মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭, ০৩:০০:৪৪

সেলস গার্লের কাজ করছেন জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী মোনালিসা

 সেলস গার্লের কাজ করছেন জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী মোনালিসা

বিনোদন ডেস্ক : মোজেজা আশরাফ মোনালিসা । বাংলাদেশের এক সময়কার জনপ্রিয় মডেল, অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী । গালে টোল পড়া হাসি দিয়ে অনেক ভক্তের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। একসময় বিজ্ঞাপন, নাটক নিয়েই খুব ব্যস্ত ছিলেন।

কিন্তু হঠাৎ করেই সময়ের স্রোতে ক্যারিয়ারের ভাটা পড়তে থাকে তার। এরপর শুধুই দীর্ঘশ্বাস। ২০১২ সালের জুনে আমেরিকা প্রবাসী ফাইয়াজ শরীফের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন । একই বছরের ১২ ডিসেম্বর ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে মোনালিসা ও ফাইয়াজের বিবাবহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উভয় পরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরা উপস্থিত ছিলেন। একেবারে হুট করেই পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়।

কিন্তু বিয়ের পরেই হারিয়ে যেতে থাকেন মিডিয়া থেকে। পাড়ি জমান আমেরিকাতে। ভালোই চলছিল তার নতুন জীবন নতুন সংসার। কয়েক মাস যেতে না যেতেই খবর আসে যে স্বামীর সংসারে থাকছেন না তিনি।

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদেরও একটি খবর রটে তখন। এরপর থেকে মোনা নিজের মত করে আলাদা হয়ে যান। গেল বছর দেশে এসে কয়েকটি নাটকে অভিনয় করে আবারও চলে যান আমেরিকায়। বর্তমানে আমেরিকায় একা থাকলেও ভালো আছেন বলে জানান।

টানা তিন বছর পর ২০১৬ সালের এপ্রিলে খুব নীরবে দেশে ফেরেন আমেরিকা প্রবাসী জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী মোনালিসা। তার ভাষায় এটা ‘সারপ্রাইজ ভিজিট।

মোনালিসা কয়েক বছর ধরে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। ২০১২ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফাইয়াজ শরীফের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে  চলে গেলেও দুই বছরের মাথায় বিচ্ছেদ ঘটে মোনালিসার সংসারে।

এরমধ্যে তিনি সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি জীবন বেছে নেন। মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা টিভি চ্যানেল টাইম টিভিতেও কর্মরত ছিলেন।

এর আগে মোনালিসা নিউইয়র্কে সেলস গার্লের চাকরি করেছেন। কিন্তু টিভি চ্যানেলের চাকরি ছেড়ে তিনি আবারো প্রসাধনী সামগ্রী ম্যাকের সেলস গার্লের কাজ নিয়েছেন। জানা গেছে, নিউইয়র্কের কুইন্স মলে ম্যাক-এর স্টোরে গত মাস থেকে সেলস গার্লের কাজ করছেন তিনি।

পাশাপাশি একটি এয়ারলাইন্সের টিকিট কাউন্টারেও মোনালিসা টিকেট বিক্রির কাজ করেন বলে জানা গেছে।

মডেলিং ও অভিনয় ক্যারিয়ারের পড়ন্ত সময়ে সঙ্গীত শিল্পী ও কম্পোজার হাবিব ওয়াহিদের সাথে মোনালিসার সম্পর্কের বিষয়টি ব্যাপকভাবে চাউর হয়। কিন্তু সে সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত পরিণতি পায়নি। এরপর অনেকটা হুট করেই ফাইয়াজ শরীফ ফাসবীর নামে এক প্রবাসীকে বিয়ে করে নিউইয়র্কে পাড়ি দেন মোনালিসা।

জানা যায়, বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই মোনালিসার স্বামীর সাথে কলহ দেখা দেয় তার। জানা গেছে, আমেরিকায় বসবাসের সুযোগ তৈরি করতেই স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করেন তিনি।

মামলার পর একাকী জীবনযাপন করতে থাকেন মোনালিসা। চাকরিও খুঁজতে থাকেন। এ সময় নিউইয়র্কভিত্তিক একটি বাংলা টিভি চ্যানেলে চাকরি হয় তার। টিভি প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথমে তাকে মার্কেটিং বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হলেও সে কাজ না হওয়ায় অনুষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও তিনি কোনো যোগ্যতারই প্রমাণ রাখতে পারেননি। পরে সেখানে থেকে চাকরি ছাড়েন।

আমেরিকার মত দেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে শুরু হয় তার নতুন জীবন যুদ্ধ।

নিজেকে টিকিয়ে রাখতে রেস্টুরেন্টে কাজ করা থেকে শুরু করে অনেক প্রতিষ্টানে সেলসে তিনি কাজ করেছেন। এখনো করছেন্।

আর আগে মোনালিসার নামে বাংলাদেশী বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয় নানান সংবাদ যেমন কিছু কিছু মিডিয়া প্রচার করে মোনালিসা উধাও কিংবা হারিয়ে গেছেন এমন শিরোনামের খবর!

মোনালিসার এই উধাও হওয়ার বিষয়টি অনেকের অজানা নয় কারণ বেশ কিছুদিন থেকে মোনালিসা বাংলাদেশের মিডিয়াতে নতুন কোন কাজ করছেন না। তবে তার এই কাজ না করার পেছনে মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে তিনি আমেরিকাতে স্থায়ী হতেই মিডিয়ার কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।

মোজেজা আশরাফ মোনালিসা । জন্ম ৫ অক্টোবর, ১৯৮৭। মডেল, অভিনেত্রী, ও নৃত্যশিল্পী। তিনি ২০০০ সালে মিস ফটোজেনিক খেতাব লাভ করেন। ২০০২ এবং ২০০৭ সালে বাংলালিংক দেশ টু বিজ্ঞাপনে কাজ করার জন্য তিনি দুই বার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার এ তারকা জরিপে সেরা নারী মডেলের পুরস্কার লাভ করেন।

মোনালিসার জন্ম ১৯৮৭ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকায়। তার পিতা আশরাফ হোসেন এবং মাতা মমতাজ বেগম। ১৯৯৯ সালে তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন। তিন বোনের মধ্যে মোনালিসা সবার ছোট। তার বড় দুই বোন মুনিরা ও মারিয়া।

মোনালিসার সংস্কৃতি অঙ্গনে পদচারণা শুরু হয় ১০ বছর বয়সে নাচ ও মডেলিং দিয়ে। নৃত্যশিল্পী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে তুরস্ক যান। মডেলিংয়ে তারিক আনাম খান নির্দেশিত ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির বিজ্ঞাপন দিয়ে তিনি প্রথম সকলের নজর কাড়েন।

মডেলিংয়ের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় শুরু করেন। তিনি বয়স যখন একুশ, কাগজের ফুল নাটকে অভিনয় করেন। পরে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত তৃষ্ণা নাটকে অভিনয় করেন।

২০১১ সালে তিনি একপর্বের নাটক বাজি, একটু ভালোবাসা, বান্দুলুম ও রোমিওরা এবং ধারাবাহিক নাটক অল রাউন্ডার ও ভালো থেকো ফুল মিষ্টি বকুল এ অভিনয় করেন।

২০১২ সালে ঈদের বিশেষ নাটক চম্পাকলি এবং সাগর জাহান পরিচালিত সিকান্দার বক্স সিরিজের ছয় পর্বের মিনি ধারাবাহিক সিকান্দার বক্স এখন বিরাট মডেল এ মোশাররফ করিমের বিপরীতে অভিনয় করেন। এছাড়া মাহফুজ আহমেদের সাথে ফিজ-আপ এর বিজ্ঞাপনে কাজ করেন।

বিয়ের পর ২০১৩ সালে তিনি স্বামীর সাথে নিউ ইয়র্ক চলে যান। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বাংলা চ্যানেল টাইম টিভির প্রোগ্রাম প্রধান হিসেবে কাজ করেন। তিন বছর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং আবার মডেলিং ও অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এসময় তিনি যমুনা গ্রুপের ফ্যান ও ফ্রিজের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। বিজ্ঞাপন দুটি নির্দেশনা দেন সৈয়দ রাসেল।

 দীর্ঘ বিরতির পর তিনি আটটি ঈদের বিশেষ নাটকে অভিনয় করেন। তিনি মোশাররফ করিমের বিপরীতে সাগর জাহান পরিচালিত অ্যাভারেজ আসলাম ও সাজিন আহমেদ বাবু পরিচালিত ডিড সোলায়মান, ইরফান সাজ্জাদের বিপরীতে রায়হান জুয়েল পরিচালিত চিরকুট নাটকে অভিনয় করেন।

এছাড়া মিস্টার পারফেকশনিস্ট, আন্তর্জাতিক মামা, এবং সজল নূরের বিপরীতে অনন্য ইমন নির্দেশিত রোমান্টিক ফিনিক্স ফ্লাই নাটকে তন্বী চরিত্রে এবং নাহিদ বাবু পরিচালিত আমি তুমি ও সে নাটকে অভিনয় করেন।

আমি তুমি ও সে নাটকটি ধারণের প্রায় আটমাস পর ২০১৭ সালের এপ্রিলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশন এ প্রচারিত হয়।

মোনালিসা লিলি, তুমি যে আমার। লিলি, তুমি যে সবার।’এক দশক আগে লিলি বিউটি সোপের জিঙ্গেলটি অনেকের মনে ঝড় তুলেছিল। দোলা দিয়েছিলেন বিজ্ঞাপনটির মডেল মোনালিসাও।

ভুবনজয়ী হাসিমুখের মেয়েটির নাম তখন সবার মুখে মুখে। সঙ্গে সেই স্লোগান—লিলি, তুমি যে আমার। এক বিজ্ঞাপনেই সুপারস্টারের তকমা জোটে মোজেজা আশরাফ মোনালিসার।

একের পর এক অফার। তবে হেঁটেছেন বুঝে-শুনে। স্ক্রিপ্ট পছন্দ না হলে রাজি হতেন না। লিলি বিউটি সোপের বিজ্ঞাপনগুলো নির্মাণ করেন আহম্মেদ ইউসুফ পাভেল ও আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর তোশিবা টেলিভিশনে তাঁর সম্মোহনী নৃত্য, মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে করা ফিজ আপ মোনালিসাকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার আরেক ধাপ ওপরে।

এরপর অনেক দর্শকনন্দিত বিজ্ঞাপন ও নাটকে অভিনয় করেছেন ঢের। প্রস্তাব পেয়েছেন চলচ্চিত্রেও। কিন্তু বড় পর্দা নিয়ে কোনো আগ্রহ না থাকায় সেখানে দেখা যায়নি তাঁকে। ছোট পর্দায় মডেলিং ও অভিনয় নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।

মডেলিংয়ে অভিষেক হয়েছিল মোনালিসার। কয়েক বছর বিরতির পর আবার ফিরলেন সেই মডেলিং দিয়েই। যমুনা ফ্যান ও ফ্রিজের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন। সহ-মডেল এ বি এম সুমন। নির্মাণ করেছেন সৈয়দ রাসেল।

শুরুটা বেশ আগে। ১৯৯৭ সালে। অ্যাডকম এজেন্সি ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর বিজ্ঞাপনের জন্য নতুন মডেল খুঁজছিল। নাম লেখান মোনালিসা। ফটোশুট করে ছবি জমা দেন।

আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল না। বললেন, ‘ছেলেবেলা থেকেই সব কাজে আমার খুব আত্মবিশ্বাস। ছবি জমা দেওয়ার পর মনে হয়েছিল, আমি টিকে যাব।’ হলোও তা-ই।

অডিশন পর্ব পেরিয়ে মডেল হন ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর। বিজ্ঞাপনটির পরিচালক ছিলেন তারিক আনাম খান। শুটিং হয়েছিল কোক স্টুডিওতেই। প্রথম বিজ্ঞাপনটি তাকে ভালো পরিচিতি এনে দেয়।

এরপর বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপন করে আবার আলোচনায় আসেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২৫টির মতো বিজ্ঞাপন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাংলালিংক দেশ প্যাকেজ, জনি প্রিন্ট শাড়ি, তোশিবা টেলিভিশন, বোটানিক অ্যারোমা ট্যালকম পাউডার, লাভলি মেহেদি, রানী ফেয়ারনেস ক্রিম, লিলি বিউটি সোপ।

মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে সফট ড্রিংকস ফিজআপ ছিল তাঁর সর্বশেষ বিজ্ঞাপন।

নিজের প্রিয় বিজ্ঞাপন সম্পর্কে জানতে চাইলে মোনালিসা বলেন, ‘প্রিয়টি বাছাই করা খুব কঠিন। প্রতিটি বিজ্ঞাপনের গল্প ও থিমে ভিন্নতা থাকে। তবে বাংলালিংক, লিলি বিউটি সোপ, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর বিজ্ঞাপনগুলো এখনো মানুষ মনে রেখেছে।’
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে