয়ে ব্রাঞ্চ খুলে বসলে লাখ লাখ জনতা হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেই ‘ব্রাঞ্চগুলোতে’ টাকা জমা দেন এবং ভারতের সব আর্থিক নিয়ম-কানুন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কয়েক দিনেই ৩৫ হাজার কোটি টাকাই তুলে ফেলে (বেশিও না, কমও না)...কিন্তু বিধি বাম। কদিন পরেই কে যেন ‘কোথাও’ রাখা টাকাগুলো গায়েব করে দেয় (কীভাবে?)...এভাবে ব্র্যাকেট দিতে থাকলে রিভিউর পুরোটাই ব্রাকেটে ভরে যাবে...

বস ২
পরিচালক: বাবা যাদব
অভিনয়: জিৎ, নুসরাত ফারিয়া, শুভশ্রী গাঙ্গুলী, অমিত হাসান
প্রযোজনা: জাজ মাল্টিমিডিয়া (বাংলাদেশ) ও জিৎ এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড (ভারত)

তারপর সূর্য বাংলাদেশে আসেন শাহনেওয়াজের খোঁজে। বাংলাদেশের সবাই ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলে। সম্ভবত কলকাতার দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য এপারের সবাইকে বাঙাল (ভানু বন্দ্যোপধ্যায়ের) ভাষা দেওয়া হয়েছে। আজান শুনে সূর্য মাজারে আসেন খোদার সাহায্য চাইতে।

মাজারের পেছনে (হেরেমখানায়?) আইটেম নাচেন ফারিয়া। শুনেছিলাম ফারিয়ার চরিত্রটি নাকি ছোট্ট, কিন্তু ফারিয়ার করা আয়েশা ছবির গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র যে গল্পে অবদান রাখে। ফারিয়াকে লাগছিলও গ্লামারাস। এরপর ফারিয়া সূর্যকে নিয়ে যান ব্যাংকক...তারপর সুপার হিরো দেখান তাঁর শেষ ভেলকি। বাকি গল্প আর না হয় নাই বললাম। যাঁরা দেখেননি, অনুমান করে নিন, হুবহু মিলে যাবে একদম...

প্লট ছাড়াও একটা সিনেমায় আরও অনেক কিছুই থাকে। অভিনয়ের কথা বলতে গেলে এ ধরনের সিনেমার গৎ অনুযায়ী যার যার চরিত্রের অ্যাটিটিউড নিয়ে একটা স্টাইলাইজড অ্যাকটিং করে গেছেন সবাই। ন্যাচারাল অ্যাকটিংয়ের ধার দিয়েও যাননি কেউই। তাই এ ধরনের অভিনয় যাঁদের ভালো লাগে, লাগবে। যাঁদের ভালো লাগে না, লাগবে না। অমিত হাসান ভালো করেছেন। নুসরাত ফারিয়ার চেষ্টা চোখে পড়েছে।

পরিচালনা ছিল জিৎকেন্দ্রিক। প্রযোজকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী। সিনেমাটোগ্রাফি পরিচ্ছন্ন। এডিটিং, সেও ফর্মুলায় বাঁধা। প্রোডাকশন ডিজাইনার কে ছিলেন খেয়াল করিনি, কিন্তু আর্ট ডিপার্টমেন্টের কাজ তেমন চোখে পড়েনি। ভিজ্যুয়াল এফেক্ট ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড। অ্যাকশন, ব্যাংকক অংশেরটুকু ভিন্নতর মনে হয়েছে। গান, কোরিওগ্রাফি, ব্যাকগ্রাউন্ড তেমন একটা বেরিয়ে আসেনি। ভালো লেগেছে সাউন্ড মিক্সিং, সারাউন্ড সাউন্ড উপভোগ্য ছিল। মোটামুটি এই হলো আমার দেখা বস-২।

বাইরে বৃষ্টি থাকায় শখানেক মানুষ আটকে ছিলাম বলাকার নিচতলায়। সেই সুযোগে অন্যান্য দর্শকের কাছ থেকেও একটু জানার চেষ্টা করলাম, তাঁদের কেমন লাগল? ৩০-৩৫ জনকে যেচে পড়ে জিজ্ঞেস করেছি, ‘মোটামুটি’, ‘চলে’—এর চেয়ে বেশি একজনও কেউ বললেন না কিছু।

তাঁরা সবাই জিৎ, ভারতীয় বাংলা ছবির ভক্ত। তাঁরাই বলছেন, চলে! তাহলে আমরা যারা জিৎ-ভক্ত নই তারা?...তাই এখন প্রশ্ন এই ছবি যৌথভাবে করার দরকার পড়ল কেন? কী পেলাম আমরা বাংলাদেশের দর্শক বা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প বস-২ থেকে প্রযোজকই বা কী এমন কামাই করে ফেললেন? ঈদের ছুটিতে কিছু দর্শক না হয় এসেছেন, ঈদ ছাড়া এই ছবি কি চলত? তাহলে পেলাম কী? বর্জন, বিভক্তি, সংঘাত? এই সিনেমা লইয়া আমরা কী করিব এখন?
এমটিনিউজ২৪/এম.জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে