সালমানের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়াই কাল হয়েছিল তার
বিনোদন ডেস্ক : বলিউড সুপারস্টার সালমান খান আলোচিত ‘হিট অ্যান্ড রান’ অব্যাহতি পাওয়ার খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন অনেকই। তবে এ নিয়ে অনেকেই আবার অতীতটাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে ঘটনাটি দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করছেন।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষ এক সাক্ষী সালমান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া প্রাণ হারাতে হয়েছিল। যা আজ ভুলে গেছেন অনেকেই।
জানা গেছে, ২০০২ সালে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন সালমান খান। এ হুমকির পর সালমান খান মুম্বাই পুলিশে কাছে একটি অভিযোগও দায়ের করেছিলেন।
সেই অভিযোগের পর পুলিশ কর্তৃপক্ষ সালমান খানকে রবীন্দ্র পাতিল নামের একজন দেহরক্ষী নিয়োগ দেয়। আর এই দেহরক্ষীই ছিলেন সালমানের হিট অ্যান্ড রান মামলার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সালমানের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
এদিকে সেই প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীকে সম্প্রতি আদালত ‘অনির্ভরযোগ্য ও অবাস্তব’ তকমা দিয়ে মামলা থেকে ‘বিয়িং হিউম্যান’খ্যাত সালমানকে অব্যাহতি দেয়া হয়! ।
রবীন্দ্র পাতিল তার সাক্ষীতে আদালতকে কি জানিয়েছিলেন?
রবীন্দ্র পাতিল আদালতকে তার জবানবন্দীতে বলেন, ‘২০০২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, রাত সাড়ে ৯টায় সালমান খান তাঁদের বাসা থেকে বের হয়ে আমাকে বলেন জুহুর রেইন বারে যাবেন। সালমানের একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি ছিল, যেটি সেই রাতে সালমান নিজেই চালাচ্ছিলেন’। আমাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে সালমান হোটেলের ভেতরে প্রবেশ করেন। কয়েক ঘণ্টা পর সালমান বাইরে এসে বসলেন চালকের আসনে, আমি তাঁর পাশে বসলাম।'
পাতিল বলেন, ‘এ সময় সালমান মদ্যপ অবস্থায় থাকায় তাকে আমি সতর্ক করে গাড়ি ধীরে চালাতে বলি। ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটার গতিতে চালাচ্ছিলেন সালমান। একটি রাস্তার মোড়ে পৌঁছানোর আগে ডানে ঘোরার সময় আমি তাকে গাড়ি ধীরে চালাতে বলি। তিনি আমার কথা না শুনে মোড় ঘোরার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, ফুটপাথে গাড়ি উঠে যায়।'
গাড়িটি আমেরিকান এক্সপ্রেস নামের একটি বেকারিতে আছড়ে পড়ে এবং এর শাটার ভেঙে ফেলে। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান সালমান। গাড়িটির কাছে গিয়ে একজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় এবং আরো চারজনকে গাড়ির নিচে চাপা পড়া অবস্থায় দেখেন রবীন্দ্র।
ঘটনার পর এবং গাড়ির নিচে ক্রন্দনরত আহত লোকজনকে ফেলে অভিযুক্ত সালমান খান পালিয়ে যাওয়ায় পাতিল নিজেই পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষে সাহায্য চেয়ে ফোন দেন। পুলিশের কাছে এ ব্যপারে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
পাতিল বলেন, ‘গাড়িটি দ্রুতগতিতে চলায় এবং চালক সালমান মদ্যপ থাকায় মোড় ঘুরতে গিয়ে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, এসব কারণেই দুর্ঘটনা হয়।’
পথচারীদের উপর গাড়ি চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া সেই ঘটনার পুরো সময় সালমানের পাশে ছিলেন তার দেহরক্ষী রবীন্দ্র পাতিল। এমনকি দুর্ঘটনার আগে ও পরের সমস্ত ব্যপার জানতেন রবীন্দ্র। যার ভিত্তিতে পরে আদালতে সালমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তিনি। কিন্তু সালমানের মতো শক্তিধর বলিউড ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে যাওয়ার কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিলো তাকে। মামলার জবানবন্দী পাল্টানোর জন্য প্রচুর চাপ এসেছিল তার জীবনে। কিন্তু জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সাক্ষ্য পরিবর্তন করেন নি এই নিরীহ দেহরক্ষী।
২০০৬ সালে সালমানের পক্ষে মুম্বাইয়ের শীর্ষ আইনজীবী পাতিলকে পুনরায় জেরা করতে ডাকেন। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে পাতিল নিখোঁজ হয়ে যান, যার ভিত্তিতে তার ভাই স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করে। একটানা পাঁচদিন আদালতে হাজিরা না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সেসময় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে তাঁকে বরখাস্তও করা হয়।
একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলায় সালমানের বিরুদ্ধে থাকা সাক্ষী রবীন্দ্র পাতিলের জন্য কঠিন সময় সেটি যখন তিনি অন্যায় না করেও সাজা খেটেছেন। তাকে ছোট হোটেল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। অমানবিক অত্যাচার সইতে হয়েছে তাকে। জানা যায় সেই কারাগারে তাকে অনেক নির্যাতন করা হয়েছিলো। একসময় ছাড়া পান রবীন্দ্র, তবে সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে একা হয়ে যান এই দেহরক্ষী। কেউ তাকে আপন করে নেয় নি তার জীবনের সেই কঠিন সময়ে।
সেই ঘটনার পাঁচবছর পর রবীন্দ্রকে রাস্তায় ভিক্ষুকদের মাঝে দেখা যেত। অসুস্থ ছিলেন তিনি। যক্ষা রোগ নিয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। সেখানেই সেই যক্ষাতে ভুগেই মৃত্যু হয় পুলিশ সদস্য ও দেহরক্ষী রবীন্দ্র পাতিলের।
‘শেষদিন পর্যন্ত আমি আমার জবানবন্দির পক্ষে ছিলাম, তবে আমার বিভাগ আমার পক্ষে দাঁড়ায়নি। আমার চাকরি ফেরত চাই, আমি বাঁচতে চাই। আমি একবার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই,’ এই ছিল পাতিলের জীবনের শেষ কথাগুলো।
২০০২ সালে গাড়ি চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার এই নির্মম ঘটনায় বলিউড সুপারস্টার সালমান খানকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ‘বিয়িং হিউম্যান’এর খ্যাতি ও জনসেবার কারণে সালমানের সেইরাতের দুর্ঘটনা ও সাহসী দেহরক্ষী পুলিশ সদস্য রবীন্দ্র পাতিলকে ভুলে যান সবাই। যার ফলে দেহরক্ষীর দেয়া সেই সাক্ষ্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মামলা থেকে রেহাই পেলেন রুপালি পর্দার নায়ক সালমান খান।
১১ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন
�