বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১১:২৯:৪৬

গভীর রাতের বন্ধু আমার

গভীর রাতের বন্ধু আমার

বিনোদন ডেস্ক: গভীর রাত। ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে ওঠে টেলিফোন। রিসিভার কানে ঠেকাতেই সেই চিরচেনা সুমধুর কণ্ঠ। সে কণ্ঠে উৎসুক জিজ্ঞাসা—শরীর এখন কেমন? এই প্রাণের মানুষ এমন করে আর কুশল জানতে চাইবেন না। কারণ, তিনি চলে গেছেন অনেক দূরে, যেখান থেকে আর ফেরা যায় না।

প্রিয় বন্ধু নায়করাজ রাজ্জাকের স্মৃতি হাতড়ে এ অনুভূতির কথা জানালেন বরেণ্য গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। কথায় তাঁর বুকচাপা কষ্টের রাগিণী।

গত সোমবার সন্ধ্যায় চলে গেছেন রাজ্জাক। সেদিন রাতে আনোয়ার দুচোখ এক করতে পারেননি। বারবার মনের পর্দায় ভেসে উঠেছে বন্ধুর মুখচ্ছবি। একজন রাজ্জাক কীভাবে নায়করাজ রাজ্জাকে পরিণত হন, তা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। রাজ্জাকই গণমাধ্যমকর্মীদের বলতেন, তাঁর সম্পর্কে গাজী মাজহারুল আনোয়ার অনেক ভালো জানেন, ভালো বলতে পারবেন। আনোয়ার থাকলে সেই অনুষ্ঠানে তিনিও যাবেন।

রাজ্জাক তখন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের এক সিনেমায় অভিনয় করছিলেন। আনোয়ারকে প্রায়ই তিনি বলতেন, সিনেমার গল্পের ওমুক সংলাপ, ওমুক বিষয়ে একটু পরিবর্তন আনা যায় না? বন্ধুর এমন প্রিয় জ্বালাতন চলতে থাকলে আনোয়ার রাজ্জাকের কাছ জানতে চান, তিনি রাতে ঘুমান কি না?
জবাবে রাজ্জাক তাঁকে বলেছিলেন, ‘ঘুমানোর সময় কই? মানুষ তো বেশি দিন বাঁচে না, চলে যায়। যত দিন বাঁচে, সে যেন কিছু করে যায়। তবেই কিছু রেখে যেতে পারে।’
এমন বিশ্বাস অবচেতন মনে জুড়ে ছিল নায়করাজের। তিনি জানতেন, বুঝতেন, বিশ্বাস করতেন—মানুষের আয়ু বড়ই কম। যতক্ষণ বাঁচা, ততক্ষণ শুধুই কাজ; যে কাজ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে, মানুষের হৃদয়ে অমর করে রাখে, যুগের পর যুগ মানুষ তাঁকে হৃদয়ে ধারণ করেন—তাই তো কাজ করতে করতে মৃত্যুর স্বপ্ন দেখতেন তিনি।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার
একজন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের হাত দিয়ে এসেছে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’—এমন অসংখ্য কালজয়ী গান। তাঁকে বড়ই ভালোবাসতেন রাজ্জাক। আনোয়ারের শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লায়। তাঁর বিয়ের গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন রাজ্জাক। বিয়ের কথা ঘনিষ্ঠজনদের জানাননি তিনি। বন্ধু রাজ্জাককেও না। তিনি মনে করেন, বিয়ের কথা আগে থেকে জানাতে গেলে অন্তত দুই হাজার লোককে দাওয়াত দিতে হবে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, চুপিচুপি বিয়ে করে ঢাকায় এসে অনুষ্ঠান করবেন। সবাইকে দাওয়াত দেবেন। বিয়ে করতে গিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দির রাস্তায় আবিষ্কার করলেন, দাঁড়িয়ে আছে ৫০টি গাড়ি। উঁকিঝুঁকি মারতেই দেখেন, দাঁড়িয়ে নায়করাজ রাজ্জাক। বন্ধু রাজ্জাক তখন হাসিমুখে আনোয়ারকে বলেন, ‘আমাদের নজর এড়িয়ে বিয়ে হবে নাকি!’
এরপর বিয়েবাড়িতে গেলেন রাজ্জাক। তাঁর শ্বশুরকে রাজ্জাক বলেন, ‘চাচা, আসসালামু আলাইকুম। আমাদের খাওয়ার দরকার নেই। মাল ডেলিভারি দেন চলে যাই।’ চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার বললেন, ‘বন্ধু রাজ্জাক মাঝেমধ্যে বলতেন, মালটা ডেলিভারি দেন, চলে যাই।’

গাজী মাজহারুল আনোয়ার বললেন, ‘রাজ্জাক গেছেন, উত্তম কুমারও গেছেন। মানুষ আসবে, মানুষ চলে যাবে। মহান শিল্পীরা আসেন, আবার চলেও যান। কিন্তু যাওয়ার অর্থ এই নয় যে তাঁরা চিরদিনের জন্য চলে গেছেন। তাঁরা মানুষের মনের আসনটা গ্রহণ করে নেন।’
একজন শিল্পীর মন কেমন হতে হয়—এ ব্যাপারে আনোয়ার বলেন, মহান শিল্পীরা মানুষের হৃদয় দখল করেন। হৃদয়ের আসন গ্রহণ করতে হলে কতটা সংগ্রাম করা দরকার, তা বুঝতে হবে। যদি কোনো শিল্পী অল্প কিছুদিনের মধ্যে মনে করেন, তিনি বিশাল কিছু হয়ে গেছেন। তাহলে সেই বিশাল বটবৃক্ষও কিন্তু সামান্য ঝড়ে ভেঙে পড়ে। তিনি চান না কোনো শিল্পী ভেঙে পড়ুক।

সৃজনশীল মানুষ কেমন হন জানালেন আনোয়ার। বললেন, ‘এসব মানুষের সুন্দর কিছু সৃষ্টির জন্য পাগল থাকতে হয়। কবিতার ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য আরেকজনকে অনুসরণ করলে হবে না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রেরণা। তাঁর ছায়ায় থেকে ভাবতে হবে কী ধরনের গুণাবলি থাকলে একজন লোক রবীন্দ্রনাথ হতে পারেন। একজন নজরুল হতে পারেন। তাঁদের কাছাকাছি না যেতে পারলেও সেই পথ ধরে হাঁটলে একদিন না একদিন সেই লোক তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যান।’
গাজী মাজহারুল আনোয়ার বললেন, ‘বন্ধু নায়করাজ রাজ্জাক বাংলার একজন মহান শিল্পী। বড়ই ভালো মানুষ। তিনি ছিলেন আমাদের দিকনির্দেশক বাতিঘর। সমুদ্রের অন্ধকারের এক বাতিঘর।-প্রথম আলো
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে