বিনোদন ডেস্ক: ‘আমার মরণ নেই। মরেও বেঁচে থাকব বাংলা গানে। বেহেশতে আমি একা যেতে চাই না। অন্য ভাষাভাষীর সঙ্গে সেখানে আমি কী করব? আমি বাংলার মানুষ, বাংলা গানের সঙ্গেই ওপারেও থাকতে চাই।’
বলেছিলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী প্রয়াত আব্দুল জব্বার। ২০১০ সালের ২১ জুলাই সন্ধ্যায় থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে গান গাওয়ার ফাঁকে বলেছিলেন এমনি আরও অনেক কথা।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং গত শতকের ষাট ও সত্তর দশকের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আব্দুল জব্বার আর নেই। আজ ৩০ আগস্ট বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থা মারা যান তিনি।
থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের সেই অনুষ্ঠানে নিজের জনপ্রিয় গানগুলো নিয়ে বলেছেন অনেক কথা। দরাজ কণ্ঠের এ শিল্পী কখনো গভীর আবেগে আপ্লুত হয়েছেন, দ্বিধাহীনভাবে প্রকাশ করেছেন মনে জমিয়ে রাখা কথামালা। নিবেদন করেছেন প্রাণের আকুতি, হারিয়ে যাওয়া সংগীতজ্ঞদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা।
বললেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুরিদ। আমি তার গায়ক। তিনি খালি গলায় আমার গান শুনতেন। তিনি বেঁচে থাকলে দেশের সংগীতের অঙ্গন অন্য রকম হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক গেয়েছি। ধন্য আমার জীবন।’
‘তুমি কী দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, এপার-ওপার দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় হয়েছিল গানটি। বললেন, ওই সময় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অপূর্ব প্রশংসা করেছিলেন গানটির। বিশেষ করে সঞ্চারীর কথাগুলোর ‘প্রতিদিন কত খবর আসে কাগজের পাতা ভরে…’।
আব্দুল জব্বার স্মরণ করেন আরেক কীর্তিমান সংগীতজ্ঞ চট্টগ্রামেরই কৃতী সন্তান সত্য সাহাকে। বললেন, ‘চট্টগ্রামে আসার পথে মনে পড়ল মানুষটির কথা। এমন মানুষ আর হবে না। তার সঙ্গে আমার হৃদ্যতা ছিল। তার গান, সুর আর স্মৃতি আমাকে তাড়া করে ফেরে।’ এরপর তিনি গেয়ে শোনান ‘নিঠুর পৃথিবী দিয়েছ আমায় আঁখিজল উপহার’।
বললেন, ‘বাসের পেছনে লেখা থাকে—দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাস। মনে মনে ভাবি, তেমনটি যদি হতে পারতাম। এই তো সেদিন আমার একটি হাত ভেঙে গেল! প্রবাল চৌধুরী, যে আমার শোবারঘরে ঢুকে যেতে পারত। বাংলার দেবদাস, বুলবুল চলে গেল।
রাষ্ট্র শিল্প-সংস্কৃতির মূল স্রোতধারার উন্নয়নে কী করছে! জীবদ্দশায় শিল্পীরা কেমন থাকেন, কীভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরেন তার খবর কেউ নেন না। সরকারকে চিন্তা করতে হবে। এভাবে অকালে একেকটি প্রতিভা কেন হারিয়ে যাচ্ছে।
বেঁচে থেকে যদি স্বাধীনতা ভোগ করতে না পারি তবে স্বাধীনতার কী দরকার। এখন এক শ্রেণীর মানুষ ফণা তুলে আছে। জঙ্গিবাদ, হানাহানি আর সন্ত্রাস বাড়ছে। সাবধান, একবিন্দু রক্ত থাকতেও তাদের সুযোগ দেব না। আর ভুল করব না।’
এরপর তিনি গাইলেন ‘কিছু জ্বালা আমায় দাও, এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি কেন একা বয়ে বেড়াও’, ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রের সেই গান ‘প্রাসাদের মায়া ছেড়ে নেমে এসো মানুষের কাছাকাছি’, ‘বন্ধু তুমি শত্রু তুমি, তুমি আমার সাধনা’, ‘আমার দিকে তাকিয়ে দেখো তো আমাকে যায় কি চেনা/একাত্তরে যুদ্ধ করেছি আমি যে মুক্তিসেনা’, ‘ওরে নীল দরিয়া আমায় দে রে দে ছাড়িয়া’, ‘সালাম সালাম’। শব্দতরঙ্গ ভেঙে আসছে সুরের ধারা। ‘সকল শহীদ স্মরণে’ বিনম্রচিত্ত হয়েছিলেন সবাই।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে