তিনশ বছর পরও অসাধারণ প্রেম ‘বাজিরাও মাস্তানি’
বিনোদন ডেস্ক : ইতিহাস ও ঐতিহ্য নির্ভর ছবি ‘বাজিরাও মাস্তানি'। যা তিনশ বছর আগের। সেই তিনশ বছর আগেকার ‘বাজিরাও মাস্তানি’র প্রেম এখনো যেন জ্বলজ্বলে। যা অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছেন সঞ্জয় লীলা বানশালী।
চিত্রনাট্য, অভিনয়, সঙ্গীত ইত্যাদি সব মিলিয়ে দেখতে গেলে এ ছবির মান বেশ উত্কৃষ্ট। সঞ্জয় লীলা বনশালীর এই ছবিতে উঠে এসেছে প্রায় তিনশো বছর আগে, ১৭২০ থেকে ১৭৪০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত (আমৃত্যু), মারাঠার চতুর্থ ছত্রপতি শাহুজি রাজে ভোঁসলের সেনাপতি ছিলেন বাজিরাও। তার জীবনের ৪১টি যুদ্ধে কখনও তাঁকে পরাজিত করা যায়নি।
১৭৪০-এ অসুস্থ হয়ে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে হঠাত্ তাঁর মৃত্যু হয়। এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ মারাঠা সেনাপতি বাজিরাও এক বার বুন্দেলখণ্ড রাজ্যকে মুঘল আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেন। আক্রমণকারী পাঠান মহম্মদ খান বাঙ্গাশ বাজিরাও এবং বুন্দেলখণ্ডের বীরাঙ্গনা রাজকুমারী মস্তানির যৌথ আক্রমণে পরাজিত হন। আর এই সূত্রেই বাজিরাও বল্লালের সঙ্গে পরিচয় হয় রাজকুমারী মস্তানীর। আর পরিচয় থেকেই প্রেম। এই মস্তানি বাজিরাওয়ের দ্বিতীয় পত্নী। যদিও মারাঠা সেনাপতির পরিবার তাঁকে কোনও দিনই বাজিরাওয়ের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়নি। কারণ তিনি বুন্দেলখণ্ডের রাজপুত রাজা ছত্রসাল-এর পার্শি মুসলিম পত্নী রুহানি বাঈের মেয়ে।
ধর্ম, সামাজিক ও পারিবারিক চক্রান্তের বাধা পেরিয়ে বাজিরাও-মস্তানির প্রেম বাঁচিয়ে রাখার লড়াই ফুটে উঠেছে এই ছবিতে। যার উল্লেখ ইতিহাসেও রয়েছে। এর আগে আশুতোষ গোয়ারিকরের জোধা আকবরের মাধ্যমে মানুষ দেখেছিল হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ পেরিয়ে জোধা ও আকবরের প্রেম গাথা। বনশালী বাজিরাও মস্তানির প্রেম কাহিনীর মাধ্যমে দেখালেন, ভালোবাসা কোনও ধর্ম হয় না। বা বলা যেতে পারে সব ধর্মই মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়।
কেন দেখব বাজিরাও মস্তানি? এ বার জেনে নেব ছবিটির কয়েকটা এক্স ফ্যাক্টর।
বাজিরাও মস্তানি ছবিটির সেট এক কথায় অসাধারণ। এ ছবি দেখতে দেখেতে আপনি হয়তো পৌঁছে যেতে পারেন তিনশো বছর আগের পটভূমিকায়। এর সঙ্গে উত্কৃষ্ট মানের সিনেমাটোগ্রাফি, অনবদ্য কোরিওগ্রাফি এবং চিত্তাকর্ষক সঙ্গীত এবং আবহসঙ্গীত মনকে স্বপ্নাচ্ছন্ন করে দেয়। বাজিরাও মস্তানি ছবিটির চিত্রনাট্য এবং ডায়লগ বেশ শক্তিশালী। ছবির প্রতিটি চরিত্রের নিখুঁত অভিনয় ছবিটির চিত্রনাট্যকে একটা অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। বাজিরাও-এর চরিত্রে রণবীর সিংহ, মস্তানির চরিত্রে দীপিকা পাডুকোন অসাধারণ। দু’জনের ডায়লগ ডেলিভারি, এক্সপ্রেশন ফাটাফাটি।
কাশিবাঈ-এর চরিত্রে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার অভিনয় বেশ বলিষ্ঠ। এ ছাড়াও বাজিরাও-এর মায়ের চরিত্রে তনভি আজমির অভিনয় দুর্দান্ত। দেখতে গেলে এই ছবিতে প্রত্যেকেই নিজেদের সেরা অভিনয়টা ঢেলে দিয়েছেন,— টেক্কা দিয়েছেন একে অপরকে। প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার অভিনয় থেকে কাশিবাঈ-এর জীবনের টানাপড়েন, অসহায়তা এবং একাকিত্ব বেশ সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। আর সমাজ, পরিবারের লাঞ্ছনা, প্রাণঘাতি চক্রান্তের সঙ্গে লড়াই করে নিজের সন্তান এবং ভালোবাসা টিকিয়ে রাখার মস্তানির মরিয়া চেষ্টা দীপিকা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর অভিনয়ের মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে প্রায় নিখুঁত এবং বেশ উত্কৃষ্ট মানের ছবি বনশালির বাজিরাও মস্তানি। তাই শুরুটা তেমন ভাল না হলেও সোমবারের বক্স অফিসের হিসেবে দিলওয়ালেকে টপকে গিয়েছে বনশালির এ ছবিটি। কথায় বলে, ‘দের আয়ে পর দুরুস্ত আয়ে’। সঞ্জয় লীলা বনশালীর হাত ধরে ইতিহাসের এক প্রায় অজানা অধ্যায় এ প্রজন্মের সামনে এল। তাই উত্কৃষ্ট মানের চিত্রনাট্য, অভিনয়, সেট, সিনেমাটোগ্রাফি, কোরিওগ্রাফি, চিত্তাকর্ষক সঙ্গীত এবং কালজয়ী প্রেমের স্বাক্ষী হয়ে থাকতে অবশ্যই দেখুন বাজিরাও মস্তানি। কারণ, ভাল ছবি দেখতে কার না ভাল লাগে বলুন!
২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন
�