বৃহস্পতিবার, ০৬ জুলাই, ২০১৭, ০৬:৩৪:৩৯

‘আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলাম’

‘আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলাম’

বিনোদন ডেস্ক: বাংলায় ডাবিং করা দীপ্ত টিভির ‘সুলতান সুলেমান’ ধারাবাহিকে পঞ্চম মৌসুম পর্যন্ত অভিনয় করেছেন মারিয়েম জারলি। ‘হুররাম সুলতান’ চরিত্রে। মারিয়েমের বাবা তুরস্কের, আর মা জার্মানির। বেড়ে উঠেছেন জার্মানিতে। ২০১১ সালে এই ধারাবাহিকের শুটিং শুরু হয়। জার্মানি ছেড়ে তুরস্কে গিয়ে হোটেলে ওঠেন।

যত দিন এই ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন, তত দিন এই হোটেলেই ছিলেন। এর মধ্য তুরস্কের এক প্লেবয় চান এতেশের প্রেমে পড়েন তিনি। অন্তঃসত্ত্বা হন। গর্ভপাত করাতে বলেন প্রেমিক, অস্বীকৃতি জানানোয় ছেড়ে চলে যান। সিদ্ধান্ত নেন, একাই সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ছেড়ে দেন ধারাবাহিকটি, চলে যান আগের ঠিকানায়।

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ২০১৩ সালে জার্মানির বার্লিনে মারিয়েম জারলির সাক্ষাৎকার নেন তুরস্কের হুরিয়েত পত্রিকার সাংবাদিক আয়েশা আরমান। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ। এখানে উঠে এসেছে একজন অভিনেত্রী কীভাবে ব্যক্তিজীবনের বাজে সময় পাড়ি দেন, সে কথা। সাক্ষাৎকারটি পুরোনো হলেও প্রাসঙ্গিক। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেয়ের জন্ম দেন তিনি। ওই বছরের শেষের দিকে আবার অভিনয় ও মডেলিংয়ে ফেরেন তিনি, জার্মানি ও তুরস্ক—দুই দেশেই।

‘সুলতান সুলেমান’ ধারাবাহিকে ‘হুররাম সুলতান’ চরিত্রে অভিনয় করা মারিয়েম জারলি।

কেমন আছেন?
-কঠিন সময় পাড়ি দিয়েছি। এখন ভালো আছি। চুল কাটিয়েছি, রং করিয়েছি। আমি আমার নিজের জীবনে ফিরেছি। আবার সাইকেল চালাতে শুরু করেছি।

বার্লিনে কেমন কাটছে?
-আমি আর হুররাম নই। আমি সেই পুরোনো আমি। হুররামকে আমার বিদায় জানাতে হয়েছে, বিদায় জানিয়েছি। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে এখন হুররাম মনে হয় না।

হুররাম চরিত্রে অভিনয় আপনার ব্যক্তিজীবনকেও প্রভাবিত করেছিল?
-অবশ্যই।

তুরস্ক ও জার্মানিতে বসবাসের পার্থক্য কী?
-এখানে (জার্মানি) আমার বাড়ি। আমার পরিবার ও বন্ধুরা সব এখানে। এই শহরের সবকিছু আমার নখদর্পণে। এখানে আমি ভালো বোধ করি। আমি এখানে বিখ্যাত কেউ নই। কিন্তু এখন আমি স্বস্তিতে আছি। আমি একজন মুক্ত নারী।

হুট করে ধারাবাহিক ছেড়ে দিলেন। অভিযোগ উঠেছে, পারিশ্রমিকের জন্য?
-আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। আর লোকে আমাকে নিয়ে ১০ রকমের কথা বলেছে। খবর লিখছে।

তাহলে...
-চানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। বাইরে খেতে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়া পর্যন্ত। সম্পর্কটা গভীর করার ভাবনা ছিল না। তবে দীর্ঘদিন পরিবার থেকে দূরে ভিন দেশের এক হোটেলে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ধারাবাহিকের কাজ ছাড়া বাইরে তেমন একটা যাওয়া হতো না। জার্মানিতে বড় হওয়ায় তুরস্কে তেমন কোনো বন্ধু-বান্ধব ছিল না। নির্ভুল কাজ করতে গিয়ে রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে চিত্রনাট্য মুখস্থ করেছি। সব মিলিয়ে চাপ আর একাকিত্বে ছিলাম।

আপনার বন্ধু ছিল না সেখানে?
-না। সেখানে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব বা আস্থার সম্পর্ক ছিল না। আমি খুবই সংবেদনশীল মানুষ। আমি হুররামের চরিত্রের ভেতর ঢুকে গিয়েছিলাম। এখন আমি যখন হুররামের ছবি দেখি, আঁতকে উঠি। কারণ, তিনটা বছর আমি হুররাম হয়ে বেঁচেছিলাম। আমি যে মারিয়েম, সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। শেষের কয়েক মাস আমি হুররাম চরিত্রের মধ্যে শক্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওই সময় চানকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম। সে আমার অনুভূতিগুলো বুঝতে পারেননি। আমি একেবারে একা হয়ে পড়েছিলাম।

চানের সঙ্গে আপনার পরিচয় কীভাবে?
-এই ধারাবাহিকের এক সহশিল্পীর মাধ্যমে।

এখনো তাঁকে ভালোবাসেন?মারিয়েম জারলি-না। কারণ, আমি যাকে ভালোবাসতাম আসলে তার কোনো অস্তিত্বই নেই। সে অনেকটা ছবির মতো, যেটার সামনে সুন্দর আঁকা থাকে আর পেছনটা ফাঁকা। তবে এটা সত্যি যে আমি তাঁকে ভালোবাসতাম। এক বছরের সম্পর্কে আমি তাঁকে সব দিয়েছি। আমি আমার নিজের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। সবকিছুর আগে আমি তাঁকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলাম।

আপনি নাকি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন?
-হুম।

কখন?
-২০১২ সালে আনাতোলিয়া টেলিভিশন অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার রাতে। আমি ওই পুরস্কার ছুড়ে ফেলেছিলাম। আমি উদ্‌ভ্রান্ত ছিলাম।

ঘরে আপনি একা ছিলেন?
-না। চান ছিল। আমি বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিতে চেয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারি, আমার ভুল ছিল। আমি অসুস্থ ছিলাম। আমি পাপ করতে যাচ্ছিলাম। আমার আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা দরকার ছিল।

আপনার ব্যক্তিগত জীবন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল?
-না। একজনকে এর জন্য দায়ী করা যায় না। সেটা ভুল হবে। তুরস্কে যাওয়ার পর থেকে আমি অনেকগুলো ভুল করেছি। নিজের জন্য একটা স্বস্তিকর থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে পারিনি। যন্ত্রের মতো কাজ করছিলাম। আমি চাইতাম না, সংলাপ ভুলে যাই। সারা রাত জেগে নিজে নিজে মহড়া দিতাম। শুটিংয়ে সবাই ছিলেন। কিন্তু সবকিছুর ভিড়ে আমি ছিলাম একা।

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ব্যাপারটা...
-এটা একটি দুর্ঘটনা।

যখন তাঁকে জানালেন, আপনি অন্তঃসত্ত্বা...
চান জানতে চায় আমি মুটিয়ে যাচ্ছি কেন? বললাম, আমি অন্তঃসত্ত্বা। তখন সে আমাকে নিয়ে পার্কে যায়। বলে, আমার দুটো বাচ্চা আছে। আর বাচ্চার দরকার নেই। গর্ভপাত করে ফেল। তোমার ধারাবাহিক চলছে। এ সময় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর জানালে তারা হতাশ হবে। এই বাচ্চা তোমার সব শেষ করে দেবে।

তখন আপনি কী বললেন?
-আমি আরেকটু ভাবতে চাই। এটা শুনে সে আগ্রাসী আচরণ শুরু করল।

তারপর...
-এরপর আমি আর চান এক মনোবিদ বন্ধুর কাছে গেলাম। আমি জানিয়ে দিলাম, কে বাঁচবে আর কে মারা যাবে সেটা আল্লাহ দেখবেন। আমি কোনো শিশুকে হত্যা করতে পারব না। এটা শুনে চান ক্ষেপে গেল। আমাকে ফেলে চলে গেল।

বাবা ছাড়া সন্তানকে পৃথিবীতে আনা কঠিন না?
-হুম। তবে আমি তেমনটা চাইনি। চান আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি কিছুতেই আমার সন্তানকে হত্যা করতে চাই না। আমি ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। আমার মেয়ে হবে। আমরা মা-মেয়ে একসঙ্গে পথ চলব, সুন্দরের দিকে।

সিঙ্গেল মা হিসেবে আগামী দিনগুলো কতটা কঠিন হবে, আপনি বুঝতে পারছেন?
-হুম। এটা ভেবে কখনো কখনো আমি ভীত হয়ে পড়ি। তবে সুন্দর আর ভালো কিছুর কথা ভেবে এটা ভুলে যাই। ভবিষ্যতে হয়তো মনের মতো একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে খুঁজে পাব।

আপনার মেয়েকে কোথায় বড় করতে চান?
-জানি না ভাগ্যে কী আছে! তবে সম্ভবত জার্মানিতেই থাকব। আমি বার্লিনে একটা ফ্ল্যাট কিনেছি। আমি গর্ভধারণকালীন সময়টা শান্তিতে থাকতে চাই। লোকে খারাপ কথা বলে, বলুক। এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। স্রষ্টা জানে আমার অবস্থা। ক্ষমা জীবনের বড় গুণ। আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এমনকি চানকেও।-প্রথম আলো

হুরিয়েত পত্রিকা অবলম্বনে তপতী বর্মন
০৬ জুলাই ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে