মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০১৭, ০১:০৯:০৪

পাল্টেছে ভিলেন, বলিউডেও এবার চীন-ভারত লড়াই

পাল্টেছে ভিলেন, বলিউডেও এবার চীন-ভারত লড়াই

বিনোদন ডেস্ক : বিদেশের মাটিতে খুন হলেন ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা 'র'-এর তিন জন এজেন্ট। প্রথম জন স্নাইপার রাইফেলের গুলিতে, সাংহাইয়ে। দ্বিতীয় জন গুয়ানঝাউয়ের মাছ বাজারে, ভিড়ের মধ্যে ছুরির আঘাতে। তৃতীয় জন বেজিং শহরের উপকণ্ঠে, দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময়ে শক্ত দড়ির বিপজ্জনক ফাঁদ দেখতে না পেয়ে ছিটকে পড়ে।

তিন এজেন্ট চীনে খুন হওয়ার পর দিল্লিতে 'র'-এর সদর দফতরে জরুরি বৈঠক শুরু হল। যেখানে 'র'-এর প্রধান জানলেন, চীনে সংস্থার ২০ জন এজেন্ট এখনও কর্মরত। চিফ তখন উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন, "আমাদের মধ্যে বিশ্বাসঘাতক কে, সেটা না জানা গেলে ওরা সবাই খুন হবেন।"

তখন এক অফিসারের মন্তব্য, ''এই ভাবে আমাদের একটার পর একটা এজেন্ট মরতে থাকলে চীনের সেনার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে আমরা তখনই জানতে পারব, যখন ওরা অরুণাচল প্রদেশে পুরোদস্তুর ঢুকে পড়বে।''

বাস্তবের নয়, ছবির সংলাপ। বলিউডি ছবি 'ফোর্স-টু'। গত বছর নভেম্বরে মুক্তি পেয়েছিল। পরিচালক অভিনয় দেও-কে দূরদর্শী বলতেই হবে। যা হতে যাচ্ছে, তা তিনি পড়ে ফেলেছিলেন অনেক আগেই। কিংবা হয়তো অনেক আগে থেকেই হচ্ছে, তিনি সেটা জানতেন। আমভারতীয় জানতেন না।

ডোকলাম সমস্যা দিয়ে শুরু। তারপর গত কয়েক মাস যাবত্‍ চীন-ভারত যা চাপান-উতোর চলছে, তাতে এ দেশের স্পাই থ্রিলার ছবির অভিমুখ ঘুরতে বাধ্য। চীন বলছে, ১৯৬২ সালের যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের কথা ভারত যেন না ভোলে। ভারত বলছে, ২০১৭ সালে ভারতের সঙ্গে ১৯৬২ সালে ভারতকে গুলিয়ে ফেললে চীন ভুল করবে।

এই প্রেক্ষাপটেই ক্রমশ প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে 'ফোর্স-টু' ছবিটা। এত দিন স্পাই থ্রিলার ছবিতে শত্রুদেশ ছিল পাকিস্তান, এ বার চীন। এই ধরনের ছবিতে সাংহাই, গুয়ানঝৌ, বেজিংয়ের বদলে দর্শক করাচি, লাহৌর, ইসলামাবাদের মতো শহরই দেখতে-শুনতে অভ্যস্ত।

সে দিক থেকে 'ফোর্স-টু' ছবি একটা মাইলফলক, একটা ঝোঁক বা প্রবণতার শুরু। তবে ছবিটা যখন তৈরি হচ্ছে ও মুক্তি পাচ্ছে, তখন ভারত-চীনের মধ্যে এতটা ঠাই ঠাই অন্তত প্রকাশ্যে আসেনি।

১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পরপর তার প্রেক্ষাপটে তৈরি চেতন আনন্দের 'হকিকত' গোত্রের করুণ রসের সব ছবি বাদ দিলে চীনকে আগে কখনও ভারতীয়র ছবিতে শত্রু দেশ হিসেবে দেখানো হয়নি। চীনের মাটিতে 'র'-এর চরবৃত্তি ও তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তো বলাই হয়নি কোনও দিন, কোনও ছবিতে।

ডোকলামের আগে থেকেই বেশ কিছুকাল যাবত্‍ ভারতের রাজনীতিক এবং প্রশাসনের মাথায় থাকা অফিসার ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের একাংশ বলছেন, পাকিস্তান নয়, এখন ভারতের কাছে বেশি বিপদ হল চীন। সীমান্ত নিয়ে দু'দেশের মধ্যে বিরোধ তো মেটেইনি, উপরন্তু ভারতীয় সেনা-গোয়েন্দারা বিভিন্ন সময়ে চীনা সেনা তথা গণমুক্তি ফৌজ ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে বলে তথ্য দেন।

সে সব সংবাদমাধ্যমে বেরোয়। দু'দেশই তাদের সীমান্ত বরাবর সেনাবাহিনীর প্রযোজনীয় পরিকাঠামো নিরবচ্ছিন্ন ভাবে তৈরি করে যাচ্ছে। আবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির কাছে মায়ানমার হয়ে চীনা অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছাচ্ছে বলে ক্রমাগত দাবি করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

যা অবস্থা, তাতে অচিরেই দার্জিলিঙে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনে আরও উস্কানি দিতে চীনা গুপ্তচরররা কী ভাবে কাজ করেছে, তেমন উপাদান নিয়ে বলিউড বা টলিউড ছবি করতে পারে।

'ফোর্স-টু'-এর শেষে নায়ক জন আব্রাহাম বলবেন, ''আমাদের দেশ এখন সত্যিই বদলাচ্ছে।'' দেশ বদলাক না বদলাক, দেশজ স্পাই থ্রিলার ছবিতে দুশমন দেশটা পাল্টে যাচ্ছে। পাকিস্তান থেকে চীন!

এমটিনিউজ/এসএস 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে