বুধবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৩১:০১

‘সালমান ভাই-এর মৃত্যুর সাথে আমার কি সম্পর্ক?’

‘সালমান ভাই-এর মৃত্যুর সাথে আমার কি সম্পর্ক?’

বিনোদন ডেস্ক: ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় কালজয়ী চিত্রনায়ক সালমান শাহ্’র। এরপর তার মৃত্যু নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জনের স্বাক্ষী হয়ে আছে সংবাদপত্রের পৃষ্টাগুলো। আকস্মিক সালমানের এই মৃত্যুকে তার পরিবার ‘হত্যাকাণ্ড’ সন্দেহ করে আসলেও সালমানের স্ত্রী সামিরা একে ‘আত্মহত্যা’-ই বলে আসছেন। কিন্তু এই নিয়ে মতবিরোধ চলছে সেই শুরু থেকেই, যা আজও চলমান। গুঞ্জন ছিলো, সালমান ও সামিরা অসুখি পরিবার ছিলো। চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো সালমানের। এমনকি সিঙ্গাপুর থেকে নাকি একবার অ্যাবরশানও করিয়ে এসেছিলেন শাবনূর। যা মেনে নিতে পারেনি সামিরা।

সালমানের মৃত্যুর পর শাবনূরকে জড়িয়ে অসংখ্য পত্র-পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয় যে সালমানের মৃত্যুর কারণ মূলত শাবনূর। যদিও সালমান বেঁচে থাকতে নাকি শাবনূরকে জড়িয়ে সংবাদপত্রের এমন খবরে বিব্রত ছিলেন সালমান। শুধু তাই না, শাবনূরের সঙ্গে ১৪টি সিনেমায় জুটি বেধে কাজ করলেও একটা সময় সালমান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেধে কাজ না করার। শাবনূরের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলো। সত্যি সত্যি যে শাবনূরের সঙ্গে জড়িয়ে সেসময় এগুলো ‘গসিপ’ ছিলো সেকথা সম্প্রতি একটি জনপ্রিয় অনলাইনকে বলেছেনও চিত্রনায়িকা শাবনূর। সালমানের সঙ্গে ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিলো দাবী করে এই নায়িকা বলেন, সালমান শাহর বয়সের তুলনায় আমি তো ছোট ছিলাম। সে আমাকে পিচ্চি বলে ডাকত। যেমন-শুটিংয়ের সময় এই পিচ্চি এই দিকে আয়। মানে তুই বলে সম্বোধন করত। আবার বলত, পিচ্চি কাজটা ঠিকভাবে করিস। সালমান বলতো, দেখ-আমার কোন বোন নেই। তুই আমার বোন।  অথচ সালমানের মৃত্যুর পর সমস্ত ধকল যায় এই চিত্রনায়িকার উপর দিয়ে। সেসময় সুপন রায়কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শাবনূরের অস্থিরতা কিছুটা টের পাওয়া যায়:

শাবনূর: আমি তার পারছি না ভাই। চারদিকে যেভাবে আমাকে নিয়ে শুরু হয়েছে, আমারও বেশিদিন বেঁচে থাকা হবে না। আমি তো একটা মানুষ নাকি?.... কতো সহ্য করবো বলুন? তার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক, অনেক ভালো। সালমান ভাই চলে গেলেন। সেই শোক, সেই কষ্ট, সেই ব্যাথার বোঝা টানার আগেই আমাকে নিয়ে শুরু হয়েছে। ( চোঁখ দুটো ভিজে ওঠে তার, ডুকরে কেঁদে ফেলেন) সালমান ভাইকে তো খেলোই। এবার আমাকে শেষ করতে পারলে ওরা খুশি হয়।

ওরা কারা?
শাবনূর: আমাকে জড়িয়ে যারা লিখে যাচ্ছে। আমি এখনো বুঝতে পারছি না, সালমান ভাই’র মৃত্যুর সাথে আমার কি সম্পর্ক? আমি কি ওনাকে মেরে ফেলেছি? এও কি সম্ভব?

কানে কানে (সালমানের সাথে সামিরার উপস্থিতিতে ) কথা বলা নিয়েই তো...
শাবনূর: তার সাথে কানে কানে কোনো কথাই আমি সেদিন বলিনি। ডাবিং থিয়েটারে তো একজন দু’জন থাকে না। অনেকেই থাকে। কানে কানে কথা বলতেই বা যাবো কেন? এগুলো সব বানানো কথা। আপনি প্রেম পিয়াসী ছবির পরিচালক, ডাবিং থিয়েটারের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। আমি তো সেদিন সামিরার সাথে সোফায় গায়ে গা ঘেঁসে গল্প করেছি এবং বেশির ভাগ সময়ই তার সাথে গল্প করেছি। রাত ৯টা বাজতেই সামিরা আমাকে বললো, ঘুম আসছেরে। আমি বললাম, এতো তাড়াতাড়ি, আরেকটু বস। আমরা দুজনেই তুই সম্বোধন করতাম। রাত এগারেটার দিকে ও খোদা হাফেজ বলে চলে যায়। এখন কেন যে কানে কানে কথা বলার গুজব রটছে বুঝতে পারছি না।

বাসায় গিয়ে নাকি এ নিয়ে ওদের ঝগড়া হয়েছিল?
শাবনূর: তাতো আমি বলতে পারবো না। আমি কি তাদের সাথে গিয়েছি?

ওরা বাসায় পৌঁছায় কিছুক্ষণ পরেই নাকি আপনি সালমানের মোবাইলে রিং করেছেন।
শাবনূর: অসম্ভব। সব মিথ্যে কথা। তদন্ত করে দেখা হোক। তদন্ত করলে কতো কিছুইতো বেরিয়ে আসে। তাছাড়া সেদিন ডাবিং করে ক্লান্ত ছিলাম বলে এসেই ঘুমিয়ে পড়ি। কোনো ফোনই আমি করিনি। উল্টাপাল্টা কথা না বলে তদন্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

মৃত্যুর আগের দিন রাতে যেই টেবিল ফ্যান সালমান নিজ হাতেআছড়ে ভেঙ্গে ফেলেছিলেন বলে কথা উঠেছে, সেটা নাকি আপনি সালমানকে গিফট দিয়েছিলেন?
শাবনূর: ভেঙে ফেলা টেবিল ফ্যানটা যে আমারই দেয়া-- সেটা বুঝবো কেমন করে? সেটা নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। সালমান ভাই আমার সহকর্মী ছিলেন। এক সাথে আমরা অনেকগুলো ছবি করেছি। সেই সূত্রে আমার সাথে ওনার চমৎকার বোঝাপড়া ছিল। একজন সহশিল্পীকে উপহার দেয়া কি দোষের কিছু? সালমান ভাইও তো আমাকে এটা-ওটা গিফট দিতেন। (এই সময় শাবনূর এক সাথে তোলা সালমানের দেয়া ল্যামিনেটিং করা একটি পোষ্টার সাইজ ছবি দেখালেন।)

সালমান কখন কোথায় আপনার সাথে কী করলো, কী দিলো, কী বললো..... তার সব নাকি আপনি সামিরাকে জানাতেন?
শাবনুর: হ্যাঁ জানাতাম। আমি মনে করতাম জানানো উচিৎ। সামিরা তার স্ত্রী। তাকে জানানো আমার কর্তব্য। আমি যদি প্রেমই করতাম তাহলে কি সামিরাকে জানাতাম? আপনিই বলেন, জানাতাম? জানাতাম না। তারপর ও মানুষ কেন বিশ্বাস করে যে, আমাদের প্রেম ছিল। সালমান ভাই’র কোনো বোন ছিল না বলে আমাকে ছোট বোনের মতো জানতো। অথচ আজ উল্টাপাল্টা কতো কী বলা হচ্ছে।

আপনার কথা যদি সত্যি হয় তবে সামিরার মনে সন্দেহ জন্মালো কেন? কেন তিনি সালমানকে সন্দেহ করতেন?
শাবনূর: তার মন কেন ভেঙেছে, আমি জানি না। সেটা আমাকে নিয়ে কিনা-তাও জানি না। আমার তো বিশ্বাসই হয় না আমাকে সামিরা সন্দেহ করতো। সামিরার সাথে চমৎকার বন্ধুত্ব ছিল আমার। সালমানের সাথে অভিনয় করার জন্যে, জুটি গড়ে তোলার জন্যে ও-ই বেশি উৎসাহ দিতো। এমনকি সালমানের পোশাকের সাথে মিল রেখে আমার পোশাক পর্যন্ত ও নির্বাচন করে দিতো। আমরা একে-অন্যকে তুই -তোকারি সম্বোধন করতাম। এক সাথে কতো আড্ডা মেরেছি।আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আমার জন্যে সামিরার মনে সন্দেহ-অবিশ্বাস ডানা বেঁধেছে।

আপনি কি কাউকে এ ব্যাপারে সন্দেহ করেন?
শাবনূর: সালমান ভাই’র ফ্রেন্ড সার্কেল সম্বন্ধে আমি খুব একটা জানি না। আমি যদি বুঝতে পারতাম সামিরাকে কেউ এটা–ওটা বলছে প্রতিবাদ করতাম।  আজ অনেককেই সন্দেহ হয়। কিন্তু বলা ঠিক হবে না, হয়তো আমার কাছের লোকই তাকে কিছু বলেছে।

অভিযোগ আছে, কারো নির্দেশ মতো নাকি আপনি মিডিয়া হয়ে কাজ করেছেন এবং করতে বাধ্য হয়েছেন?
শাবনূর: আশ্চর্য! অন্য কারো হয়ে কাজ করার প্রশ্ন আসে কেন? আমি কি খেলার পুতুল। ইচ্ছেমত নাড়ালেই নড়বো। আমার কি কেউ নেই? এসব মিথ্যে কথা। আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র। ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিতে অন্যের কানে কথা তুলে দেয়ার লোকের অভাব নেই। এরকম অহরহ হয়ে আসছে।

সিঙ্গাপুরে আপনার সাথে সালমান কেন গেলেন?
শাবনূর: আমাকে সালমান ভাই বলেছিল, মেডিক্যাল চেকআপ করতে এসেছি এবং সামিরাও তা জানতো।

সামিরাকে নিয়ে নাকি সালমান কলকাতা যাচ্ছে এই কথা বলেছিল?
শাবনূর: আমি জানি না। সালমান ভাইতো আমাকে সেরকম কিছু বলেনি।

আপনারা নাকি সেখানে একসাথে ছবি তুলেছিলেন?
শাবনূর: সালমান ভাই’র সাথে কোনো ছবি তুলিনি। সালমান ভাই-ই একটা ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছিলেন। হুটহাট ছবিও তুলেছিলেন।

কোন ভিডিও ক্যাসেটের জন্য সালমান হন্যে হয়ে উঠেছিলেন?
শাবনূর: আমি নিজেও জানি না কোন ভিডিও ক্যাসেটের কথা বলা হচ্ছে। লোকের মুখে আমাকে আজ এসব কথা শুনতে হচ্ছে। আরো অনেক রটনা উঠেছে। লোকমুখে শুনেছি পত্রিকায় নাকি লেখা হচ্ছে আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে কে বা কারা আমাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের দৃশ্য রেকর্ড করেছে। তারা হয়তো জানে না, শাবনূর টাকার জন্যে ফিল্মে আসেনি। তারা জানে না, শাবনূর কোন পরিবারের মেয়ে? তারা জানে না, আমি আমার যোগ্যতায় আজ এ পর্যায়ে এসেছি।

আর আপনাকে করায়ত্ত করে রাখার জন্য যে ভিডিও ক্যাসেট করে রাখা হয়েছিল এবং যা উদ্ধার করার জন্যে আপনি সালমানকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন- সে সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
শাবনূর : অবাক হওয়ার মতো আরেকটি কথা শোনালেন। ভাইরে, গুজব  রটানোরও একটা সীমা থাকে। আমার পেছনে কেন যে এতো উঠে পড়ে লাগলো...। সব ষড়যন্ত্র। একদিন সব ফাঁস হবে।

আর আপনার দ্বারা গোপনে রেকর্ড করা কথোপকথনের যে ক্যাসেটের কথা শোনা যায়......?
শাবনূর: আরো কতো কী শুনবেন। যারা এসব লেখে তাদের কে গিয়ে আপনারা ধরেন না কেন? বলেন, প্রমাণ দেখাও।

ওরা কি তথ্য- প্রমাণ ছাড়া লেখে?
শাবনূর: কতো দেখলাম ফিল্মেতো এখন আর নতুন নই, অনেক দিন হলো। কতো ম্যাগাজিন দেখলাম আমার সাথে কথা না বলেই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। বানিয়ে বানিয়ে নিজেরাই লিখে দিয়েছে, আমি হেসেছি। ওসব পড়েও দেখিনি। দুঃখ কি জানেন, যে পাঠক ওই কাগজগুলো পড়েন, তাদের সবাইতো আপনার নেয়া সাক্ষাৎকার পড়বেন না।

সামিরার অনুপুস্থিতিতে সালমানের ফ্ল্যাটে যাওয়ার অভিযোগ কি মিথ্যে?
শাবনূর: আমার কষ্টটা এখানেই। পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে, সবাই আমাকে সন্দেহ করছে। আমি আজ পর্যন্ত সামিরার অনুপস্থিতিতে ওখানে যাইনি। যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। সামিরা না থাকলে আমি যাবোই বা কেন? সামিরার সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল। সে থাকলে মাঝমধ্যেই আমি বেড়াতে যেতাম। কিন্তু তাই বলে সামিরার অনুপস্থিতিতে! আপনি ফ্ল্যাটের সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করলেই সব জানতে পারবেন। সালমানের সাথে আমাকে ষড়য়ন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে। আমি জানি না কেন তা করা হচ্ছে। তার সাথে সবচেয়ে বেশি ছবি করেছি এটাই কি আমার অপরাধ? আমাকে জড়িয়ে পত্র পত্রিকায় ভিত্তিহীন, বানোয়াট খবর বেরুচ্ছে। আমি কি করবো বলুন? এমনিতেই মন খারাপ, তার ওপর রাতদিন ফোনে আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে, উদ্ভট-অশালীন কথা বলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমার ও আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।

কথা আর এগোয়নি। বিষণ্ণ শাবনূর। চোঁখে কান্না। কে তাকে বুঝবে? সান্তনা দেবে? বলবে – মন খারাপ করো না শাবনূর, শান্ত হও, শক্ত হও। আসলেই শাবনূর বড়ো একা। নিঃসঙ্গ খেলার চালে হেরে গেছেন তিনি...।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে