বৃহস্পতিবার, ০৬ জুলাই, ২০১৭, ০১:৫২:৪০

প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওমর সানির খোলা চিঠি

 প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওমর সানির খোলা চিঠি

বিনোদন ডেস্ক : সম্প্রতি চলচ্চিত্র অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার বিষয়বস্ত ছিল যৌথ প্রযোজনার ছবি। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) আওতায় ছবি বিনিময়। যদিও বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা অনেকদিন ধরেই সমালোচনা করছিলেন।

সম্প্রতি সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে কলকাতার নায়ক দেব অভিনীত ‘চ্যাম্প’ ছবিটি আসছে। আর কলকাতায় যাচ্ছে বাংলাদেশের নায়িকা মৌসুমী হামিদ অভিনীত 'মাস্তানি' ছবিটি। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ফের আলোচনায় আসে সাফটা চুক্তির বিষয়টি। আর এরপর থেকেই চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন এ চুক্তিটি বাতিল করা হোক।

এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন,‘নিয়ম মেনে ছবি বিনিময় হলেও ছবির মানের ক্ষেত্রে ভারসাম্য ঠিক রাখা হয় না। কলকাতার ছবিগুলো বাংলাদেশে অনেকগুলো হলে মুক্তি পেলেও বাংলাদেশের ছবিগুলো গুটি কয়েক হলে মুক্তি পায়। কারণ ছবিগুলো মানহীন। আর থাকে না কোনো প্রচারণাও।’

এদিকে গত কয়েকদিন আগে নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানি সাফটা চুক্তির কড়া সমালোচনা করছেন। আর সাফটা চুক্তিকে বাংলাদেশি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ‘সাপ’ বলে বিবেচনা করে শিগগিরই চুক্তিটি বাতিলের দাবি তুলেছেন। এছাড়া গত ৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে কাছে একটি খোলা চিঠি তিনি লিখেছেন। সে চিঠিটি এমটিনিউজ২৪.কম এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

আসসালামু আলাইকুম

প্রথমেই আপনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আপনি বাংলাদেশের অহংকারের অহংকার ও গৌরব। সরকারের যে কোন সিদ্বান্তই আমাদের মানতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের মতামতের গুরুত্ব ও মর্যাদা আপনি সব সময়েই দিয়ে থাকেন।

আমি আপনার কাছে সাফটা চুক্তির কথা বলেছি। সার্কভুক্ত দেশের নিয়ম অনুসারে এক দেশের ছবি আরেক দেশে চলবে এই আইন হয়েছে। আমাদের চলচ্চিত্রের সময়টা খুবই খারাপ। তাই আপনার কাছে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি সাফটা চুক্তি বাতিলের। এই এফডিসি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর গড়া। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যখন জীবিত ছিলেন তখন তার কাছে তৎকালীন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে গিয়েছিলেন।

তখন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের বঙ্গবন্ধু একদিনের নোটিশে বলেছিলেন, এ দেশে কোন ভীনদেশীয় (হিন্দি, উর্দু, পাকিস্তানি) ছবি চলবে না। তখনকার সময় দেশের অবস্থা ছিল নাজুক। কিন্তু এ দেশ তো বর্তমানে সে অবস্থানে নেই। বর্তমানে অনেক উন্নত হয়েছে। আপনি তো জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সন্তান। আমরা খুব ভালোভাবেই জানি আপনিও আপনার বাবার মতো চলচ্চিত্রকে ভালোবাসেন। তাই আমরা চাই আপনার ভালোবাসা ও হাতের ছোঁয়া পেয়ে চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগ আবারও ফিরে আসুক।

যৌথ প্রযোজনার ছবি হোক, এটা আমরাও চাই। কিন্তু সবকিছু হয় যেন সমান সমান। আইন মেনে। আমাদের দেশের হলের অবস্থা ও পরিবেশ ভাল না। হলে যেয়ে আমাদের দেশের মানুষ ছবি দেখতে পারে সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এফডিসিতে সার্ভার থেকে শুরু করে অন্যান্য সকল সমস্যা সমাধান করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

আমরা চলচ্চিত্রের মানুষেরা চলচ্চিত্র নিয়ে মিলেমিশে থাকতে চাই। আমরা ভালোবাসা চাই। আবার ভালোবাসা দিতেও চাই। হানাহানি চাই না। আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর। আমরা সব ধর্মের মানুষ এক সাথে বসবাস করি এ দেশে। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ সোনার মতো করেই গড়তে চাই।

আমি চলচ্চিত্রের একজন অতি সাধারণ মানুষ। এ দেশেরই সন্তান। তাই আমার যদি কোন ভুল-ত্রুটি হয় ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

প্রসঙ্গত ২০০৪ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। কার্যকর হয় ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারত বেশ কিছু সিনেমা বিনিময় করেছে ইতোমধ্যে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’, ‘সম্রাট’, ‘রাজাবাবু’সহ আরো বেশ কিছু সিনেমা। বাংলাদেশে এসেছে ভারতীয় সিনেমা ‘বেলাশেষে’, ‘অভিমান’, ‘তোমাকে চাই’,‘বেপরোয়া’, ‘যুদ্ধশিশু’, ‘খোকাবাবু’, ‘খোকা ৪২০’, ‘ওয়ান্টেড’সহ আরো বেশ কিছু চলচ্চিত্র।
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে