সিসিইউতে রিয়াজের সঙ্গে কার কথোপকথন?
বিনেদান ডেস্ক : আমি সিসিইউতে শুয়ে ঘোরের মধ্যে দেখছিলাম স্যার (হুমায়ূন আহমেদ) আমাকে দেখতে কেবিনে এসেছেন। স্যারের হাতে ফুল ও কিছু স্যালাইনের প্যাকেট। চারদিকে উৎসব উৎসব ভাব।
- রিয়াজ ভং করো না। কী হয়েছে তোমার?
- কই স্যার না তো।
- চলো চলো, ওঠো। বিরাট পরিকল্পনা আছে। নেপালে যাব। ফ্রেস হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিবা। চলো।
- আচ্ছা স্যার চলুন যাই।
স্যার থাকলে বোধহয় এমনই হতো। হুট করে কোন একদিন এমন একটা পরিকল্পনা ফেঁদে ফেলতেন, রোগ-শোক যা থাকত তা সব এক নিমিষেই চলে যেত। আমি যখন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছি তখন আমার প্রায়ই মনে হত যে স্যার আমাকে দেখতে আসত। আসলে স্যার আমাকে এত ভালবাসত তাকে ভুলে থাকা সম্ভব নয়।
ভালোবাসা কি মাপা যায়? যায় না। হুমায়ূন স্যারের ভালোবাসা, স্নেহ ছিল আসলে অনেক ঘটনার সমন্বয়। আবার ঘটনা দিয়ে এটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। স্যারের জন্মদিনে আমি ধরেই নিতাম আমাকে যেতে হবে। স্যার কখনও আলাদাভাবে কাউকেই বলতেন না। আবার স্যার এটাও মনে করতেন আমরা যাব। তুমুল আড্ডায় আর স্যারের মুখে গল্প শুনে সময়গুলো পার করব। স্যারের বাসায় গেলে দুটো বিষয় থাকত, আড্ডা ও গান। স্যার গানের আসর বসাতে ভালোবাসতেন।
ছোট একটা ঘটনা বলি, আমি প্রায় রাতে ফিরতাম। একদিন প্রায় ২টার দিকে ফিরেছি নুহাশ পল্লীতে। দেখি স্যার আমার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছেন। এ ভালোবাসার মূল্যায়ন কী? স্যার হয়তো অনেকের জন্য অপেক্ষা করতেন। কিন্তু আমার জন্য এত রাত পর্যন্ত স্যার দাঁড়িয়ে থেকেছেন, এটা আমাকে ভাবতে ভালো লাগে। আর আমি আসলে অন্যদের চেয়ে বোধহয় রাত করেই বেশি গিয়েছি।
এই যে শরীরের উপর এত বড় ধকল (হৃদরোগ)। কিন্তু আমি হয়তো এত তাড়াতাড়ি ক্যামেরায় ফিরতাম না। শুধু স্যারের উপন্যাস অবলম্বনে ছবি নির্মাণ হচ্ছে (কৃষ্ণপক্ষ) দেখে দ্রুত ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। আর তাছাড়া আমার জন্য শাওনসহ (ছবির পরিচালক মেহের আফরোজ) সবাই বসে থাকছেন, এটা মেনে নিতে পারছিলাম না। সবাই স্যারের খুব কাছের মানুষ। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে পারিনি। স্যারের যে ভালোবাসাটা সবাইকে দিয়েছেন এটা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু স্যারের ছবি বলেই আমি ঝুঁকি নিয়ে কাজটি শেষ করেছি। আজ তার জন্মদিন।
আপনি কোথায় আছেন স্যার, জানি না। আশা করছি, ভালো আছেন। আপনি হয়তো একমুখী ভ্রমণে বেরিয়েছেন। আর আমরা বহু মুখ আপনার পানে চেয়ে আছি। আপনি সরাসরি না থাকলেও আমাদের মনের কোণে, স্মৃতির কোষে আছেন। বেঁচে আছেন কাজে। আপনার কারণে প্রতিটি মুহুর্ত মিস করি। নিজেকে ধন্য ভাবি, জীবনের কিছুটা অংশ আপনার সঙ্গে বিনিময়ের সুযোগ পেয়েছি বলে। শুভ জন্মদিন স্যার…
১৩ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ