বুধবার, ০৯ আগস্ট, ২০১৭, ০৯:১৫:২৭

‘সালমান শাহর স্ত্রী কিসের পুঁটলি দিয়েছিল আমার ছেলের হাতে?’

‘সালমান শাহর স্ত্রী কিসের পুঁটলি দিয়েছিল আমার ছেলের হাতে?’

বিনোদন ডেস্ক:  চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে—ভিডিওতে এমন বক্তব্যদাতা রাবেয়া সুলতানা রুবিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্ত কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে তাঁকে দেশে ডাকার প্রস্তুতি শুরু করেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

রুবিকে দেশে এনে জবানবন্দি নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। নীলা চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে এবং রুবি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা ওয়াইজ আবারও বিয়ের পর দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদের সবার সঙ্গেই কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে পিবিআই।

রুবি গত ৬ আগস্ট সোশ্যাল নেটওয়ার্কে দেওয়া এক ভিডিওতে বলেন, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এবং এই হত্যার সঙ্গে জড়িত রুবির ভাইকেও পরে খুন করা হয়। এরপর ফেসবুকে আরো একাধিক স্ট্যাটাসে রুবি ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করেছেন।

গতকাল তিনি নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘যেদিন সালমান শাহ মানে ইমন মারা যায়, আমাদের সবাই তাদের বাসায় যাওয়ার পর ইমনের স্ত্রী সামিরা কেন আমাকে না জানিয়ে আমার ছেলে ইহসান জামিল ভিকিকে একটা কাপড়ের পুঁটলি দিয়েছিল ওদের বাসা থেকে আমাদের বাসার ছাদে ফেলার জন্য? কী ছিল ওই কাপড়ের পুঁটলিতে? কেন আবুলের কাছে সালমান শাহর সুইসাইড নোট ছিল?’

রুবি ফেসবুকে নিউ ইয়র্কে অবস্থানের ঠিকানা ও নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে লিখেছেন, তিনি ওখানকার বাংলাদেশের কূটনৈতিক কর্মকর্তাদেরও বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি লিখেন, ‘যদি আমার কিছু হয়, আমার হাজব্যন্ড ও তার পরিবার দায়ী থাকবে।

আমি আল্লাহর রহমতে আজ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে বিষয়টি জানাতে গিয়েছিলাম। সেখানে পিবিআই আমাকে পেতে পারে। আমি তাদের আমার পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়েছি যাতে পিবিআই আমাকে খুঁজে পায়। কেবল আল্লাহ তায়ালা জানে ভবিষ্যতে কী ঘটবে। ইনশাল্লাহ আগামীকাল আমি বাড়ি ফিরে যাব। ’

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, রুবির ভিডিওটিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন তদন্তকারীরা। ভিডিওর কণ্ঠ প্রকৃতই রুবির কি না বা ২১ বছর পর তিনি ইউটিউবে ও ফেসবুকে কেন তাঁর ভিডিও ছাড়লেন তাও ভাবাচ্ছে তদন্তসংশ্লিষ্টদের। তবে তারা প্রাথমিকভাবে সেটি রুবির প্রকৃত ভিডিও বলেই ধরে নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মনে হচ্ছে, এটি রুবির ভিডিও। এর পরও সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে মন্তব্য করা যাবে না। ’

সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ২১ বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব পায় গত এপ্রিলে। সালমান শাহর মৃত্যুর পর তাঁর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী রমনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলার অভিযোগকে আমলে নিয়ে পিবিআই বেশ কিছুদিন আগে তদন্তে মাঠে নেমেছে। এরই মধ্যে এজাহারে যাদের নাম রয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।  

অন্যদিকে ভিডিওতে রুবির করা হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সামিরার বাবা, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা। গত রাতে সামিরার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রুবির বিরুদ্ধে সালমানের মা অভিযোগ করেছেন আগে। রুবি ভিডিওতে যে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন তার পেছনে অর্থের লেনদেন থাকতে পারে। ’

এর আগে ২৬ মে ফেসবুকে দেওয়া লাইভ ভিডিওতেও রুবি সালমান শাহর মামলা ২১ বছর ধরে ঝুলে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে আমার কী থাকতে পারে? সে আমার প্রতিবেশী ছিল। আমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছি এই জিনিস নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষ এটা নিয়ে কিছুই করছে না। বাংলাদেশের সরকারও কিছু করে না। কী এমন জিনিসটা, এত দিন ধরে পড়ে আছে? অথচ ২১টা বছর হয়ে গেল ছেলেটা মারা গেছে। ’ সালমান শাহর মা তাঁর বিরুদ্ধে অহেতুক বিষোদগার করে আসছেন বলেও রুবি অভিযোগ করেন।

এদিকে যুক্তরাজ্য থেকে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সব অপরাধীই একসময় অপরাধ স্বীকার করতে বাধ্য হয়, রুবির বক্তব্যই তার প্রমাণ। আজ যে স্বীকারোক্তি রুবি দিয়েছেন, কোনো পাগল কি এভাবে বলবে? রুবি তো নিজে এসেই সাক্ষী দিতে চাচ্ছেন। সরকারের মাধ্যমে ঢাকায় এনে তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হোক। এটা ১৬ কোটি মানুষের দাবি, কেবল নীলা চৌধুরীর দাবি নয়। ’

নীলা বলেন, ‘এই রুবিই আমাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, সামিরার বাবাও চেষ্টা করেছেন। রুবির জীবন এখন হুমকির মুখে। আমাকে একদিন গালি দিয়ে এখন আমার কাছেই শেল্টার চাচ্ছেন। আমার ছেলের হত্যাকারীরা এত দিন রুবির মুখ বন্ধ রাখতে পারলেও এখন একটা কিছু হয়েছে, যে কারণে তিনি সব বলে দিতে চাইছেন। তাঁর জীবনের ওপর হুমকি আসছে বলেই রুবি সত্যটা আর আটকে রাখতে পারছেন না। ’ নীলা চৌধুরী নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখন দেশে ফিরতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন।

সালমানের মৃত্যুর পর একে একে অপমৃত্যু মামলার তদন্ত করে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি ও র্যাব। হয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্তও। সব কটি তদন্ত প্রতিবেদনেই এটিকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছর এপ্রিল মাসে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে পুলিশের নবগঠিত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইকে)। তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মো. সিরাজুল ইসলাম বাবুল। গত রাতে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রুবি নামের এক মহিলার ভিডিও আমরা দেখেছি। এটি তদন্তকাজে সহায়ক হবে। ’

তিনি জানান, মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোর্টের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো সাক্ষীকে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা চলছে তদন্ত করে ঘটনাটি উদ্ঘাটনের। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রুবিকে মামলার আসামি বলা যাবে না। কারণ মামলাটি তো হত্যা মামলায় রূপ নেয়নি।

সালমানের বাবা ১৯৯৬ সালে রমনা থানায় অপমৃত্যু মামলা করেছিলেন। তদন্ত করে যদি হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেবে। ’ এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, ‘রুবির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব। তাঁর বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ’ এই রুবি সালমান শাহর বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

রুবি গতকাল ফেসবুকে আরো লিখেছেন, ‘আমি সামিরার ফ্যামিলিকে বলছি, আমি খুবই স্বাভাবিক দেহ-মনে। তারা কিভাবে প্রমাণ করবে, আমি মেন্টালি আনস্টেবল? সামিরার বাবা শফিকুল ইসলাম হীরা কী করে আমার সম্বন্ধে এত কিছু জানে? আমি তো উনাকে দেখিনি ১৯৯৭-এর পরে। আমাকে নিয়ে এত খবর তিনি কী করে জানেন?’

৬ আগস্টের ভিডিওতে রুবিকে আবেগে, আতঙ্কে কাঁপতে দেখা যায়। তিনি বারবার সালমানের মা নীলা চৌধুরীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘সালমান শাহ, মানে ইমন আত্মহত্যা করে নাই, তাকে সামিরা, আমার স্বামী ও সামিরার পরিবারের সবাই মিলে খুন করেছে।

প্লিজ, কিছু করেন। আমি ভেগে এসেছি এইখানে। দয়া করে আপনারা কাউকে জানান। আমার ছোট ভাই রুমীকে দিয়ে খুন করানো হয়েছে। পরে রুমীকেও খুন করা হয়েছে। আমি জানি না, রুমীর কবর কোথায় করা হয়েছে। রুমীর লাশ তুলে যদি আবার পোস্টমর্টেম করা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে তাকে খুন করা হয়েছে। এর মধ্যে আমার খালু মমতাজ হাসান আছে, খালাতো ভাই জুম্মা থাকতে পারে।

আমার হাজব্যান্ড জ্যানলিন চ্যান, জন চ্যান নামে বাংলাদেশে পরিচিত ছিল, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে সাংহাই চায়নিজ রেস্টুরেন্টের মালিক ছিল। আমিই লাস্ট মানুষ, যে কিনা খুনের বিষয়ে জানে। আর আমি এটা প্রমাণ করতে পারব, ইনশাল্লাহ। দয়া করে একটু সাহায্য করেন। ’

তিনি আরো বলেন, “এরা বাসার মধ্যে আমাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিল; কিন্তু সুযোগ করতে পারেনি। আমি আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তুমি আমাকে খুন করতে চাও, না? ও আমাকে বলেছে, ‘তোকে তো খুন করলে সেই কবেই খুন করতাম। এটা তো আমি জানি যে আমাকে খুন করতে চায়। কারণ আবার কেসটি ওপেন হয়েছে। ”

এমটিনিউজ২৪/এম.জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে