বুধবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:৪০:৩৭

‘দিলওয়ালে’ বনাম ‘বাজিরাও মস্তানি’

 ‘দিলওয়ালে’ বনাম ‘বাজিরাও মস্তানি’

বিনোদন ডেস্ক : বলিউডের সব চোখই এখন একটা দিনের দিকে তাকিয়ে। ১৮ ডিসেম্বর। কেন? ওই একই দিনে যে মুক্তি পাচ্ছে সঞ্জয় লীলা বানশালির ‘বাজিরাও মস্তানি’ আর শাহরুখ খানের ‘দিলওয়ালে’। বক্স অফিসে এই মুখোমুখি মহারণে তাই ইন্ডাস্ট্রির সবার মনে একটাই প্রশ্ন: কেন দুটো বড় মাপের ছবি রিলিজের জন্য বেছে নেওয়া হল একই দিন? শুধুই কি ইগোর লড়াই? নাকি ব্যবসার জন্য সেরা দিনকে বেছে নেওয়ার চেষ্টা? অনেকে কিন্তু ব্যবসার জন্য সেরা দিনের থিয়োরিকে মানতে রাজি নন। কারণ ‘বাজিরাও মস্তানি’র রিলিজের দিন ঠিক হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। পরে টিম ‘দিলওয়ালে’ ঠিক করে ওই একই দিনে রিলিজ করবে তাদের ছবিও। এটাও শোনা যায়, ইরোস ইন্টারন্যাশনালের কিশোর লুল্লা আর শাহরুখ নাকি অগস্টে একটা মিটিং করেছিলেন। সেই মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছিল বক্স অফিসের এই মুখোমুখি লড়াই এড়ানো যায় কি না। যদিও এই খবর ঠিক না ভুল সেটা কেউ বলতে পারেনি। কিন্তু কথা উঠেছিল ‘বাজিরাও মস্তানি’ মুক্তির দিন নাকি পিছিয়ে যেতে পারে। যদিও এই গুজবকে সপাটে উড়িয়ে দিয়েছিল ইরোস ইন্টারন্যাশনাল। সে যাই হোক ইন্ডাস্ট্রির সবাই কিন্তু মনে করে বক্স অফিসের এই যুদ্ধ প্রায় বিশ্বযুদ্ধের সামিল। ওরম্যাক্স মিডিয়ার শৈলেশ কপূর বলছিলেন, ২০০১-এ ‘লগান’ আর ‘গদর’য়ের ক্ল্যাশের পর এটাই বক্স অফিসের সব থেকে বড় সংঘর্ষ। ‘জাব তাক হ্যায় জান’ আর ‘সন অব সর্দার’ বা ‘তারে জমিন পর’ আর ‘ওয়েলকাম’— ছবিগুলির ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছিল। কিন্তু কোনওটাই ‘দিলওয়ালে’- ‘বাজিরাও মস্তানি’র টক্করের মতো নয়। এই দুটো ছবিতেই কিন্তু চার পাঁচটা করে বড় বড় নাম আছে। দুই পরিচালকেরই সমান শক্তিশালী বক্স অফিস আছে। প্রত্যেকেই দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবেন কার ওপেনিং বেশি হয়। কিন্তু আসল পরীক্ষাটা হবে দ্বিতীয় সপ্তাহে, কারণ ওটাই ক্রিসমাসের উইক এন্ড। দর্শকের প্রশংসা যে-ছবি পাবে, সেই হবে দ্বিতীয় সপ্তাহের রাজা। আর স্বাভাবিক ভাবেই এই দ্বৈরথেরও বিজয়ী।’’ শাহরুখ খান আর সঞ্জয় লীলা বনশালির টক্করের ইতিহাসটা দীর্ঘদিনের। যদিও মনে হয় বানশালি সেটা মনে রাখতে চান না। ২০০৭-এর দিওয়ালিতে রিলিজ করেছিল বানশালির ‘সাঁওয়ারিয়া’ আর শাহরুখের ‘ওম শান্তি ওম’। রনবীর-সোনম কপূরের ‘সাঁওয়ারিয়া’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। অন্য দিকে ‘ওম শান্তি ওম’য়ের বক্স অফিস ছুঁয়ে ফেলে তুঙ্গ সাফল্য। আর প্রথম ছবিতেই বক্স অফিস সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে নিজের জায়গাও পাকা করে ফেলেন দীপিকা পাড়ুকোন। মজার ব্যাপার হল, এই বার সেই দীপিকা কিন্তু বনাশালির ‘মস্তানি’। ‘ভাগের মা’ ইন্ডাস্ট্রি একই দিনে দু’টো ছবি রিলিজ করলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কেমন যেন দু’ভাগ হয়ে যায়। পরিচালক রমেশ তউরানি যেমন মনে করেন দু’টো বড় ছবির এই সংঘর্ষ ইন্ডাস্ট্রির স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর। কথায় কথায় বললেন, ‘‘এ রকম অবস্থায় ব্যবসায় বড়সড় ধাক্কা লাগবেই।’’ তিনি আরও জানান অতীতেও এ রকম ঘটনা ঘটেছে। একই দিনে দু’টো বড় মাপের ছবি মুক্তি পেয়েছে। তাতে ব্যবসা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক দিক দিয়েও অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে ইন্ডাস্ট্রির। তবে তউরানি একটা ব্যাপারে আশাবাদী। সংশ্লিষ্ট প্রযোজকেরা আজকাল দু’বছর আগে থেকেই ছবি মুক্তির দিন ঠিক করে ফেলে। ‘‘অনেক আগে থেকেই লোকজন ছবি রিলিজের ডেট ঠিক করে নেয়। একটা ডেট ঘোষণা করা হয়ে গেলে অন্যদের কখনওই উচিত নয় সেই একই দিনে আরেকটা ছবি রিলিজ করা। আমি শুনেছিলাম এই দুই ছবির প্রযোজকই ছবিগুলোর রিলিজ ডেট নিয়ে আগেই আলোচনা করেছিলেন। অথচ একই দিনে তারা ছবিগুলো রিলিজ করছেন। ব্যাপারটা ঠিক হল না,’’ বলেন তিনি। রাকেশ রোশন যদিও তউরানির সঙ্গে একমত নন। তিনি বললেন, ‘‘এটা দু’টো ছবির জন্যই ভাল। আগেও দিলীপ কুমার, রাজ কপূর, রাজেন্দ্র কুমারদের ছবি একসঙ্গে রিলিজ করেছে। সুপারহিটও হয়েছে প্রত্যেকটা। ছবি ভাল হলে সফল হবেই। সাফল্য কেউই আটকাতে পারবে না। একই সুর ছবির গল্প লিখিয়ে দিলীপ ঠাকুরের গলাতেও। বললেন, ‘‘রাজেশ খন্নার ‘রেড রোজ’ আর জিতেন্দ্রর ‘জ্যোতি বনে জোয়ালা’ একই দিনে মুক্তি পেয়েছিল। এমনকী আমির খানের ‘দিল’, সানি দেওলের ‘ঘায়েল’ও রিলিজ করেছিল একসঙ্গে। আমার মনে আছে রাজেশ চেয়েছিলেন তার অভিনীত ‘ছইলা বাবু’ আর ‘কর্ম’ একই দিনে মুক্তি পাক। উদ্দেশ্য একটাই, প্রমাণ করা যে তিনি আবার ফিরে এসেছেন। তবে ‘কর্ম’ বক্স অফিসে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি।’’ একই দিনে মুক্তি পাওয়া দু’টো ছবি বক্স অফিসে তা হলে ঠিক কেমন ব্যবসা করে? ডিস্ট্রিবিউটর ও এক্সিবিটর রমেশ সিপ্পির কাছে রিলিজের প্রথম দিনের কালেকশন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দিনে ৪৩ থেকে ৪৫ কোটি ওঠার সম্ভাবনা থাকছে। যদিও ‘দিলওয়ালে’র স্কোর কার্ডটা বেশি জ্বলজ্বল করবে।’’ কথায় কথায় তিনি আরও জানান, ‘‘তিরিশের নীচের দর্শকরা ‘দিলওয়ালে’কেই বেশি স্কোর দেবেন। আর তিরিশোর্ধ্বরা বেশি দেখতে যাবেন ‘বাজিরাও মস্তানি’। তবে বাকি দিনগুলোয় ছবিগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে দুই ছবির মেরিটের ওপর।’’ শুধু এ বছরই নয়। অপেক্ষা শুরু আরও এক বছরের। পরের বছরের সংঘাতটা যে ‘সুলতান’ আর ‘রইস’য়ের মধ্যে। এখন এটাই দেখার, সামনের বছর সিনেমা হল এবং দর্শক দুই খান-কে বক্স অফিসের দৌড়ে ঠিক কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। ৯, ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে