মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:৩১:৪৮

আতঙ্কিত আমির খান, ছাড়তে চাচ্ছেন ভারত!

আতঙ্কিত আমির খান, ছাড়তে চাচ্ছেন ভারত!

বিনোদন ডেস্ক : আতঙ্কিত আমির খান ও তার পরিবার। তারা এমনটাই আতঙ্কিত যে, ভারত ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন। ভারতের চলমান অসহিষ্ণুতা সম্পর্কে সোমবার দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি এমনটাই জানান। তিনি বলেন, খবরের কাগজ পড়ে এবং টিভি দেখে তিনি আতঙ্কিত। দেশ জুড়ে অসিহষ্ণুতার পরিবেশ নিয়ে ভীত তার স্ত্রী কিরণ রাও-ও। গত কয়েক মাস ধরে গোটা দেশ জুড়ে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে, সেটি হল অসহিষ্ণুতা। এর আগে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন শাহরুখ খান। নিজের ৫০তম জন্মদিনে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশে চরম অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আমরা কয়েক দিনের মধ্যেই অন্ধকার যুগে ফিরে যাব।’ কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে এসে অসহিষ্ণুতা নিয়ে সরব হয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। মুখ খুলেছেন সলমন খান, প্রবীণ সরোদশিল্পী আমজাদ আলি খান প্রমুখ। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল আমির খানের নাম। এ দিন দিল্লির অনুষ্ঠানে আমির বলেন, ‘আমরা কাগজে পড়ছি কী ঘটছে। টিভিতে দেখছি কী ঘটছে।এবং অবশ্যই আতঙ্কিত হচ্ছি। কিরণের সঙ্গে যখন এই নিয়ে কথা বলি, ও জিজ্ঞাসা করে, আমাদের কি ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত? ও ওর বাচ্চার জন্য ভীত। আমাদের চারদিকের অবস্থা কী হবে, তা ভেবে ও ভীত। ও এখন খবরের কাগজ কাগজ খুলতে ভয় পায়।’ আমিরের মতে, ‘গত ছয়-আট মাস ধরে দেশ জুড়ে নিরাপত্তার অভাব এবং আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে। আমিরের মতে, নিরাপত্তা ও সুবিচারের প্রয়োজনীয়তা সব সমাজেই রয়েছে।’ গত কয়েক মাস ধরে অসহিষ্ণুতা নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। তা সে দাদরিতে গো-মাংস খাওয়ার গুজবে প্রৌঢ় মুহাম্মদ আখলাখকে পিটিয়ে খুন হোক বা সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কন্নড় লেখক এম এম কালবুর্গীকে গুলি করে হত্যা। দিল্লির কেরল ভবনের ক্যান্টিনে গরুর মাংস বিক্রি হওয়ার গুজবে পুলিশের তল্লাশি হোক বা বেঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম টিপু সুলতানের নামে করার প্রস্তাব দেওয়ার জন্য বিশিষ্ট নাট্যকার-অভিনেতা গিরিশ কারনাডকে টুইটারে ‘কালবুর্গী বানিয়ে দেওয়ার’ হুমকি। আর এই ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু না বলার জন্য নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের দিকেও আঙুল উঠেছে। আন্তর্জাতিক মহলেও সমালোচনা হয়েছে এই সব ঘটনার। কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বারাক ওবামা বা ডেভিড ক্যামেরনও। শেষে ব্রিটেন সফরে গিয়ে সাংবাদিকদের সরাসরি প্রশ্নের মুখে পড়েন মোদী। তখন ভারতকে ‘বুদ্ধ-গাঁধীর দেশ’ বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, অসহিষ্ণুতা বরদাস্ত করা হবে না। আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীর এমন বার্তাতেও কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারেননি দেশের বড় সংখ্যক মানুষ। সেই সুরই আজ ফিরে এল আমিরের গলায়। এমন একটা অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেছেন, যেখানে একটু আগেও বসেছিলেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং বেঙ্কাইয়া নায়ডু। ছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। অবশ্য আমির যখন এ কথা বলছেন অরুণ আর বেঙ্কাইয়া তত ক্ষণে চলে গিয়েছেন। তবে তখনও দর্শকাসনে হাজির বিজেপির দুই হেভিওয়েট নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ এবং রাজীবপ্রতাপ রুডি। তাদের সামনেই আমির বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রে বা রাজ্যে পাঁচ বছরের জন্য যাঁদের নির্বাচিত করেছি, তাদের কাছ থেকে অনেক প্রত্যাশা থাকে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে সেই সব নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কড়া ব্যবস্থা নেবেন, এটাই আমরা দেখতে পছন্দ করি। এমনটা হলে একটা নিরাপত্তার বোধ তৈরি হয়। কিন্তু যখন তা হয় না, তখন একটা নিরাপত্তার আশঙ্কা তৈরি হয়।’ অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদও চলছে। লেখক-শিল্পী-চলচ্চিত্র পরিচালক-বিজ্ঞানীরা তাঁদের পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন। পুরস্কার বা সম্মান ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ কত দূর ঠিক, তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। এ দিন পুরস্কার বা সম্মান ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানানোকেও সমর্থন জানিয়েছেন আমির। তার কথায়, ‘পুরস্কার বা সম্মান ফিরিয়ে দিয়ে কোনও সৃষ্টিশীল মানুষ তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করতেই পারেন। এটাই তাঁদের প্রতিবাদের ভাষা। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি।’ এর পরেই আমির জানান, যে কোনও অহিংস আন্দোলনেই তার সমর্থন রয়েছে। বলিউডের নায়কের কথায়, ‘যতক্ষণ কেউ অহিংস পথে প্রতিবাদ জানান, ততক্ষণ তার প্রতিবাদ করার অধিকারও রয়েছে।’ অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে বিজেপিকেও এক হাত নিয়েছেন আমির। তিনি বলেন, ‘টিভির ডিবেট শো-তে দেখি বর্তমান শাসক দল বিজেপি অসহিষ্ণুতার জন্য বিভিন্ন ঘটনাকে দায়ী করে। তারা বারবার ১৯৮৪ সালের কথা বলে। কিন্তু এটা কোনও কাজের কথা নয়।’ একই সঙ্গে ধর্ম আর সন্ত্রাসবাদীর মধ্যে ফারাক করতে গিয়ে তিনি বলেন ‘কাউকে হিংসাত্মক কাজ করতে দেখলে প্রথমেই আমরা একটা ভুল করে বসি। তাদের হিন্দু সন্ত্রাসবাদী বা মুসলিম সন্ত্রাসবাদী বলে দেগে দেই।’ সূত্র: আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে