বুধবার, ০২ আগস্ট, ২০১৭, ০৮:৩৫:৫৪

আমার যার সঙ্গে প্রথম প্রেম হয়েছিল সে ছিল কালো: মাহি

আমার যার সঙ্গে প্রথম প্রেম হয়েছিল সে ছিল কালো: মাহি

বিনোদন ডেস্ক: এ প্রজন্মের জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহি। জন্ম, বড় হওয়া, স্কুল-কলেজ—সবই ঢাকায়। তাঁর চোখে ঢাকা কেমন শুনেছেন রূপক জামান।

মা-বাবার বিয়ের পরদিনই তারা ঢাকায় চলে আসে। আমার জন্ম ঢাকায়। সেই সূত্রে এখানেই বড় হওয়া। ছোটবেলায় আম্মু অনেক শাসন করত, ঘর থেকে বেরোতে দিত না। আম্মুর নিয়ম ছিল, দুপুরবেলা ভাত খেয়ে ঘুমাতে হবে। আম্মু তার রুমের দরজা লক করে ঘুমাত। আমার ঘুম আসত না। আমি করতাম কি, বারান্দায় ঝুলে ঝুলে মানুষজন দেখতাম, মাঠে বাচ্চারা খেলত, আমার ভালো লাগত। কড়া শাসনের কারণে খুব একটা খেলাধুলা করতে পারিনি। তো, বারান্দা থেকে দেখতাম, বাদামওয়ালা বাদাম নিয়ে যাচ্ছে। এক বাদামওয়ালা আঙ্কেল ছিলেন, যিনি আমাকে ফ্র্রি বাদাম দিয়ে যেতেন।
বেশ মজা করে আমি সেগুলো খেতাম।

এরপর যখন একটু বড় হলাম, আম্মু স্কুলে নিয়ে যেত। এদিক-সেদিক তাকানো যেত না। সুন্দর সুন্দর ছেলে আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করত, টাংকি মারার জন্য। আম্মুর যন্ত্রণায় তাদের দিকে তাকানো যেত না। আম্মু এতই চালাক ছিল, যদি দেখত কোনোভাবে তাকিয়েছি, তাহলে সেদিন খবর হয়ে যেত। ছোটবেলায় খুব বেশি সাজুগুজু করতাম, মানে বেশি রংঢং করতাম আর কি। টিভিতে নাটক দেখা, আমার খুব ইচ্ছা করত আমাকে যেন টিভিতে দেখায়। তারপর তো ফটোসেশন করলাম, সিনেমায় এলাম—সে কাহিনি সবাই জানে।

ঢাকার উত্তরায় আমার বেড়ে ওঠা। তখনকার উত্তরা অনেক বেশি সুন্দর ছিল, শান্ত ছিল। বাড়িঘর ছিল না বললেই চলে! আর ছোটবেলায় যাদের সঙ্গে টাংকি মারতাম, তারা এখন আমাকে আপু বলে ডাকে। আম্মু কলেজ পর্যন্ত আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। এমনকি সিনেমায় আসার এক-দেড় বছর পর্যন্তও সঙ্গে করে নিয়ে আসত।

আমার জীবনে ছোটবেলায় খুব একটা ঘুরতে যেতে পারিনি। একেবারেই যে যাইনি তা নয়। আব্বু-আম্মুর সঙ্গে ফ্যান্টাসি কিংডম, গুলশানের ওয়ান্ডারল্যান্ডে ঘুরতে যেতাম। ওয়ান্ডারল্যান্ড এখন তো নেই। একবারের একটা গল্প বলি। ওয়ান্ডারল্যান্ডে ঘুরতে গেছি, ক্লাস টু কিংবা থ্রিতে পড়ি। মৌসুমী ম্যাডাম ও মান্না স্যারের একটা শুটিং চলছিল। অনেক মানুষের ভিড়ে আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। আব্বু আমাকে উঁচু করে ধরে রেখেছিল। আমার জীবনের প্রথম কোনো শুটিং দেখা ছিল সেটা।

স্কুলজীবনে আমার বাতজ্বর ছিল। কিন্তু আইসক্রিমের প্রতি আলাদা নেশা ছিল। আম্মুকে বলতাম, আম্মু আইসক্রিম খাব। আম্মু সব সময় বলত—না, ডাক্তারের নিষেধ আছে। ঠাণ্ডা কিছু খাওয়া যাবে না। মুখ খুব ছোট হয়ে যেত। আম্মু আমাকে এখন বলে, তোর মুখ দেখে মায়ায় আমি থাকতে পারতাম না, তাই আইসক্রিম কিনে দিতাম। ওই সময় আমার মনে হতো, আমার যখন অনেক টাকা হবে, তখন আমি আইসক্রিম কিনে কিনে খাব। এখন বড় হয়ে আমি আইসক্রিম দুই চোখে দেখতে পারি না।

বড়বেলার ঢাকায় পরিবর্তন বলব না, আমার কিছু পরিবর্তন হয়েছে বলব। আমার যে জিনিসটা বেশি ভালো লাগত, এখন দুই চোখেই দেখতে পারি না। তারপর ছোটবেলায় মনে হতো, বাসা থেকে যদি একবার বের হতে পারতাম, কি জানি কী হয়ে যাবে। ঘুরে ঘুরে পুরো দুনিয়া দেখে ফেলব। আর এখন আম্মু বাধা দেয় না, একলা ঘুরতে পারি। কিন্তু মনে হয় আম্মু যাক, তার সঙ্গে ঘুরতে পারলে ভালো লাগবে। আগের উত্তরা অনেক বেশি নিরিবিলি ছিল, এত ভিড় ছিল না। আর এখন তো উত্তরার জ্যাম থেকে বের হতেই দিন পার হয়ে যায়।

অনেক মজা করেছি ছোটবেলায়। আমার স্কুল ছিল উত্তরা হাই স্কুল। এর পাশেই একটা পার্ক ছিল। আমরা সব বন্ধু মিলে স্কুলের বাউন্ডারির গ্রিল ভেঙে ফেলেছিলাম। ওখান থেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আমরা পার্কটাতে যেতাম—ঘুরতাম, আইসক্রিম খেতাম। আমাদের কাছে খুব একটা টাকা থাকত না। তখন করতাম কি, হয়তো লটকনওয়ালা লটকন বিক্রি করছে। সবাই টেস্ট করার নাম করে একটা করে লটকন খেয়ে ফেলতাম। আরেকটা জিনিস আমি অনেককেই বলেছি। আমার যার সঙ্গে প্রথম প্রেম হয়েছিল সে ছিল কালো, আমি তাকে খুব ভয় পেতাম। সে আমার এক বান্ধবীর মাধ্যমে আমাকে চিঠি দিয়েছিল। বান্ধবী আমাকে ক্লাসে এনে চিঠিটা দেয়। আমরা ১২ জন মিলে স্কুল মাঠে বসে চিঠিটা পড়ি। সেটা ছিল রক্তে লেখা একটা চিঠি। আমাকেও তো তাকে কিছু একটা দিতে হবে। আমি তো রক্ত দিয়ে চিঠি লিখতে পারব না। ১২ জন বান্ধবীর সবাই আঙুল কেটে একটা চিঠি লিখে তাকে দিলাম।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে