ম্যাজিস্ট্রেট থেকে শিল্পী হাসিবুল হক
প্রিয়লাল সাহা : ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক তিনি। আদালতের এজলাসে বসে শুনানি গ্রহণ করা, তাৎক্ষণিক আদেশ দেয়া অথবা নথি পর্যালোচনা পড়ে আদেশ দান, রায় লেখা আরো কত কাজ তার। তাতে কি? হৃদয়ের গহীনে যে সুপ্ত আছে এক শিল্পী মন। এক হৃদয়ে তিনি একাধারে বিচারক এবং শিল্পী। তিনি আর কেউ নন, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক।
দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত প্রযোজনা সংস্থা সংগীতার ব্যানারে বিচারক হাসিবুল হকের শিল্পী সত্তার প্রথম বহিঃপ্রকাশ ‘অন্য আমি’ বাজারে এসেছে। এ আয়োজনের সবক’টি গান তিনি নিজেই লিখেছেন। সুরারোপও করেছেন তিনিই। তার লেখা ও সুর করা দু’টি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন দেশের দুই নন্দিত শিল্পী সামিনা চৌধুরী ও ন্যান্সি।
গানগুলো প্রায় সব বয়সী শ্রোতাদেরই শোনার উপযোগী। শুনতে শুনতে যে কেউ হয়ে উঠতে পারেন স্মৃতিকাতর। গানে যন্ত্রের আধিক্য না থাকায় শিল্পীর প্রতিটি উচ্চারণ খুব ভালোভাবেই বোঝা যায়। গানগুলোতে স্মৃতিকাতর মনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে।
এ নিয়ে তার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। কবে ও কীভাবে সংগীতে হাতেখড়ি। জবাবে বলেন, ‘পারিবারিকভাবেই গানের একটা আবহ পেয়েছি। বাবা প্রাথমিক শিক্ষক। তিনি নিজেই গান লিখতেন, সুরারোপ করতেন ও গাইতেন। তিনি চলনবিলের (আঞ্চলিক) গানের অনুরক্ত। কিন্তু বাবা চাইতেন না আমি এ জগতে আসি। তবে গানের প্রতি একটা ভালোবাসা সেই ছোটবেলা থেকেই ছিল। নিজের পড়ালেখা চাকরি সব মিলিয়ে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় ছিল মন।’
‘ভিতরের শিল্পী মনটা সব সময়ই চাইতো গান লিখি, গান করি। তারপর আস্তে আস্তে লিখতে থাকি। আমার লেখা সাতটা সেরা গান নিয়ে যোগাযোগ করি প্রযোজনা সংস্থা সংগীতার সাথে। তারা রাজী হন। দু’টি ডুয়েট গানে দু’জন প্রথিতযশা দেশবরেণ্য শিল্পীও কণ্ঠ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এভাবেই চলে আসে আমার প্রথম অ্যালবাম ‘অন্য আমি’, বললেন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল।
২০০৮ সালের বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি চলে আসেন বিচারাঙ্গনে। আদালতের যাবতীয় কাজকর্ম সেরে অবসরে বাসায় সংগীত চর্চা করেন। মনের কথাগুলোতে মনে মনেই সুর চাপিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করেন কেমন হচ্ছে? শ্রোতাদের কেমন লাগবে? তারপর অন্তরের সায় পেলে কাগজ বন্দী হয় সেই কথা। আবার বন্দী হয় সুরের জালে। এরপর নানা পর্যায়ে চলে কথা ও সুরের ভাঙা-গড়ার (সম্পাদনা) খেলা। একটা গানকে শ্রোতাদের সামনে হাজির করাকে তিনি একটা নতুন মানব শিশুর পৃথিবীতে আগমনের মতোই মনে করেন।
নিজের গান লেখা, সুর করা ও শ্রোতাদের সামনে হাজির করতে পারায় তিনি কতটা তৃপ্ত- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি আমার প্রথম অ্যালবাম। এতো মাত্র শুরু। তাছাড়া শিল্পীর মনে অতৃপ্তি থাকে বলেই শিল্পী প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে নিরন্তর। আমার বেলায়ও একই সত্য প্রযোজ্য।
খুব সহসাই তার নতুন কোনো অ্যালবাম আসছে না। শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।
আপনার কোনো গান যদি সিনেমায় যোগ করার প্রস্তাব আসে আপনি কি করবেন অথবা প্লেব্যাকের প্রস্তাব পেলে কি করবেন? জবাবে বলেন, ‘সিনেমার মান বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।’
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। এক কন্যা ও স্ত্রী নিয়েই তার সংসার। সংগীত সাধনায় স্ত্রী সবসময়ই তাকে উৎসাহিত করেন বলেও জানান হাসিবুল হক।
শিল্পী হাসিবুল ও ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হকের মধ্যে কোন পরিচয়ে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? বললেন, ‘দেখুন আমি পেশাদার শিল্পী নই। পেশায় আমি আপাদমস্তক একজন বিচারক। এটা আমার প্রধান পরিচয়। আর মনের টানে আমি গান গাই, গেয়েছি। এটা আমার দ্বিতীয় পরিচয়। তবে কোনোটিতেই আমি অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না।’ সূত্র : বাংলামেইল
৮ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম
�