রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:৪৫:০৭

রিকশাওলা, ট্রাক ড্রাইভার, বাড়ির বুয়ার মতো দর্শক সবাই আমাকে চেনে: এটিএম

রিকশাওলা, ট্রাক ড্রাইভার, বাড়ির বুয়ার মতো দর্শক সবাই আমাকে চেনে: এটিএম

বিনোদন ডেস্ক: সুদীর্ঘ অভিনয় জীবনে কয়টি ছবিতে কাজ করেছেন— এটিএম শামসুজ্জামানের কাছে এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কিছুটা কঠিন! দেশের বর্ষীয়ান অভিনেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা, গল্পকার— এসব পরিচয়ও রয়েছে তার নামের পাশে। তবে দর্শকদের কাছে তিনি প্রিয় হাসির অভিনেতা হিসেবে, কখনওবা খল অভিনেতা!

এটিএম শামসুজ্জামানের ভক্ত অগণন। আজ ১০ সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন। এই তো কিছুদিন আগেই একটি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সামনে নানান বিষয় নিয়ে কথা বললেন তিনি। সহজাতভাবেই সেখানে ছিল নাটুকে বাচনভঙ্গি। পড়েছে হাসির রোল। কিন্তু কথার মাঝে তীব্রভাবে বের হয়ে এসেছে তার কিছু হতাশা। প্রাপ্তি এবং না পাওয়ার ফারাক। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকপ্রাপ্ত এ অভিনেতা নিজেকে যথাযথভাবে মেলে ধরতে না পারার আফসোসও তুলে ধরেছেন।

গত ৮ সেপ্টেম্বর ওই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে এটিএম শামসুজ্জামানের মুখে শোনা গেছে, ‘উৎপল দত্ত আমাকে বললেন, ‘তুই চলে আয়। ওদেশে তোর কিছু হবে না।’ কিন্তু আমি যাইনি। এখানেই থেকেছি। সিনেমা দুইভাবে চলে। একটা হলো হিট, আরেকটা হলো মানুষের অন্তরে ঢুকে যাওয়া। রিকশাওলা, ট্রাক ড্রাইভার, বাড়ির বুয়ার মতো দর্শক সবাই আমাকে চেনে। কিন্তু আমি হনুমান! সবাই ভাবে এর কাছে এলে বান্দর খেলা দেখা যাবে। আমি নিজেই নিজেকে বিচার করতে পারি। আই অ্যাম নট অ্যান অ্যাক্টর। আমাকে অভিনয় করার সুযোগই দেওয়া হয়নি। আমি এখন বাংলাদেশের বিখ্যাত হনুমান!’

নিজে ভালো চরিত্র পাননি। অনেকে সুযোগ দেননি— পাঁচবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এ অভিনেতা সে প্রসঙ্গও আনেন। তার ভাষ্য, ‘কোনোদিন একটা বড় পরিচালক আমাকে কাস্ট করলেন না। যদি ফেল করতাম তাহলে তারা বলতে পারতেন, তুই ফেল করছস। স্বীকারও করতাম ফেল করছি। সুযোগ না দিয়েই তারা বুঝিয়ে দেন, তুই ফেল!’

বিষয়টির বিশ্লেষণে এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, “আবদুর রাজ্জাক সাহেব আমাকে একটি সুযোগ দেন। ছবিটি ছিল ‘শাবানা’। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বলেছেন, যদিও আমার উপন্যাসের নাম শাবানা, তারপর এর কেন্দ্রীয় চরিত্র সেতাব মণ্ডল। সে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছি। ভারতে এটি করেছেন কামুক বন্দোপাধ্যায় আর এপারে আমি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস আর হবে না। ‘বিষবৃক্ষ’ হয়েছে, ‘বিরহ ব্যথা’ শিরোনামে। দুই জমিদারে গল্প- নগেন্দ্র, দেবেন্দ্র। একজন আমি, অন্যজন রাজ্জাক সাহেব। এরপর ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ ও ‘চাপাডাঙার বউ’। কত কত ছবি করলাম, কিন্তু এই চারটি ছবির বাইরে বলার মতো আর কই! কই গৌতম ঘোষ, ঋত্বিক ঘটক তো আমকে কাস্ট করলেন না। যদি করতেন তাহলে বুঝতাম, আমি ফেল করেছি। যেখানে চরিত্রই পেলাম না, তাই নিজেকে হনুমান বানিয়েছি!”

পুরস্কার নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে এটিএম শামসুজ্জামান বললেন, ‘মরণোত্তর পুরস্কার সম্ভবত পৃথিবীর অন্য কোনও রাষ্ট্রে দেওয়া হয় না। এ দেশে দেওয়া হয়। লোকটা না খেয়ে, না দেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরলো। পাঁচ-দশ বছর পর তাকে মনে পড়লো, একটা পুরস্কার দিলাম। আফসোস।’
দেশের ছবিগুলো নিয়ে এটিএম শামসুজ্জামানের বিশ্লেষণ, ‘১৯৬১ সালের দিকে কিছু পরিপূর্ণ চলচ্চিত্র হয়েছিল। এরপর আর আমরা আমাদের সংস্কৃতি ধারণ করতে পারিনি। আমাদেরকে নিজেদের সংস্কৃতি ধারণ করতে হবে। সিনেমায় সংস্কৃতি ধারণ হয়। অনেক সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছি। এখনকার ছবিতে সেই প্রবণতা দেখিনি।’

এটিএম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করেছেন ‘জলছবি’ ছবিতে। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন তিনি।

অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। আজও তিনি দর্শকের কাছে নন্দিত।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে