বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ০৭:৫৯:৩০

বন্যাকবলিত ২ হাজার ৪০০ পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দিতে হেলিকপ্টার নিয়ে কুড়িগ্রামে অনন্ত জলিল

বন্যাকবলিত ২ হাজার ৪০০ পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দিতে হেলিকপ্টার নিয়ে কুড়িগ্রামে অনন্ত জলিল

বিনোদন ডেস্ক: দেশের উত্তরাঞ্চলে যখন বন্যা ত্রাণের আশায় বসে আছে মানুষ তখনই উড়াল দিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়ক অনন্ত জলিল। বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে তিনি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পৌঁছান। সেখানে তিনটি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত প্রায় দুই হাজার চারশ পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দিয়েছেন তিনি।

চিলমারীর থানাহাট ইউনিয়নের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক হাজার একশ পরিবারকে, রমনা ইউনিয়নের আটশ পরিবার এবং চিলমারী ইউনিয়নের পাঁচশ পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দেন তিনি। নিজে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার পাশপাশি অনন্ত জলিল বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার এনায়েনত নগর ইউনিয়নের বায়তুল আকসা জামে মসজিদে তিন দিনের জামাতের এসে অঝরে কাঁদলেন আলোচিত চিত্রনায়ক অন্তত জলিল। গত সোমবার ২১ আগস্ট বাদ ফজর সকালে তাবলীগের নিয়ম অনুযায়ী সকালের বয়ানের পর মোনাজাতে হাত তুলে কখনো অঝরে আবার কখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। এ সময় উপস্থিত মসজিদের মুসল্লীদের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।  

গত ১৮ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট সকাল পর্যন্ত পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ফতুল্লার ওই মসজিদটিতে আসেন অনন্ত জলিল। এই তিনদিনে বিভিন্ন সময় তাবলীগের পথে আসার নেপথ্যের কারণ জানিয়ে অনন্ত জলিল মুসল্লীদেরকে বলেন, ধানমণ্ডি তাকওয়ার মসিজদের খতিব মাওলানা ওসামা সেই ২০০৪ সাল থেকে আমাকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন দিন ৫০ বারও মোবাইলে ফোন দিয়েছেন। ধরিনি। তবে মোবাইল বন্ধ করতে পারিনি। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বায়াররা ফোন দেয়। তবে পিছু ছাড়েননি খতিব ওসামা।

তিনি বলেন, একদিন অফিসে বসেছিলাম। হঠাৎ জানালা দিয়ে বাইরে চোখ গেল। মনে পড়ল মাত্র ২০০ জন নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলাম। আজ কত শ্রমিক কাজ করছে। এসব তো কিছুই থাকবে না, আমিও থাকব না। মনের ভেতর কেমন যেন একটা ব্যথা অনুভব করলাম যে, সবই তো হলো ধর্ম-কর্মতো মনোযোগ দিয়ে করা উচিত। এছাড়া মাওলানা ওসামাতো আমাকে ভাল কথা বলছে। পরে তাকে ফোন দিয়ে জানাই আমি দ্বীনের পথে বের হতে চাই। বিশ্বাস করুণ, অনেক শান্তি লাগছে। এত শান্তি দ্বীনের পথে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওমরাহ করেছি। যদি কেউ বলে থাকে আমার জীবনে সবচেয়ে বেশী কে উপকার করেছে? বলব যারা আমাকে এই দ্বীনের পথে আনার জন্য ধারাবাহিকভাবে দাওয়াত দিয়ে গেছেন। তাদের কোন স্বার্থ নেই। তারা শুধু চেয়েছেন আমি অনন্ত জলিল আল্লাহওয়ালা হয়ে যাই। একজন মুসলমান হিসাবে ধর্মে মনোনিবেশ করি। বিভিন্ন হাদিসে পড়েছি, আল্লাহ বলেছেন তোমরা তার কথা শোন যারা বিনা স্বার্থে তোমাদের আমার দিকে ডাকে। কথা শেষ করেই সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করেন অনন্ত জলিলসহ তাবলীগের কর্মীরা।

এদিকে গত তিনদিন ধরেই অনন্ত জলিলকে দেখতে ওই মসজিদের সামনে ভিড় জমায় ভক্তরা। অনন্ত জলিলও তাদের সাথে দেখা করেন এবং শর্ত দিয়ে বলেন, 'আসেন সবাই নামাজ পড়ি'। মাসদাইর এলাকার হোটেল কর্মচারী সাফায়েত জানান, রবিবার অন্তত জলিলকে জোহরের নামাজের সময় দেখতে গিয়ে তিন ওয়াক্ত নামাজ শেষ করে মাগরিবের সময় বাসায় ফিরেছেন।  

প্রসঙ্গত, নায়ক অনন্ত জলিলের ঢাকাই চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে ‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর কয়েকটি সিনেমায় কাজ করলেও অনেকদিন হয় দূরে সরে আছেন অভিনয় থেকে। পরিচালনা-প্রযোজনায়ও এখন তিনি নেই। বর্তমানে ব্যবসার পাশাপাশি ধর্ম প্রচারে মনোযোগী হয়েছেন। গত জানুয়ারি মাসে ওমরাহ হজ পালন করেছেন, নিয়মিত ইসলামের প্রচারে তাবলিগ-জামাতে অংশ নিচ্ছেন। কিছুদিন আগে তাবলীগ জামাতের সঙ্গে রাজধানীর ধানমণ্ডির একটি মসজিদে ছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নারায়ণগঞ্জ বাইতুল আকসা মসজিদে আগামী ১৮ থেকে ২১ আগস্ট-এই ৩ দিন সময় কাটিয়ে গেলেন।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে